এনআরবি ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান ৩৮২ কোটি টাকার মালিক, কিন্তু তাঁর আয়কর নথি নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে তিনি কখনো আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। শুধু ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ২০১৪ সালে তিনি ই-টিআইএন নিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অ্যাডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিশাল অঙ্কের শেয়ার কেনা ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগসহ অবৈধ সম্পদের অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছর নভেম্বর মাসে দুদক বদিউজ্জামানকে তলব করলেও তিনি হাজির হননি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর বদিউজ্জামান ও তাঁর দুই স্ত্রী যথাক্রমে নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানার সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেয় দুদক। সংস্থার পরিচালক কাজী শফিকুল আলম কমিশনের অনুমোদনক্রমে এই নোটিশে স্বাক্ষর করেন। ওই নোটিশের মাধ্যমে তাঁদের অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও দায়দেনাসংবলিত সম্পদ বিবরণী নোটিশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তাঁরা তাঁদের সম্পদের হিসাব দাখিল করেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকেও বদিউজ্জামান ও তাঁর দুই স্ত্রী, ছেলের হিসাব চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশের ধারা ১৩৩ এফ অনুযায়ী এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের উপপরিচালক ওয়াকিল আহমদ স্বাক্ষরে এ চিঠি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে এনআরবি ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার প্রথম দিক থেকে মোহাম্মদ বদিউজ্জামান সিঙ্গাপুরে চলে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ১৪৮ বিঘা জমির ওপর বদিউজ্জামানের অ্যাডভান্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে জোয়ার সাহারা মৌজার জগন্নাথপুরে ১১ কাঠা জমিতে তৈরি করা ৯ তলা আবাসিক ভবন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া বারিধারা এলাকায় তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের আবাসিক ভবন। গোপালগঞ্জ জেলা সদরে রয়েছে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমির ওপর অ্যাডভান্স নিরালা ও অ্যাডভান্স সুগন্ধা নামে আবাসিক প্রকল্প। এ ছাড়া রয়েছে গোপালগঞ্জ সদরে সার্কিট হাউস রোডে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ি। এসব স্থাবর সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩২ কোটি টাকা।
এ ছাড়া অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে—ফিনিক্স ইনস্যুরেন্স লিমিটেডে বদিউজ্জামানের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকার শেয়ার, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডে প্রায় ৩০ কোটি টাকার শেয়ার, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের দুটি শাখায় সঞ্চয়ী হিসাব, এনআরবি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
বদিউজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে অঙ্গন রেস্টুরেন্ট, তানিয়া ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড, তানিয়া ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড ও এশিয়া প্যাসিফিক রিয়ালিটি ইনভেস্টমেন্ট সার্ভিস নামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার অস্তিত্ব পেয়েছে দুদক। দুদকের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক ও উপসহকারী পরিচালক সহিদুর রহমান অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বদিউজ্জামানের অনেক সম্পদ হলেও সব তাঁর নিজের নামে নয়। কোনোটি তাঁর প্রথম স্ত্রী, কোনোটি তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে কেনা। আবার কিছু আত্মীয়ের নামেও রয়েছে। এসব যাচাই-বাছাই শেষে বলা যাবে কার নামে কী পরিমাণ সম্পদ আছে।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বদিউজ্জামান ও তাঁর পরিবার এত সম্পদের মালিক হলেও তিনি নিজ নামে, প্রথম স্ত্রী নাসরিন জামান ও দ্বিতীয় স্ত্রী তৌহিদা সুলতানার নামে কিংবা তাঁদের সন্তানদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের উেসর পক্ষে কোনো রেকর্ডপত্র দাখিল করেননি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বদিউজ্জামান বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টধারী। সিঙ্গাপুরের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-ই২১৩১৭৭৬বি ও পাসপোর্ট নম্বর ই৫৬৬৭৭২৯এন। তাঁকে রেকর্ডপত্রসহ গত বছরের ৪ নভেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও হাজির না হয়ে লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। যেখানে তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেননি বলে দাবি করেন।