নেগেটিভ রোগীকে করোনা পজিটিভ বলে হাসপাতালে ভর্তি রেখে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের অসঙ্গতি পেয়েছে র্যাব। হাসপাতালটির দুজন কর্মকর্তাকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। রবিবার (১৯ জুলাই) বিকালে রাজধানীর গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিজক্যাল কলেজ হাসপাতালে র্যাব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম ভ্রম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম ও অসঙ্গতি পেয়েছি শাহাবুদ্দিন হাসপাতালে। এজন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
অননুমোদিত কিট দিয়ে এপ্রিল থেকে করোনা পরীক্ষা
অননুমোদিত কিট দিয়ে গত এপ্রিল থেকে করোনা পরীক্ষা করেছে শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল থেকে অসংখ্য অননুমোদিত কিট উদ্ধার করেছে র্যাব। এসব কিট কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে এসেছে তার কোনও সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।
মেডিক্যাল কিট খতিয়ে দেখছে র্যাব টেস্ট ছাড়াই ভুয়া রিপোর্ট প্রস্তুত
শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি রোগীদের টেস্ট না করেই ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে র্যাব। হাসপাতাল থেকে ভুয়া ও জাল রিপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। এসব রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল ও কম্পিউটারে স্ক্যান করে বসিয়ে নিতো বলেও জানিয়েছে র্যাব।
সরকারের অনুমোদন ছাড়া এন্টিবডি টেস্ট
প্রতিষ্ঠানটির এন্টিবডি টেস্টের কোনও অনুমোদন না থাকলেও তারা কিট দিয়ে বিভিন্ন মানুষকে এন্টিবডি টেস্ট করেছে বলে জানিয়েছেন সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘এন্টিবডি টেস্ট করার তাদের কোনও অনুমোদন ছিল না। কিন্তু তারপরও তারা এন্টিবডি টেস্ট করেছে।’
আরটিপিসিআর মেশিনে টেস্ট নিয়ে প্রতারণা
শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের আরটিপিসিআর মেশিন রয়েছে। সেই মেশিনেই তারা করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করে। তবে র্যাব তাদের হাসপাতালে এরকম কোনও মেশিন পায়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালটিতে আমরা কোন আরটিপিসিআর মেশিন পাইনি। তবে তারা দাবি করেছে করোনাভাইরাস শনাক্তে তারা নিজেদের আিইরটিপিসিআর মেশিনে টেস্ট করেছে।’
অপারেশন থিয়েটারে ১০ বছর আগের মেডিকেল সামগ্রী
শাহাবউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সারোয়ার আলম বলেন, হাসপাতালের পাঁচটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। আমরা একটিতে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল টিউব পেয়েছি। এগুলোর একটির ২০০৯ সালে, দুটি ২০১১ সালে এবং একটি ২০২০ সালের এপ্রিলে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়। এসব টিউব সাধারণত অপারেশনে অ্যানেস্থিশিয়া দেওয়ার সময় রোগীর শ্বাসনালীতে ঢোকানো হয়।’
মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল টিউব ব্যবহারে রোগীর ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এতে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
মিলছে অননুমোদিত ও নিষিদ্ধ ওষুধ
শাহাবুদ্দিন হাসপাতালে অনুমোদনহীন ওষুধ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধ পেয়েছে র্যাব। সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা নিষিদ্ধ ড্রাগ পেয়েছি এখানে। এসব ড্রাগ বিক্রির কোনও অনুমোদন নেই। সেগুলো এখানে বিক্রি করছে। এসব ড্রাগ কীভাবে আসছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
র্যাব হেফাজতে হাসপাতালের দুজন কর্মকর্তা
ইতোমধ্যে হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. মো. আবুল হাসনাত ও হাসপাতালের ইনভেন্টরি অফিসার শাহরিজ কবির সাদিকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অপরাধে এর আগে রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল, জেকেজি পাবলিক হেলথসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় র্যাব। সারাদেশে এই জালিয়াতির ঘটনায় রবিবার সকাল পযন্ত রাজধানী দেশের বিভিন্ন থানায় ১৩ টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৬১ জন।