“মুভিং ডে’ কে সামনে রেখে তীব্র আবাসিক সংকটে মন্ট্রিয়েল

লিখেছেন রিয়েল্টর শিহাব উদ্দিন

মন্ট্রিয়ালের আবাসন সংকট বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে.। ভয়াবহ  আতঙ্কে আছেন বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়ে নতুন বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি – এমন ভাড়াটেরা। এদিকে আসছে পহেলা জুলাই মুভিং ডে|  হাতে রয়েছে তিন সপ্তাহেরও কম সময়।  সংকট মোকাবেলার জন্য এই মুহূর্তে নেই প্রয়োজনীয় আবাসন সরবরাহও।

কুইবেকের ৮০ শতাংশ আবাসিক লিজ শেষ হয় ৩০ জুন। প্রতিবছর   আনুমানিক ৮০,০০০ থেকে ১০০,০০০ মন্ট্রিয়ালবাসী পহেলা জুলাই বা তার আশপাশে বাসা পাল্টায়। তাই বাড়ি বদলের চাপটা আসে বছরের এই সময়েই বেশী।  মন্ট্রিয়ালে এই মুহুর্তে আবাসনগুলিতে খালি বাড়ির  হার মাত্র ১.৫%।  রেনোভেশন কিংবা সংস্কারের কাজ চলছে, এমন বাসা ছাড়া কোথাও কোনো খালি এপার্টমেন্ট নেই।  COVID-19 এর অনিশ্চয়তায় তিন মাস ধরে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন বেশীরভাগ ভাড়াটিয়া। পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হলেও, এখনও পাওয়া যাচ্ছেনা বসবাসযোগ্য কোন অ্যাপার্টমেন্ট।  

মন্ট্রিয়ালের এই আবাসন সংকট নিয়ে ভাড়াটেদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সংগঠন   “Organisation d’éducation et d’information logement de Côte-des-Neiges (OEIL)” এর  প্রতিনিধি সান্দি ওয়াডারকা জানান, “আবাসন সংকট এই মুহুর্তে বিপর্যয়ের পর্যায়ে আছে। অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে না পাওয়া লোকদের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে আমরা  কয়েক ডজন কল পাই। এদিকে OEIL এর সাথে যোগাযোগ করে অনেক অভিবাসী জানিয়েছেন যে, বাসস্থান অনুসন্ধানে তাদেরকে বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়।  বিশেষতঃ যাদের সন্তানাদি আছে তারা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বৈষম্যের শিকার হন। ”

“COVID-19-এর প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আমরা অবৈধ উচ্ছেদের মুখোমুখি অনেক  ভাড়াটেদের থেকে ফোন কল পেয়েছিলাম। অনেক ভাড়াটিয়া অভিযোগ করেছেন যে, বাড়ির মালিকেরা তাদের থেকে অ্যাপার্টমেন্ট ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ সময় অনেক মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। সবারই প্রায় একই অভিযোগ যে, ‘মুভিং ডে’-তে বাসা বদলের জন্যে বাড়িওয়ালারা উপর্যুপরি চাপ দিচ্ছেন। অথচ থাকার মতো নতুন কোন উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অনেক হতাশাগ্রস্থ পরিবারকে খুব ছোট বা অস্বাস্থ্যকর স্থানগুলিতে ভাড়া  নিতে হচ্ছে।  কেবল মাথার উপরে ছাদ নিশ্চিত করার জন্য ছারপোকা, তেলাপোকা, ইঁদুর এবং ছুঁচোসহ অনেক উপদ্রবের সাথে আপোষ করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। “  বলেছেন সান্দি ওয়াডারকা। OEIL প্রতিনিধির এই মন্তব্য থেকে বুঝা যায় আবাসন ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি ভুক্তভোগীদের জন্যে কতটা জটিল এবং অপ্রীতিকর।

আবার বাড়িওয়ালারাও ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন ওয়াডারকা | তিনি বলেন, “এবছর অনেক ভাড়াটিয়া ভাড়া শোধ করেনি- এই মর্মে আমরা অনেক বাড়িওয়ালা থেকে অভিযোগ পেয়েছি।  আবার  ভাড়াটিয়াদের এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তারা জানিয়েছেন যে, গত বছর সাধ্যের মধ্যে বাড়ী ভাড়া পাননি বিধায় তাদেরকে উচ্চ ভাড়াতে লিজ করতে হয়েছিল, যা তারা বাস্তবে পরিশোধ করার সামর্থ্য রাখেন না।”

ওয়াডারকা জানান, ১ জুলাই, OEIL -এর  একটি দল Côte-des-Neiges  এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত  থাকবে।  বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেননি, এমন লোকদেরকে তারা  সন্ধান করবে। সংগঠনটি এমন সমস্যায় পড়া লোকদের ফোন কল গ্রহণ করবে, আইনী প্রশ্নের জবাব দেবে, থাকার জন্য জরুরী সংস্থাগুলির কাছে পাঠাবে এবং Office municipal d’habitation de Montréal (OMHM) -এ যোগাযোগের নম্বর দেবে, যা  ভুক্তভোগী  জনসাধারণকে অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজতে সহায়তা করতে পারে।  

মন্ট্রিয়েলের বিভিন্ন সিটি ও  অঞ্চলগুলোতে OEIL এর মত সংগঠনগুলি, ১ জুলাই এভাবেই নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখবে যাতে শেষ মুহূর্তে হলেও সবাইকে ছাদের নিচে রাখা যায়। |

 

লেখক : প্রকৌশলী শিহাব উদ্দিন, 

রিয়েল এস্টেট ব্রোকার , (৫১৪) ৩৬৮ ৯০০০

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