মাহবুবুর রব চৌধুরী, টরেন্টো
নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌল্লাহ বাংলার ইতিহাসে স্বর্ণ উজ্জ্বল কিরণে উদ্ভাসিত এক নাম। সিরাজ উদ দ্দৌল্লাহ’ অর্থ দেশের আলো। একই সাথে তিনি হাইবত জং বাহাদুর-বা পরাক্রম শীল ভয় ভিত্তি হীন যোদ্ধা উপাধিতেও পরিচিত ছিলেন।
এবং ছিলেন বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব। বাংলার ইতিহাসের অত্যান্ত ণ্ডরুত্ব পূর্ন এক সময়ের প্রতিনিধি। পলাশীর যুদ্ধে তাঁর পরাজয় ও মৃত্যুর পরই বাংলা সহ সারা ভারতবর্ষে ১৯০ বছরের ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়।
তিনি ১৭৩৩ সালে মুর্শিদাবাদে জন্ম গ্রহণ করেন। এবং ১৭৫৭ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে মুর্শিদাবাদেই পলাশীর বিশ্বাস ঘাতকতা যুদ্ধ শেষে নৃসংশ ভাবে হত্যার শিকার হন।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে নানা নবাব আলীবর্দী খান তাকে বাংলার পরবর্তী নবাব হিসাবে ঘোষণা দেন। ১৭৫৬ সালে নানার মৃত্যুর পর মাত্র ১ বছর বাংলার নবাব হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে পেরে ছিলেন। তবে পরবর্তী নবাব হিসাবে- ১৭৫০ থেকেই দেশের সকল ণ্ডরুত্ব পূর্ন কর্মকাণ্ডেই তার অবদান ছিল।
একজন সফল নবাবের মত তিনিও যোগ্যতা, দক্ষতার পরিচয় রেখেছিলেন। পারদর্শিতার সাথে তিনি তার স্বল্প সময়ের নবাবি আমলকে পরিচালিত করেছিলেন। দুর্ভাগ্য শক্তিশালী দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রের কাছে শেষ পর্যন্ত তাকে হার মানতে হয়। তবে স্বাধীনতা ও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তিনি ছিলেন সর্বদাই আপোসহীন। তার সময়ে বাংলার বুকে পট পরিবর্তন কারি উল্লেখ যোগ্য রাজনৈতিক প্লেয়ারদের মাঝে এক মাত্র তিনিই ছিলেন ষড়যন্ত্র বিহীন স্বচ্ছ বেক্তিত্ব।
তার নানা নবাব আলীবর্দী খানের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। ছিল তিন কন্যা সন্তান। বড় কন্যা ঘসেটি বেগম বা মেহের বেগম। মেঝে মেয়ে মাইমুনা বেগম এবং ছোট মেয়ে আমেনা বেগম।
নবাব আলীবর্দী খান তার তিন কন্যাকে নিজের আপন বড়ভাই – মির্জা হাজি আহমদ -এর তিন পুত্র এর সাথে বিয়ে দেন।
১. মির্জা নোয়াজেশ মোহাম্মদের সাথে বড় মেয়ে ঘসেটি বা মেহের বেগমের ২. মির্জা সাইয়েদ আহম্মদের সাথে মেজ মেয়ে মাইমুনা বেগমের এবং ৩. মির্জা জয়েন উদ্দিন আহম্মদের সাথে ছোট মেয়ে আমেনা বেগম-এর বিয়ে দেন। আমেনা বেগমের দুই পুত্র ও এক কন্যা ছিল। পুত্ররা হলেন মির্জা মোহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলা এবং মির্জা মেহেদী। আলীবর্দী খাঁ যখন পাটনার শাসনভার লাভ করেন ঠিক তখনই তার তৃতীয়া কন্যা আমেনা বেগমের গর্ভে মির্জা মোহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলার জন্ম হয়। এ কারণে তিনি সিরাজের জন্মকে সৌভাগ্যের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতেন। এই সময় তিনি নবজাতক সিরাজ উদ দৌল্লাহকে নিজ পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। সিরাজ তার নানার কাছে ছিলেন খুবই আদরের, মাতামহের স্নেহ-ভালোবাসায় তিনি বড় হতে থাকেন।
শহীদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা- শৈশব থেকেই তার নানা নবাব আলীবর্দী খানের স্নেহ সান্নিধ্যে থেকে, শিক্ষা, দীক্ষায় পরিপক্কতা অর্জন করেন। প্রাসাদে উপযুক্ত শিক্ষক দ্বারা ভাষা, ইতিহাস, গণিত, ইসলাম ধর্ম, মানবকল্যাণ, সামাজিক রীতি নীতি চর্চা এবং জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় ও যুদ্ধ শাস্ত্রে শিক্ষিত ও পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
