দেশের প্রাচীন ও প্রথম গ্যাস ক্ষেত্র হরিপুর। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের আওতাধীন এ গ্যাস ক্ষেত্রের ৯ নম্বর কূপে তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনায় শুরু হয় খননকাজ। কিন্তু তেলের স্তরে পৌঁছার আগেই মিলল চার স্তরের গ্যাসের সন্ধান। তাই আপাতত তেল স্থগিত রেখে গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত। চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু হওয়ার কথা। এ কূপ থেকে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) সূত্র জানান, ত্রিমাত্রিক জরিপে ভূগর্ভের ২ হাজার ৭২ থেকে ২ হাজার ৯৪ মিটার গভীরতায় তেলের স্তর রয়েছে বলে নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা। জরিপের আলোকে তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে গত বছরের ২ অক্টোবর হরিপুর গ্যাস ফিল্ডের ৯ নম্বর কূপ খননের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তেলের স্তর পর্যন্ত রিগ (খননযন্ত্র) পৌঁছাতে পারেনি। ২ হাজার ২৫ মিটার গভীরেই আটকে যায় রিগ। তবে তেলের স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারলেও এর আগেই সন্ধান মিলল চার স্তরের গ্যাসের। টানা ৯৩ দিন খননকাজ শেষে ৪ জানুয়ারি প্রায় ১ হাজার ৯৯৮ মিটার গভীরতায় গ্যাসের স্তর সম্পর্কে নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা। তাই আপাতত তেল বাদ দিয়ে গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সূত্র জানান, ৪ জানুয়ারি গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর কূপের ফ্লেয়ার লাইনে উঠে আসা গ্যাসে আগুনের শিখা জ্বালিয়ে গ্যাস প্রাপ্তির ব্যাপারে নিশ্চিত হন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম চলছে। এসজিএফএলের মহাব্যবস্থাপক (পরিচালন) প্রদীপ কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্যাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা এখন ড্রিল স্টেম টেস্ট (ডিএসটি) করছি। এরপর উৎপাদন শুরু হবে। নতুন এ কূপ থেকে উৎপাদনে যেতে বেশিদিন লাগবে না। চলতি মাসের মধ্যেই উৎপাদনে যাওয়ার আশা করছি। নতুন এ কূপ থেকে প্রতিদিন ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।’ পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে দেশের প্রথম গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়।
গ্যাস ক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৬০ সালে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। দেশের শিল্প খাতে এটাই ছিল প্রথম গ্যাসের ব্যবহার। ওই সময় প্রতিদিন গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সিমেন্ট কারখানায় সরবরাহ করা হতো। ১৯৬১ সালে এ গ্যাস ক্ষেত্রের আরেকটি কূপ থেকে উত্তোলিত গ্যাস সরবরাহ করা হয় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায়। ১৯৮৬ সালে গ্যাস ক্ষেত্রটির ৭ নম্বর কূপে পাওয়া যায় দেশের প্রথম তেল ক্ষেত্র। এরপর কূপটি থেকে টানা সাত বছরে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৯ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে কূপটি থেকে তেলের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৯ সালে হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপে খননকাজ শুরু হয়। তেল প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে খননকাজ শুরু হলে ওই কূপেও পাওয়া যায় গ্যাস। বর্তমানে পেট্রোবাংলার আওতাধীন এসজিএফএলের অধীনে পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাসটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এ পাঁচটি ফিল্ডসের নয়টি কূপ থেকে বর্তমানে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে। তবে ছাতক গ্যাস ফিল্ড বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। হরিপুরই এখন পর্যন্ত দেশের একমাত্র অঞ্চল, যেখানে গ্যাস ছাড়াও তেলের সন্ধান মিলল।