ক্রাইস্টচার্চের তদন্তেই আস্থা রাখছে নিউজিল্যান্ডের মুসলিমরা

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ এলাকার মসজিদে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আর্ডার্নের কাছে জমা দিয়েছে রাজকীয় তদন্ত কমিশন। প্রতিবেদনে ওই হামলার ঘটনায় সরকারী কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি ছিল কি না এবং ভবিষ্যতে যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ এড়াতে সরকারে কি করণীয়, সে সম্পর্কে সুপারিশ করা হয়েছে।

ইসলামিক উইমেনস কাউন্সিল অফ নিউজিল্যান্ড (আইডাব্লিউসিএনজেড) তদন্তে সহযোগিতার জন্য কমিশনের কাছে এক হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার প্রমাণ জমা দিয়েছিলো। দেশটির মুসলিমরা ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তাদের সমর্থন প্রয়োজন বলে সংগঠনটি বেশ কয়েকবার সরকারী কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিল। গুরুত্বপূর্ণভাবে, এই প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করে সরকার দেশটির সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর রূপরেখা নির্ধারণ করবে। নিউজিল্যান্ডের ‘মাদার অব দ্য নেশন’ (জাতির জননী) ডেম হুইনা কুপার এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছিলেন যেখানে, সমস্ত মানুষ মিলেমিশে থাকতে পারে এবং প্রতিটি সংস্কৃতি থেকে অন্যরাও শিক্ষা নিতে পারে। এই প্রতিবেদন কিউইদের হৃদয়ে সেই চেতনা জাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করছেন সেখানকার মুসলিমরা।

তবে এই তদন্ত নিয়ে কিছু বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তটি করা হয়েছে সম্পূর্ণ গোপনে। প্রথমত, এতে কারও বক্তব্য গ্রহণ করা হয়নি এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে কোনও প্রমাণ দেখানো, পরামর্শ নেয়া বা চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে কমিশন সচিবালয়ের পাশাপাশি দু’জন কমিশনার – একজন অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এবং অপরজন সাবেক রাষ্ট্রদূত ধীরে ধীরে হলেও ক্ষতিগ্রস্থ এবং মুসলিমদের মধ্যে অনেকের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রথমে কমিশনের তালিকায় অল্প কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে আইডাব্লিউসিএনজেড এর সাথে আলোচনা তারা তালিকা সম্প্রসারিত করে ২০০টিরও বেশি নাম যুক্ত করে। তারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর সাথেও আলোচনা করেছে। এর সাথে যুগপৎভাবে আইডাব্লিউসিএনজেড বহু বছর ধরে সরকারী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকায় তারা তদন্তে ‘মূল অংশগ্রহণকারী’ হতে চেয়েছিল। তাদের সেই দাবি পূরণ করা হয়। সংগঠটনটি পাঁচ বছরের সময়কালে তাদের সরকারী কাজের পর্যালোচনা করেছে এবং হামলাটি প্রতিরোধযোগ্য ছিল এমন অবস্থানকে সমর্থন করে এমন এক হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার প্রমাণ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছিল। কমিশন রিপোর্টটি প্রথম এক বছর আগে জমা দেয়ার কথা ছিলো, তবে তদন্তের গভীরতার কারণে, সেই তারিখটি বাড়ানো হয়েছিল এবং তারপরে মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে আরও দু’বার পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল।

প্রতিবেদনের বিষয়ে আইডাব্লিউসিএনজেড এর সদস্য আলিয়া ডানজেইসেন বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি যে, বৃহত্তর প্রতিবেদনটি কেবল সত্য প্রকাশ এবং ১৫ মার্চ যা ঘটেছিল তার কারণগুলো সনাক্ত করবে না, পাশপাশি ভবিষ্যতে কীভাবে এইরকম ধ্বংসাত্মক হামলা এড়ানো যায় সে সম্পর্কেও পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং জোরালো সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আমরা আশা করি, এটি সিভিল সার্ভিসে থাকা ভুলগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরবে, যার ফলে ওই সংস্থাগুলো জনসাধারণ এবং জাতির জন্য আরও তৎপরতা এবং সততা নিয়ে কাজ করবে। আমরা আরও আশা করি যে, এটিতে সরকার হামলায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদেরকে কীভাবে সর্বোত্তম সমর্থন প্রদান করতে পারে সে সম্পর্কে সুপারিশগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে কীভাবে সরকার ক্রমবর্ধমান ‘ঘৃণা’ মোকাবেলা করতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং আক্রমণের পরপরই জাতি কীভাবে এই একতাবদ্ধতা বজায় রেখেছিল এবং কীভাবে তারা আরও উন্নতি করতে পারে সে সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সর্বোপরি, আমরা আশা করি যে এটি সামগ্রিকভাবে এই জাতিকে আরও বেশি কিছু করার, আরও ভাল করার এবং সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য অনুপ্রাণিত করে – কেবল আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এই সুন্দর জাতির মধ্যে থাকা সমস্ত সম্প্রদায়ের জন্যও।’ সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