তিনি স্বাস্থ্যবিভাগের মাঠকর্মী। গত ছয় মাসে কর্মস্থলে হাজিরা দেওয়া দুরে থাক। করোনার এই দুঃসময় কাজেও যোগ দেননি। তবে কাজ করছেন অন্য পেশায়। রীতিমত নামিদামি একজন পেশাদার ঠিকাদার। তার সম্পর্কে এলাকার গণমাধ্যমকর্মীরা কিছু জানতে চাইলে তাদেরকেও নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ সবকিছু জানলেও তদবিরের চাপে তারাও চুপ। সরকারি কর্মস্থলে ফাঁকি দেওয়া গুণধর এই ব্যক্তি হচ্ছেন মো. শাহজালাল। চাঁদপুরে মতলব উত্তর উপজেলার বড় মরাদোন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী তিনি।
মতলব উত্তর উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের লবাইকান্দি গ্রামের মৃত গোলাম মাওলা প্রকাশ মালুম মোল্লার ছেলে মো. শাহজালাল। বিগত ১২ বছর আগে স্বাস্থ্য সহকারী পদে যোগ দেন। তার বর্তমান কর্মস্থল পাশের বড় মরাদোন কমিউনিটি ক্লিনিকে। পেশায় স্বাস্থ্য সহকারী হলেও সহকর্মীদের অনেকেই তাকে চেনেন না। কারণ, কর্মস্থলে গড়হাজির থাকেন। আর এসময় তার মূল কাজ হচ্ছে ব্যক্তিগত ঠিকাদারি। স্ত্রী গৃহবধূ সুমি আক্তারের নামে রিজভিআপ নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স আছে। তবে কৌশল করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ঠিকাদারদের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাজ করাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অধিদপ্তর এসব সরকারি দপ্তরের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার মো. শাহজালাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক যুগে ৩০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাড়িয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী মো. শাহজালাল। এই চাকরির মধ্যে এক দশক আগে এলাকার সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী পদে দায়িত্ব পালন করেন। এই নিয়ে তখন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী সংবাদ প্রকাশ করলে তাদেরকে চরমভাবে হয়রানি করেন মো. শাহজালাল। তার অনিয়ম নিয়ে লেখালেখি করায় গত কয়েক দিন আগে দৈনিক ইত্তেফাকের মতলব উত্তর প্রতিনিধি শামছুজ্জামান ডলারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান মো. শাহজালাল।
তার কর্মস্থল বড় মরাদোন কমিউনিটি ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত বছরের নভেম্বর থেকে এই পর্যন্ত হাজিরা খাতায় কোনো সাক্ষর নেই তার। নাম প্রকাশে গোপনীয়তা শর্তে তার এক সহকর্মী জানান, চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই বেশ বেপরোয়া মো. শাহজালাল। পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে তার ভয়ে মুখ বুজে থাকেন স্থানীয় উধ্বর্তন কর্মকর্তারা। তাছাড়া তদবিরবাজ হিসেবেও বেশ পারঙ্গম মো. শাহজালাল।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মো. শাহজালালের দুটি কাজ চলমান রয়েছে। একটি হলো কালিপুর বাজারে অন্যটি দাসের বাজারে। এই দুটি কাজের মূল্য তিন কোটি টাকা। এই বিষয় মো. শাহজালালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিন কোটি টাকার কাজের কথা স্বীকার করেন। কর্মস্থলে হাজিরা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তা এড়িয়ে যান তিনি।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুশরাত জাহান মিথেন বলেন, মো. শাহজালালের অনিয়ম নিয়ে জেলা সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, তাকে কিছু বলা হলেই স্থানীয় নেতাদের নিয়ে তদবির শুরু হয়।
বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে কেউ যদি অনৈতিক কাজ করে। তবে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে মো. শাহজালালের অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান, জেলা সিভিল সার্জন।
উৎসঃ kalerkantho