১৭৪১ সালের শেষ নাগাদ নানা আলীবর্দী খান সব বিরধী পক্ষকে পরাভূত ও দমন করে সমগ্র বাংলা বিহার ও উড়িষ্যায় তাঁর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠ করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি মারাঠা আক্রমণের হুমকির সম্মুখীন হন। তাঁর এলাকায় সর্বপ্রথম মারাঠা আক্রমণ সংঘঠিত হয় ১৭৪২ সালে। তারপর ১৭৫১ সাল পর্যন্ত ৯ বছর পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই মারাঠা বর্গী লুন্ঠন কারিরা বাংলা আক্রমণ করে। আলীবর্দী মারাঠাদের পরাজিত করেন এবং ১৭৫১ সালের মে মাসে নাগপুর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করতে মারাঠাদের বাধ্য করেন। তবে মারাঠা আক্রমণে বাংলার বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি ও অন্যান্য আর্থিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এবং এই মারাঠা আক্রমণের কারনে বিহারে আফগান বিদ্রোহ সংগঠিত হবার সাহস পায়। নবাব আলীবর্দী খান সকল সমস্যা মোকাবিলা করেন। কিন্তু এইসব দুর্যোগ মোকাবেলা করতে যে সময় ও আর্থিক সংকট দানা বাধে তার ফলে ইউরোপীয় বণিকরা বাংলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে আরও দুঃসাহসী হয়ে ওঠে। দক্ষিণ ভারতেও তারা এই একই কাজ করেছিল।
মারাঠাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুদ্ধে সংগ্রামী সিরাজ উদ দৌল্লাহ কে তার সাথী করে নিয়েছিলেন নবাব আলিবর্দি খান- এবং তিনি সিরাজদৌল্লাহকে অল্প বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন পাটনার শাসনকর্তা থাকা কালীন সময়েই আলিবর্দি খাঁ দৌহিত্রকে পরবর্তী নবাব হিসাবে ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন- আমার পরে সিরাজ উদ দৌলাই হবে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব। তখন সিরাজের বয়স ছিল মাত্র সতেরো। তিনি সিরাজকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজের ণ্ডরু দায়িত্ব দেন। ঢাকার নৌবাহিনী প্রধান হিসাবেও তিনি তাকে দায়িত্ব দেন।
সিরাজদৌল্লাহর এইরূপ উন্নতি অনেকেই মেনে নিতে পারেনি প্রাসাদের ভিতরে বাইরে ষড়যন্ত্রের পাখা মেলতে থাকে। জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, রাজবল্লভ, কেদার রায় ও ক্লাইভের সঙ্গে মীর জাফর আলী খানও অর্থ ও বাংলার সিংহাসনের মোহে কূ চক্রীদের চক্রে নিজেই যুক্ত হয়ে পড়েন।
নানা নবাব আলীবর্দী খান ১৬৭৬ থেকে ১৭৫৬ পর্যন্ত ৮০ বছর জীবিত ছিলেন। এবং ১৬ বছর বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নওয়াব ছিলেন ১৭৪০-১৭৫৬ পর্যন্ত। তিনি ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত মির্জা মুহম্মদের পুত্র। মির্জা মুহম্মদ- (নবাব আলীবর্দী খান এর বাবা) আওরঙ্গজেব-এর দ্বিতীয় পুত্র মির্জা আজম শাহের দরবারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ছিলেন। এবং পরবর্তীতে কালক্রমে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে, তারই পুত্র হয়ে উঠেন বাংলার একজন যোগ্য, দক্ষ, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজা হিতৈষী নবাব।
বাংলার ইতিহাসের এক ক্রান্তি কালে তাকে নিতে হয়েছিল দেশ শাসনের দায়িত্ব ভার। ১৭৪০ থেকে ১৭৫৬ সাল পর্যন্ত ১৬ বছর তিনি বাংলার নবাব ছিলেন। তার শাসনামলের অধিকাংশ সময়ই তাকে একাধারে মারাঠা আক্রমণকারী আর মগ, ঠগ ও বিদ্রোহীদের দমনে সময় ব্যয় করতে হয়েছে। লক্ষ রাখতে হয়েছে দেশি ষড়যন্ত্র কারি আর বিদেশী চতুর বেনিয়া ইংরেজদের প্রতি।
অপর দিকে দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণ, তাদের নিরাপত্তা, উন্নয়ন, সুখ, স্বাচ্ছন্দের প্রতিও তাকে নজর রাখতে হয়েছে। এই প্রতিটি কাজেই তার ছিল একনিষ্ঠ মনযোগ। বিষয়টি বোঝাতে যেয়ে বলতে হয় – দিনের ২৪ ঘন্টা সপ্তাহের সাতটি দিনই তাকে। এই ণ্ডরু দায়িত্ব পালনে সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সব দিক সামলিয়ে তিনি ছিলেন বাংলার একজন অত্যান্ত সফল শাসক।
