শুঁটকি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে ৩০ জনকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। ‘কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপন’ প্রকল্পের অধীনে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে বিএফডিসি। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতের ব্যয় কমানো প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পের আওতায় একটি জিপ, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস ও চারটি মোটরসাইকেল কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু যানবাহনের জন্য অর্থ বিভাগের জনবল কমিটি কোনো গাড়িচালকের পদ সুপারিশ করেনি। প্রকল্পের ডিপিপিতে এসব বিষয় সংশোধন করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
বিদেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া ছাড়াও অভ্যান্তরীণ প্রশিক্ষণ বাবদ ১ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ৪ হাজার ৮৫৫ জন বিএফডিসির কর্মকর্তা, কর্মচারী, উপকারভোগী ও স্টেকহোল্ডারের জন্য প্রশিক্ষণ বাবদ এই টাকা ব্যয় হবে। প্রতিজনের প্রশিক্ষণ ভাতা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। প্রশিক্ষণ সামগ্রী (ব্যাগ, নোট প্যাড ও কলম) বাবদ ১ হাজার ২০০ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। নাস্তা ও দুপুরের খাবার বাবদ প্রতিজনের জন্য ব্যয় হবে ৫০০ টাকা।
শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে এগিয়ে আছে জাপান, আইসল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্স। প্রশিক্ষণের জন্য এসব দেশ বেছে নেবে বিএফডিসি। ৩৫০টি গ্রিন হাউস মেকানিক্যাল ড্রায়ার এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ার নির্মাণ করা হবে। এসব পরিচালনার জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে দাবি করেছে বিএফডিসি।
বিদেশ প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো. শামসুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুঁটকির উৎপাদন বৃদ্ধি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে ৩০ জন কর্মকর্তা প্রকল্পের আওতায় বিদেশ যাবেন। সবাই প্রসেসিং কর্মকর্তা। প্রকল্পের আওতায় বিদেশ থেকে মেশিন কেনা হবে। এসব মেশিন পরিচালনাও শেখার প্রয়োজন আছে। বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলে শুঁটকির মান বাড়বে।’
প্রকল্পের আওতায় আড়াই হাজার বর্গমিটার আয়তনের অবতরণ শেড, ১ হাজার ৮৬০ বর্গমিটার আয়তনের চারতলা ল্যাব, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন কোল্ড স্টোরেজ (চার চেম্বার বিশিষ্ট), প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি ও ৩৬টি শুঁটকি বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১০টি টয়লেট, তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি, ইনচার্জ অব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ডাব্লিউটিপি) নির্মাণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় চারজন কর্মকর্তার মূল বেতন ধরা হয়েছে ৬৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা এবং ৩ জন কর্মচারীরর মূল বেতন ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় একজনের মোবাইল ভাতা ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার টাকা। একজনের মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা ধরা হয়েছে ২১ লাখ টাকা। পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। সাত জনের বাড়ি ভাড়া ভাতা ধরা হয়েছে ৩৮ লাখ ১০ হাজার টাকা।
বিএফডিসি সূত্র জানায়, মাছের অপচয় কমিয়ে শুঁটকি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করবে সরকার। শুঁকটি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং ও বিপনের কাজে জড়িতদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
বিএফডিসি সূত্র জানায়, সারা বছরই কক্সবাজারের মহালগুলোতে শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। শুঁটকি তৈরি একটি অতি প্রচলিত মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতি হলেও বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিক শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার কৃষিজ কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া শুঁটকি তৈরির সময় মাছ ভালোভাবে পরিষ্কার না করা, পরিবেশ, আবহাওয়া ও গুণগতমান রক্ষার অভাবে কাঙ্ক্ষিত মানসম্পন্ন শুঁটকি তৈরি সম্ভব হয়ে ওঠে না।
সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া, যুক্তরোজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত শুঁটকি রফতানি হয়ে থাকে। অনুমান করা হয়, সমুদ্র এলাকায় পচন ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুঁটকি নষ্ট হয়। শুঁটকির গুণগতমান উন্নত করার জন্য দেশি উপায়ে তৈরি গ্রিন হাউস মেকানিক্যাল ড্রায়ার খুবই উপযোগী।
সূত্র : বাংলানিউজ,