মৃত্যুর মিছিল, লকডাউন, অর্থনৈতিক সংকট আর উদ্বেগের একটি বছর শেষে ২০২১ সালকে বরণ করে নিয়েছে বিশ্ব। সমপূর্ণ ভিন্নরকম পরিস্থিতিতে আর ভিন্নরকম আয়োজনের মধ্য দিয়ে এবার নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশে দেশে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে আরোপ করা হয়েছে কড়াকড়ি। ত্যাগ করতে হয়েছে নিউ ইয়ার উদ্যাপনের আনন্দ। তারপরেও উদ্বেগ আর হতাশার ২০২০ সালকে পেছনে ফেলে ২০২১ সালে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছে মানুষ।
প্রতিবারের মতো এবারও সবার আগে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটি করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ফলে বাধাহীনভাবেই তারা বিভিন্ন আয়োজন আর উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালকে বিদায় দিয়েছে।
অকল্যান্ডে শত শত আতশবাজি আর লাইট শো দিয়ে ভুবনমাতানো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। তা দেখতে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। কঠিন লকডাউনের কারণে দেশটিতে কোনো করোনা আক্রান্ত মানুষ নেই। ফলে বর্ষবরণ নিয়েও ছিল না কোনো বাধানিষেধ।
নিউজিল্যান্ড থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে নতুন বছর শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। আন্তর্জাতিক সময় রেখার কাছাকাছি হওয়ায় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের আগেই নতুন বছর শুরু হয়েছে সেখানে। তবে দেশটির সব থেকে জনবহুল দুই প্রদেশ নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়ায় চলছে লকডাউন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভালোমতোই আঘাত হেনেছে সেখানে। গত বছর সিডনি হার্বারে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বর্ষবরণ করতে জড়ো হয়েছিলেন। তবে এবার তাদেরকে শুধু টেলিভিশনেই চোখ রাখতে হবে। দেশটির কর্তৃপক্ষ জনগণকে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে। হার্বার এলাকা পুরোপুরি আটকে দেয়া হয়েছে। পার্কগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রাত ৯টার আগেই বিভিন্ন জনপ্রিয় জায়গাগুলো ফাঁকা করে দিয়েছে পুলিশ। আতশবাজির প্রদর্শনী যদিও হয়েছে সেখানে কিন্তু তা সরাসরি দেখার জন্য কেউ অনুমতি পাননি। তবে যারা আগে থেকে রেস্টুরেন্টে কোনো রিজার্ভেশন রেখেছিলেন তারা অভ্যন্তরীণভাবে উদ্যাপনের অনুমোদন পেয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে।
বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সব ধরনের উৎসব ও আয়োজনে। ইউরোপের দেশগুলোতেও নানা রকম নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। সেখানে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকার প্রধানরা। নিউ ইয়ার পার্টি থামাতে লক্ষাধিক পুলিশ মোতায়েন করেছে ফ্রান্স। সেখানে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি রয়েছে।
নিউ ইয়ার উদ্যাপন নিয়ে সব থেকে বেশি কড়াকড়ি জারি রয়েছে ইংল্যান্ডে। সেখানে টিয়ার-৪ লকডাউন চলছে। করোনাভাইরাসের নতুন একটি স্ট্রেইন ছড়িয়ে পড়েছে দেশটিতে। ফলে সরকার নাগরিকদের এ বছর বাড়িতে বসেই আয়োজন করার নির্দেশ দেয়। দেশটির দুই কোটি মানুষ কঠিন লকডাউনের আওতায় রয়েছে। সেখানে বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গেও অভ্যন্তরীণ কোনো অনুষ্ঠান করাও নিষেধ ছিল। লন্ডনে মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি সতর্কতা জারি করে। একই ধরনের কড়াকড়ি চলছে আয়ারল্যান্ডেও। সেখানেও কোনো জনসমাগম দেখা যায়নি। দেশটিতে ৫ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
ইউরোপের আরেক দেশ জার্মানিতে আগামী ১০ই জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন জারি রয়েছে। দেশটির সরকার নিউ ইয়ারের সব ধরনের উদ্যাপন নিষিদ্ধ করা দেয়। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, এ বছর সেখানে ইতিহাসের সব থেকে শান্ত নববর্ষ উদ্যাপিত হবে। নেদারল্যান্ডসেও ১৯শে জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন জারি রয়েছে। নিউ ইয়ার উপলক্ষে ৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে তুরস্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। টাইমস স্কয়ারে অন্যবারের মতো কাউন্টডাউন হবে। তবে সেখানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্যানফ্রান্সিস্কো ও লাস ভেগাসসহ অনেক বড় শহরে আতশবাজির উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে চীনে করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও আতশবাজির আয়োজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে রাজধানী বেইজিংসহ প্রধান শহরগুলো নানারঙ্গে সজ্জিত হয়েছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা লাইটশোগুলো নিষিদ্ধ করেছে চীন। প্রতিবেশী জাপানেও নিউ ইয়ারের সকল অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তবে রাজা নারুহিতো ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা জনগণকে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন।
দক্ষিণ এশিয়াজুড়েও নতুন করে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। ফলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে এ অঞ্চলের দেশগুলোতেও। ভারতের প্রধান শহরগুলোতে নববর্ষের নানা আয়োজন থামাতে জারি রয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ। মুম্বইতে পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরেক প্রধান শহর কলকাতায় রেস্টুরেন্টগুলোতে নানা আয়োজন দেখা গেছে। রেস্টুরেন্ট মালিকরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ থামাতে তারা আসন সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছেন।