![](https://i0.wp.com/vhoreralo.ca/wp-content/uploads/2021/10/news_277881_1.jpg?resize=696%2C392&ssl=1)
কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দাঁড়ায় কানাডীয় সরকার। দেয়া হয় বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা। এক্ষেত্রে অটোয়াকে দ্বারস্থ হতে হয় ঋণ গ্রহণে। ফলে দেশটির ঋণের পরিমাণ পর্বতসম উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিপুল পরিমাণ ঋণের এ বোঝা কমাতে ধনী কানাডীয়দের ওপর কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার।
রয়টর্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণার কিছু প্রতিশ্রুত তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করবে। যদিও তা দেশের রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, বিপুল পরিমাণ এ ঋণের বোঝা কানাডাকে পরবর্তী আর্থিক সংকটের ঝুঁকিতে ফেলবে।
কভিড-১৯ মহামারীর বিপর্যয় মোকাবেলায় রেকর্ড পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে কানাডা। এ সময়ে শিল্পোন্নত জি৭ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে দেশটির এ ঋণের পরিমাণ। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, উচ্চ স্তরের ঋণগ্রস্ততা কানাডার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো পরিচালনা করার সক্ষমতা সীমিত করতে পারে। ফলে সরকারি অর্থায়নের অভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর অর্থনীতি থেকে পরিবেশবান্ধব রূপান্তরে পিছিয়ে পড়তে পারে দেশটি।
কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী সময়ে জিডিপির বিপরীতে উচ্চ ঋণের অনুপাতের অর্থ হলো পরবর্তী সংকট মোকাবেলা করার জন্য কানাডার খুব কমই সুযোগ থাকবে। এটি হতে পারে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, পরিবেশগত কিংবা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংকট।
গত মাসে পুনর্নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর লিবারেল পার্টি আগামী পাঁচ বছরে ৭ হাজার ৮০০ কোটি কানাডীয় ডলার (৬ হাজার ৩১০ কোটি ডলার) নতুন ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এ ব্যয়ের পরিমাণ দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৪ শতাংশের সমান। একই সময়ে নতুন করারোপের মাধ্যমে ২ হাজার ৫৫০ কোটি কানাডীয় ডলার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। কর ফাঁকি, ধনী ব্যক্তি, বড় ব্যাংক ও বীমাকারীদের ওপর এ করারোপ করা হবে।
নতুন ব্যয়ের আওতায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের মধাহ্নভোজ কর্মসূচি পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। তবে নতুন এ কর দেশটির রেকর্ড ১ লাখ কোটি কানাডীয় ডলারের জাতীয় ঋণ পরিশোধ করতে সহায়তা করবে না। পাশাপাশি এটি বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও যথেষ্ট হবে না।
কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ঋণের বোঝা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ এতে ঋণ বহনের ব্যয় বেড়ে যাবে এবং ভবিষ্যতের সরকারকে এ বোঝা মোকাবেলার জন্য পরিষেবাগুলো কমিয়ে আনতে হবে কিংবা কর আরো বাড়িয়ে তুলতে হবে। কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফার-ডানিং ফেলো ডন ড্রামন্ড বলেন, মহামারীর ব্যয় সম্পর্কিত কিছুই বর্তমান প্রজন্মের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে না। এটি খুবই সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
যদিও কেবল কানাডায় ধনীদের ওপর করারোপ করতে চাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোও ধনীদের ওপর উচ্চহারে করারোপের পরিকল্পনা করছে। অনেক দেশ নতুন কর পরিকল্পনার মাধ্যমে ঋণ পরিশোধ শুরু করার চেষ্টা করছে এবং পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো জনগণের ঋণের মাত্রা কখনই না বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জিডিপির বিপরীতে কানাডার মোট ঋণ ৩৬ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ১১৮ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্যক্তি ও ব্যবসাগুলোকে দেয়া ব্যাপক সরকারি সহায়তা এ ঋণ বৃদ্ধির মূল চালক ছিল।
ট্রুডোর লিবারেল দল বড় ব্যাংক ও বীমাকারীদের করপোরেট করহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহায়তা করার জন্য অতিরিক্ত সহায়তা করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের জন্য ন্যূনতম করারোপেরও পরিকল্পনা করছে দলটি। তবে নতুন কর আইনের মতো নতুন কোনো আইন পাস করতে ট্রুডোকে অন্তত অন্য একটি দলের সমর্থনের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বামপন্থী নিউ ড্যামোক্র্যাট (এনডিপি) বড় ব্যবসা ও ধনী ব্যক্তিদের ওপর কর বৃদ্ধির পক্ষে। এজন্য এনডিপিই ট্রুডোর শেষ ভরসা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।