নবাব আলীবর্দী খানের প্রিয় নাতি সিরাজুদ্দৌল্লা ছিলেন ধার্মিক, সৎ চরিত্রবান অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ইতিহাসের এক উদীয়মান উজ্জ্বল তারকা। যা ছিল অনেকের কাছেই আতঙ্ক ও ঈর্ষার কারণ ও অল্প বয়সেই তিনি মায়ের পছন্দের লুৎফুন নেচ্ছার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। উম্মে জোহরা – বা কুদসিয়া বেগম নামে তাদের এক কন্যা সন্তান ছিল।
বাংলার উদীয়মান নক্ষত্র তেজস্বী যোদ্ধা ও শাসক সিরাজের সাফল্যের গতিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ষড়যন্ত্র কারীরা।
ষড়যন্ত্র এ যুক্ত লর্ড ক্লাইভ-জগৎশেঠ-রায় দুর্লভ ও মীরজাফর গ্যাং – পলাশী যুদ্ধ শেষে নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহকে হত্যা করে।
বাংলার ঝঞ্ঝা ক্ষুদ্ধ রাজনৈতিক ডামাডোল এর কঠিন সময়ে আর ভাগ্যের লিখনে, অতি অল্প বয়সে সিরাজউদ্দৌলার সহ ধর্মিনী স্ত্রী লুৎফুন নেচ্ছাকে বিধবা হতে হয়। বিধবা হওয়া সত্ত্বেও আজীবন তিনি নিজ কন্যা ও নবাবের চিন্তাতেই মগ্ন ছিলেন। শত প্রলভোনেও তার মন থেকে কেউ সিরাজকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। লুৎফুন্নেসা ছিলেন অপরূপা সুন্দরী যিনি পরবর্তী জীবন আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতেই নিবেদিত ছিলেন এবং সিরাজুদ্দৌলার মৃত্যুর পর তার কবরের পাশেই তাদের একমাত্র কন্যা জোহরাকে নিয়ে বাকি জীবনটুকু খোদার এবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দিয়েছেন।
১৭৯০ সনে লুৎফুন্নেসা নামাজ-রত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এবং তাকেও শহীদ নবাব সিরাজউদ্দৌলার কবরের পাশেই কবর দেয়া হয়েছে।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নবাবের বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনায় মহান আল্লাহ পাকের কাছে মোনাজাত করে গেছেন।
রাজনীতির কারণেই এবং ঈর্ষা ও হীনমনতার কারনে তার শত্রু পক্ষ তার যোগ্যতা , দক্ষতা এবং চরিত্র নিয়ে কাল্পনিক অপপ্রচার চালিয়েছে। যা সন্পূর্ন মিথ্যা। আজও তাকে তার রেশ বয়ে চলতে হচ্ছে। ক্ষমতার দ্বন্দে মিথ্যা অপপ্রচারকে আজ ক্ষেত্র বিশেষ রাজনীতির কৌশল বলেই চালান হচ্ছে।
নবাব সিরাজুদৌল্লাহর ১ বছর শাসন আমলের কার্যাবলি :
সিরাজ-উদ-দৌলা সিংহাসনে আরোহণ করবার সময় থেকেই কলকাতায় ইংরেজরা ধীরে ধীরে তাদের ক্ষমতা বাড়াতে থাকে।
ষড়যন্ত্র, ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি, অভ্যন্তরীন দ্বন্দ কে তারা নিজেদের পক্ষে কৌশল হিসাবে ব্যবহার করতে থাকে।
পাল্টা বেবস্থা হিসাবে নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহ দ্রুত কাশিমবাজার দুর্গ অবরোধ এবং দখল করে নেন। দুর্গের কুঠিয়াল ওয়াটসনকে অঙ্গীকারপত্র লিখতে বাধ্য করেন।
কলকাতা আক্রমণ
১৮ জুন সিরাজ-উদ-দৌলা কলকাতা আক্রমণ করেন। ২০ জুন কলকাতা দুর্গ দখলে নেন। এরপর সেনাপতি মানিকচাঁদের হাতে দুর্গের শাসনভার ছেড়ে দিয়ে সিরাজ-উদ-দৌলা রাজধানীতে ফিরে আসেন।
এর পর তিনি কুচক্রী সেনাপতিদের বিচার বিচার শুরু করেন। মানিকচন্দ্র ওরফে মানিকচাঁদকে কারাবন্দি করেন। এটা দেখে রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও মীরজাফর সবাই ভীত হয়ে পড়েন।
