বাংলাদেশ ইতিহাস কৃষ্টি কালচার- অতীত এবং বর্তমান

মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরেন্টো

বাংলাদেশের- দীর্ঘ সংগ্রামী ইতিহাসের সঙ্গে উপমহাদেশের মুসলিম ইতিহাসের আছে একটি নিবিড় যোগ সূত্র। সে ইতিহাস জানতে এবং আমাদের কৃষ্টি কালচারের স্বরূপ উদ্ঘাটনে স্বাভাবিক ভাবেই অনেক ণ্ডলি বিষয় আমাদের জানতে হবে। দেখতে হবে। ইতিহাসের সত্য ও গতি পথ নির্ণয়ে এবিষয় ণ্ডলি উপেক্ষার নয়।
স্বাধীনতা ও মহান মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস আমাদের ইতিহাসের রক্তাক্ত- রক্ত ঝরা সর্বাপেক্ষা গৌরবময় ইতিহাস। পাকিস্তানী সামরিক পরাজয়ে যা রচিত হয়েছে। এটি আমাদের বিজয়ের ইতিহাস।
পাকিস্তানিদের মুসলিম পরিচয়ের কারনে অনেকেই আমাদের পরিচয়ের মুসলিম বিষয়টি নিয়ে না না বিভ্রান্তির মাঝে থাকেন। ইংলিশ-আইরিশ যুদ্ধকে যেমন খ্রিস্টান যুদ্ধ বলা যায় না তেমনি ইরাক-ইরান যুদ্ধকেও মুসলিম যুদ্ধ বলা যায় না। একই ভাবে বংলাদেশ এবং পাকিস্তানের যুদ্ধকেও মুসলিম বা ইসলামী যুদ্ধ বলা যাবে না। এটি ছিল আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, নায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় স্বার্থ, কৃষ্টি-কালচার উদ্ধারে স্বাধীনতার লড়াই।
সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ একটি আধুনিক মডারেট মুসলিম দেশ হিসেবেই পরিচিত। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, স্থাপত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, খাদ্য অভ্যাস, পোশাক পরিচ্ছদ, সমাজ, সভ্যতার প্রতিটি দিকেই ইসলাম ও মুসলিম ভাব ধারা স্বীকৃত এবং তার অবদান অনিস্বীকার্য। এটি ধ্রুব সত্য। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি ধারায় নুতন এক সংযোজন।
বাংলাদেশ মুসলিম মেজরিটি দেশ না হলে এটি একটি স্বাধীন দেশ এবং পৃথক সত্ত্বায় উদ্ভব হত কিনা সেটিও একটি বিষয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহতম বাংলাভাষী অঞ্চল পশ্চিম বাংলায় কিন্তু ৪৭’ পর থেকে এ পর্যন্ত এ ধরনের আওয়াজ উঠে নি। এ পর্যন্ত দিল্লিতেই তারা হ্যাপি।
এই আলোচনাতে এখানে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মুসলিম মেজরিটির সঙ্গে উপ মহাদেশের মুসলিম এবং মুসলিম ইতিহাসের যোগ সূত্র এবং বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে ছোট্ট বিবরণ কিছু তথ্য সংক্ষেপে তুলে ধরব।
ইসলাম বিশ্ব ধর্ম। মানব জাতির জন্য। ইসলামের বাণী বিশ্বজনীন। গোত্র, বর্ণ, অঞ্চল, ভেদাভেদের উর্ধে। মানব কল্যানে এবং মানবতার পক্ষেই ইসলাম। এর বাইরে যেকোন ব্যাখ্যা সত্যের সাথে সাংঘর্ষিক। উপ মহাদেশের মুসলিম “ইতিহাস এবং তার প্রেক্ষাপট।” বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলে, এই উপমহাদেশে মুসলমানরা ইসলামের সূচনা থেকেই বসবাস করছেন। তারা এ দেশে কোন ট্যুরিস্ট নয়। মুসলমানরা এই উপ মহাদেশে বহিরাগত এটি একটি বিদ্বেষ মূলক ইসলামোফবিক অপপ্রচার। যা কিছু মানুষ অপপ্রচার করেন।
এখানে ইসলাম ধর্মের এবং মুসলমানের উপস্থিতি হজরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর সময় তার জীবন কালেই ঘটেছে। এটি চৌদ্দ শত বছরের দীর্ঘ ইতিহাস ।
হজরত মুহাম্মদ (স:) এর জীবদ্দশাতেই সাহাবী মালিক ইবনে দিনার ২০ জন সঙ্গী নিয়ে ইসলাম প্রচারে ভারত আসেন।
তিনি ৬২৯ সনে ভারতের কেরালায় প্রথম চেরামান জুম্মা মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন। এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার ১০০ (এক শত) বছরের মাঝেই ভারতে মুসলিম শাসন কায়েম হয়। রাজা চেরামন পেরুমল ইসলাম গ্রহণ করেন এবং প্রথম মসজিদটি প্রতিষ্ঠায় তার সহযোগিতাও ছিল উল্লেখ যোগ্য। সমসাময়িক কালে ণ্ডজরাট এবং বাংলার বুকেও মুসলমানেরা মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেন।
ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে সাহাবী, ওলী আল্লাহ, গাউস, কুতুব, আউলিয়া, ছুফি, পীর, মাশায়েখ, মৌলানা, মৌলবী, তানজিম, তাবলীগ এর নিষ্ঠাবান, জ্ঞানী, ণ্ডণী ত্যাগী ইসলাম প্রচারকদের ভূমিকাই ছিল মূল।
তবে পরবর্তীতে ভারতে মুলিম শাসন ইসলাম ধর্ম প্রচারে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মুহম্মদ বিন কাসিম ৭১১ সালে সিন্ধু ও মুলতানে মুসলিম শাসন কায়েম করেন। অর্থাৎ আজ ২০২১ সাল থেকে ঠিক ১৩১০ বছর আগে।
১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ ১২০৪ থেকে আজ ২০২১ পর্যন্ত ৮১৭ বছর পূর্বে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ছিলেন বাংলার প্রথম মুসলিম, তুর্কি- বাঙালি শাসক।
Islam reached India in It’s very early period . It is believed that one of the Prophet Muhammad (PBUH)’s companions Malik bin Deenar came to India’s western coast in 7th century and a mosque was built there in 629 EC which still exists.
