দেশের দুই সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক সরবরাহকারীর কাছ থেকে অর্থ ফেরত চায় কানাডার একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের অভিযোগ, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত মাস্কগুলো ‘নন-মেডিক্যাল’ এবং গুণগত মান মোটেও ভালো নয়।
কানাডার প্রতিষ্ঠান বাসরেল ইনক. এর সাবসিডিয়ারি বাসরেল মেডিক্যাল। তাদের ভাষ্য মতে, বাংলাদেশের মুনতাহা সোর্সিং লিমিটেড এবং সিলভারেন অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৫ কোটি টাকারও বেশি) মেডিক্যাল মাস্কের ক্রয়াদেশ দেয় বাসরেল মেডিক্যাল। পরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দুটি অর্ডারের মাত্র ৫ শতাংশ মাস্ক পাঠায় এবং সেগুলো নন-মেডিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড এবং বাজে মানের।
কানাডার কুইবেক এবং আলবার্তা প্রদেশে কভিড-১৯ মহামারিতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর অফিশিয়াল সরবরাহকারী বাসরেল মেডিক্যাল। বাজে মানের মাস্ক পাঠানোর কারণে দুই দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গত দুই মাস ধরে চলমান এই বাণিজ্যিক সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কানাডার প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশ সরকার সমস্যার সমাধানে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) তদন্তভার দিয়েছে। এসংক্রান্ত গঠিত কমিটি বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন বরাবর পৃথক চিঠি পাঠিয়েছে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, যে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা আদৌ ট্রেড বডির নিবন্ধিত সদস্য কি না।
কানাডার সূত্র থেকে জানা যায়, যে মাস্কগুলো পাঠানো হয়েছিল তার গুণগত মান পরীক্ষা করে হেলথ কানাডা এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ফিরিয়ে দেয়। এর পরই বাসরেল মেডিক্যাল বাংলাদেশের এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। তারা বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের অর্থ ফেরতের অনুরোধ জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি কানাডার ক্রেতাকে বাকি মাস্কগুলো নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কানাডিয়ান হাইকমিশন এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান দুটি বাসরেল মেডিক্যালের অর্ডার অনুযায়ী ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মাস্ক সরবরাহ করেনি।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান গত শনিবার জানান, এ সমস্যা সমাধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যায়, এই কমিটি দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দাখিল করবে। তিনি বলেন, আমি যত দূর জানি, সরবরাহকারীরা অর্থ ফেরত দিতে রাজি হয়েছে, যেহেতু তারা পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে।
মুনতাহা সোর্সিং লিমিটেডের মালিক মো. সাহাদাত জানান, ক্রেতা যদি পণ্য না কিনতে চায় তবে অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। মুনতাহা সোর্সিং লিমিটেড এবং সিলভারেন অ্যাপারেলস লিমিটেড ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মাস্কের অর্ডার গ্রহণ করে এবং ২.১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য সরবরাহ করেছে।
তিনি বলেন, এটা সত্য না যে আমরা নিম্নমানের মাস্ক দিয়েছি। কানাডার ওই প্রতিষ্ঠান আমাদের পাঠানো মাস্কের নমুনা পরীক্ষা করে অনুমোদন দিয়েছে এবং তার পরই আমরা পণ্য সরবরাহ করেছি। খুব সম্ভবত ক্রেতা আরো কম মূল্যে পণ্য কেনার অন্য কোনো উৎস পেয়েছে এবং এ কারণে আমাদের সঙ্গে আর ব্যবসা করতে চায় না।
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট রুবানা হক বলেন, সিলভারেন অ্যাপারেলস লিমিটেড ট্রেড বডির সদস্য এবং তিনি ক্রেতাকে অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য সরবরাহকারীকে রাজি করিয়েছেন।
তিনি জানান, এ সমস্যা সমাধানে বিজিএমইএ অভিযুক্ত দুই সরবরাহকারী এবং কানাডার ক্রেতার সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছে। সেই মিটিংয়ে বাংলাদেশ সরকার ও কানাডিয়ান হাইকমিশনের প্রতিনিধি এবং লেনদেনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। ইপিবি এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে এবং আমরা তাদের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি।
গত ১৯ জুলাই ইপিবি বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে বিজিবিএ প্রেসিডেন্ট কাজী ইফতাকির হোসেইন বলেন, এই দুই বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নয়। তা ছাড়া ট্রেড বডি এ বিষয়ে সচেতন যে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্থানীয় গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করে না।
তিনি আরো বলেন, এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক বাজারে স্থানীয় টেক্সটাইল এবং রেডিমেড গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করে।