১৭৫৭ সালের ১২ জুন কলকাতার ইংরেজ সৈন্যরা চন্দননগরের সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। সেখান থেকে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। তারা কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের পথে হুগলি, কাটোয়ার দুর্গ, অগ্রদ্বীপ ও পলাশীতে নবাবের সৈন্য থাকা সত্বেও বিনা বাধায় এগিয়ে আসতে। নবাব বুঝতে পারলেন, সেনাপতিরাও এই ষড়যন্ত্রে শামিল।
বিদ্রোহের আভাস পেয়ে তিনি আপাতত মীরজাফরকে বন্দি করার চিন্তা বাদ দিলেন। এবং তিনি মীরজাফরকে শপথ নিতে বললেন। এবং তাকে শপথ পথ করান।
২৩ জুন সকাল থেকেই পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজরা মুখোমুখি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। ইংরেজরা ‘লক্ষবাগ’ নামক আমবাগানে সৈন্য সমাবেশ করল। সকাল আটটার সময় মীর মদন ইংরেজবাহিনীকে তীব্র আক্রমণ করেন। তার প্রবল আক্রমণে টিকতে না পেরে ক্লাইভ তার সেনাবাহিনী নিয়ে আমবাগানে আশ্রয় নেন। ক্লাইভ বিচলিত হয়ে পড়েন।
মিরমদন ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিন্তু মীরজাফর, ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ যেখানে সৈন্যসমাবেশ করেছিলেন সেখানেই নিস্পৃহভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তাদের সামান্য সহায়তা পেলেও মিরমদন তখন ইংরেজদের পরাজয় বরণ করতে বাধ্য করতে পারতেন। এছাড়া ইংরেজ দের সামনে অন্য কোন পথ ছিল না। দুপুরের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সিরাজদ্দৌলার গোলাবারুদ ভিজে যায়। তবুও অতুল সাহসী মিরমদন বীর বিক্রমে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু হঠাৎ একটি গোলার আঘাতে মিরমদন মৃত্যুবরণ করেন। মীরমদনের পতনের পরেও অন্যতম সেনাপতি মোহনলাল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু মীরজাফর আবারও বিশ্বাসঘাতকতা করে তার সৈন্যবাহিনীকে শিবিরে ফেরার নির্দেশ দেন। এই সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা নবাবকে আক্রমণ করে। যুদ্ধ বিকেল পাঁচটায় শেষ হয় এবং নবাবের ছাউনি ইংরেজদের অধিকারে আসে।
এই ভাবেই শেষ হয় সকাল আটটা থেকে পাঁচটার পলাশীর বিশ্বাসঘাতকতার যুদ্ধ।
সব কিছু জেনে বুঝেও নবাব সিরাজুদ্দৌল্লাহ যুদ্ধকেই সন্মান জনক ফয়সালার পথ হিসাবে বেছে নেন। ফলাফল যাই হোক এটি ছিল এক স্বাধীন চেতা বীরের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ষড়যন্ত্র কারিদের খপ্পর থেকে দেশ বাচাঁনর যুদ্ধ।
আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস আলোচনায় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহ, ফতে আলী টিপু সুলতান -শের-ই-মহীশূর। (মহীশূরের বাঘ) এবং শেষ মোগল সম্রাট, দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের নাম সর্বাগ্রেই আসে। এরা সবাই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক। যারা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন প্রতিরোধকারী ব্যক্তি হিসবে ইতিহাসে মর্যাদাপূর্ণ স্থান লাভ করেছেন। বাংলাদেশে নবাব সিরাজ দৌল্লাহকে এদেশের শেষ বৈধ নবাব হিসেবে গণ্য করা হয়। এর পর আসেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান।
নবাব সিরাজুদ্দৌল্লাহ এর সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কিছু বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। উভয়ই জনপ্রিয় নেতা। উভয়ের পূর্ব পুরুষ আরব থেকে আসা। সিরাজদৌল্লার পূর্ব পুরুষ এসেছেন ইয়েমেন থেকে এবং শেখ মুজিবর রহমানের পূর্ব পুরুষ এসেছেন ইরাক থেকে।
পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ উদ দ্দৌল্লাহর পরাজয় ও মৃত্যু তে সূচনা হয় বাংলা সহ সারা ভারতবর্ষে ১৯০ বছরের ইংরেজ শাসনের ।
মাহবুবুর রব চৌধুরী -টরন্টো, কানাডা
(আহবায়ক-২০০০- উত্তর আমেরিকা বাংলাদেশ সম্মেলন ফোবানা টরন্টো- কানাডা। )