ইতিহাসের এই দীর্ঘ চলার পথে- বিদ্বেষীরা মুসলিম ইতিহাস বিকৃত করে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। কুৎসা প্রচারে মুসলিমদের অপমান, অপদস্থ করতে এরা কখনও ক্লান্তি বোধ করেনি।
আল্লাহ পাকের জমিনে মানুষ মত, পথ, বর্ন, ধর্মের ভিন্নতায় শত ভাগে বিভক্ত হওয়া এবং সহস্র পার্থককের মাঝেও আদম হিউমান মূলে সব এক।
ওবামাকে আমেরিকায়, সোনিয়া গান্ধী, মাদার তেরেসাকে ভারতে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রুশনারা আলী, রুপা হক, টিউলিপ সিদ্দিক, আফসানা বেগম বা কানাডাতে ডলি বেগমরা অবশ্যই বহিরাগত এই কথা কেউ বলবেনা। তারা সবাই ঐ সব দেশের সম্মানিত নাগরিক।
হাজার বছর পর উপমহাদেশে মুসলমান কে কেউ বহিরাগত গালি দেবার উদ্দেশ্য মুসলিম বিদ্বেষ অথবা তার বা তাদের অজ্ঞতা।
ইসলাম আল্লাহ পাকের দেওয়া জীবন বিধান। প্রথম থেকে শেষ মেসেঞ্জার’ হজরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) পর্যন্ত সকল মেসেঞ্জারের মূল প্রকৃত বাণী এক। দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জীবনের সুখ, শান্তি, জীবন বিধানের নাম ইসলাম।
আদম সন্তান পরিবারিক পরিচয়ে মুসলমানদের বাইরে , অন্য সবাই’ আস্তিক নাস্তিক, ভিন্ন মত পথ, ধর্মের সব মানুষই, মূল পারিবারিক সূত্রে মুসলমানদের কাজিন। মানব ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বে এই সব কাজিনদের থেকে মুসলমান নেয্য, ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটি আর এক বাস্তব ইতিহাস। এমনকি শেষ নবী হুজুরে পাক হজরত মুহাম্মদ (সঃ) কেও প্রিয় এই কাজিনেরাই মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য করেছিল।
ইসলামকে জানতে, মুসলিম দর্শন বুঝতে একই সাথে সামগ্রিক মুসলিম মানস উপলব্ধিতে দুটি বিষয় জানা এবং তার তাৎপর্য অনুধাবন বিশেষ ণ্ডরুত্বপূর্ণ।
এক : মক্কা বিজয়। দুই- হুজুর মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) এর জীবনের শেষ হজের ভাষণ। যা আমাদের নিকট বিদায় হজ্জের ভাষণ নামেই সুপরিচিত।
মক্কা বিজয় : দীর্ঘ দিন ইসলাম প্রচারের অক্লান্ত পরিশ্রম। পরিকল্পিত নিষ্ঠুর, অমানবিক অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের মুখে মদিনায় হিজরত সহ সর্বোচ্চ ধর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে, প্রচন্ড মিথ্যাচার, প্রচার প্রোপাগান্ডাকে ধীর, স্থীর, শান্ত ভাবে মোকাবেলা করে ইসলাম বিরোধী শক্তিকে জ্ঞান, মেধা, গবেষণা যুক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে শান্তি ও শক্তির সব পথে শ্রেষ্ঠতা প্রমান করেই যথা উপযুক্ত সময়ে অর্জিত হয়েছে মক্কা বিজয়। একই সঙ্গে বিশ্বের বুকে রক্তপাতহীন বিজয়ের নুতন এক ধারার দৃষ্টান্ত ইসলাম তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ সহ এ উপমহাদেশ এবং সারা বিশ্বে মুসলমান মানবতাবাদের জন্য। এ ধারাটিই প্রকৃত ইসলামী আদর্শ ও দর্শনের প্রতীক। বাংলাদেশী মুসলিমরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একটি দেশ হবার সব সম্ভাবনাই রাখে। যদি কিনা! আমরা সামান্য কিছু বিষয় আমাদের দেশে আমাদের মত করে চালু করতে পারি। আর তাহলো- পূর্ন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি মুক্ত সিস্টেমই, সুশাসনের চাবিকাঠি এটি মেনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হওয়া। দেশের প্রতিটি মানুষের মানবিক অধিকার রক্ষা করা।
মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরন্টো
লেখক পরিচিতি: ইতিহাস গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