নবাব আবদুল লতিফ

মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরেন্টো

আধুনিক-পাশ্চাত্য-শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে বাংলার মুসলিম আবারো ঘুরে দাঁড়িয়ে যাবে। এবং তাদের নিজ অধিকার অর্জনে সক্ষম হবে এটিই ছিল নবাব আবদুল লতিফের মূল চিন্তা ধারা। তিনি মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রসার এবং সমাজ-সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাই তাকে বাংলার স্যার সৈয়দ আহমদ বলা হয়। স্যার সৈয়দ আহমদের মত তিনিও আজীবন বাংলায় মুসলিম সমাজের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন।
১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর ষড়যন্ত্র ও চরম বিশ্বাস ঘাতকতা মূলক যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লাহর পরাজয় পর ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলা তথা ভারতীয় মুসলমানরা তাদের ঐতিহ্য ও গৌরব হারাতে শুরু করে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলমানদের জায়গায় নতুন হিন্দু জমিদারগণ ভূমির মালিকে পরিণত হন। ফারসির বদলে অফিসে-আদালতে ইংরেজি প্রবর্তন হওয়ার ফলে ফার্সি জানা মুসলমানরা সরকারি চাকরি হতেও বঞ্চিত হন। এভাবে সব দিক থেকেই বাংলার মুসলিম কোন ঠাসা হয়ে পড়ে। ঘিরে ধরে দূর অবস্থা। ১৮৫৭ সালে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নেতৃত্বে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ইংরেজ মূলত মুসলমানদেরকেই দায়ী করে। এরপর মুসলমানরা নুতনভাবে ইংরেজ সরকারের প্রচন্ড রোষানলে পড়েন। ইংরেজদের নীতি ও বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব তৎকালীন মুসলমান সম্প্রদায়কে চরম দুরবস্থায় ফেলে দেয়। তখন বাংলার মুসলিম সমাজকে যুগ উপযোগী চিন্তাধারা সহ আধুনিক ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করতে প্রথম এগিয়ে আসেন নওয়াব আব্দুল লতিফ।
তিনি মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে ব্রতী হন। নওয়াব আবদুল লতিফ অনুধাবন করেন, যদি মুসলমানরা বিশেষ করে বাংলার মুসলমানরা ইংরেজ সরকারের সাথে সহযোগিতা না করে এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আহরণে পিছিয়ে পড়ে তাহলে বাংলার মুসলমান সমাজ পুনরায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। সেদিন সময়ের সঠিক চিন্তাটিই তিনি করেছিলেন।
মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি: ১৮৬৩ সালে নওয়াব আবদুল লতিফ মুসলিম সাহিত্য সমাজ মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি) প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলমানদের পশ্চিমা ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করা, তাদের মধ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানো এবং তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য মোহামেডান লিটারারি সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সমিতিতে মুসলমানদের শিক্ষা-সংক্রান্ত, সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যার ওপর আলোচনা হত। এ সমিতি মুসলমানদের ভাবধারার সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার সমন্বয় সাধনে বিশ্বাসী ছিল। তিনি বাংলার হিন্দু- মুসলিম সম্পীতি দৃঢ় করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টাই করেছেন। নওয়াব আব্দুল লতিফ ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলার রাজাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা মাদরাসা থেকে আরবি, ইংরেজি, ফারসি ও উর্দু ভাষা শিক্ষালাভ করেন। মাদরাসা শিক্ষা সমাপ্ত করে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে যোগ দেন। এবং ১৮৬২ সালে বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৮৬৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো’ মনোনীত হন। মুসলমান সমাজের প্রতি তার অবদানের জন্য সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি প্রদান করে। বাংলার এই মহান মনীষী ১৮৯৩ সালের ১০ই জুলাই ইন্তেকাল করেন। দেশের মানুষ আজও অনেক কৃতজ্ঞতার সাথে তাকে স্মরণ করে।
মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরন্টো।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