বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ না হওয়ার পাশাপাশি এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। বন অধিদপ্তরের সব স্তরের কার্যালয়ের কর্মকাণ্ডে তদারকি, পরিবীক্ষণ, জবাবদিহি ও ‘ফরেস্ট্রি পারফরম্যান্স অডিট’-এর অনুপস্থিতিতে বন অধিদপ্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। এই মন্তব্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।
সংস্থাটি আরো বলেছে, ৯৩ বছরের পুরনো বন আইনের কার্যকর প্রয়োগে প্রয়োজনীয় বিধিমালা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আমূল সংস্কারে উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। বননির্ভর জনগোষ্ঠীর প্রথাগত ভূমি অধিকার হরণ, বন আইন লঙ্ঘন করে এবং একতরফাভাবে সংরক্ষিত বন, বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান ঘোষণাসহ জবরদখল উচ্ছেদের নামে অধিদপ্তরের বৈষম্যমূলক ক্ষমতাচর্চার উদাহরণ রয়েছে। সংরক্ষিত বন ও এর আশপাশে বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ত্রুটিপূর্ণ সামাজিক ও পরিবেশ সমীক্ষা সম্পাদন এবং এসবের উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনুমোদনের ঘটনায় অধিদপ্তরের ওপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থতাও প্রত্যক্ষ করা যায়।
গতকাল বুধবার ‘বন অধিদপ্তর : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেছে টিআইবি। বন অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডসহ রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বন সংরক্ষণ ও বনায়নকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির বিস্তার এবং তা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি বিদ্যমান বলে মনে করে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক মু. জাকির হোসেন খান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রগ্রাম ম্যানেজার মো. রেযাউল করিম ও জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার মো. নেওয়াজুল মওলা।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত বনভূমির প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার ২৪০ একর জমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ করে নিয়ে গেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৩ একর বনভূমি জবরদখল করা হলেও অধিদপ্তর কর্তৃক সর্বশেষ পাঁচ বছরে মাত্র আট হাজার ৭৯২ একর (৩ শতাংশ) জবরদখল করা বনভূমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার প্রভৃতি জেলায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জবরদখলে থাকা বনভূমির জমি অবৈধ দখলমুক্তকরণ ও স্থাপনা উচ্ছেদে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন বন কর্মকর্তাদের একাংশ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করতে অধস্তন বনকর্মীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী বন অধিদপ্তরের যে চিত্রটি আমরা দেখলাম, তা হতাশাব্যঞ্জক। সরকারি বনভূমির সুরক্ষা ও বনে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর প্রথাগত জমির যে অধিকার, তা নিশ্চিত করতে বন অধিদপ্তরের ওপর অর্পিত যে ক্ষমতা ও সক্ষমতা রয়েছে, দুটিরই তারা কার্যকর ও ন্যায়সংগত ব্যবহার করতে পারছে না। সেখানে অনেক বিচ্যুতি আমরা লক্ষ করেছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জবরদখল এবং আত্মসাতের সঙ্গে যোগসাজশের দৃষ্টান্তও রয়েছে।’