ভোরের আলো রিপোর্ট, ঢাকা অফিস: করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৈরি কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ ঔষধ প্রশাসন গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এর আগে গতকাল শনিবার এই কিটের নমুনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা ঔষধ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা।
আজ রোববার সেই কিট নিয়ে ঔষধ প্রশাসনে যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। পরে বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এত বড় একটা জাতীয় দুর্যোগ, বাংলাদেশের কিছু সরকারি আমলা সেই দুর্যোগটাই বুঝতে পারছেন না। তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে ব্যবসায়ী স্বার্থ প্রাধান্য দিয়েছেন। গতকাল আমরা এখানে হস্তান্তরের একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, এটা অনুমোদনের জন্য। এটা অনুমোদন করার দায়িত্ব হলো ঔষধ প্রশাসনের। দুর্ভাগ্যবশত ঔষধ প্রশাসন এমন লোকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে যারা না ফার্মাসিস্ট, না ফার্মাকোলজিস্ট। ফলে এই জিনিসগুলোর গুরুত্ব তারা ওইভাবে উপলব্ধি করতেই সক্ষম হচ্ছেন না। উনারা সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।’
‘উনারা যেটা করছেন, আমাদেরকে বলেছেন এটার অনুমোদন নাই বলে আমরা আসতে পারব না। আমরা তো আপনাদের দিতে চাই, যাতে আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমাদেরকে কালকে বলা হলো-আমরা আসব না। ঠিক আছে আজকে আমরা গেলাম। আজকে গণস্বাস্থ্য থেকে ড. মহিবুল্লাহ, বিজন এবং আরেকজন গেলেন। তাও তাদের কেমন আমলাতান্ত্রিকতা। আমার তিনজন লোক গেছে- দুজনকে ঢুকতে দেবে, আরেকজনকে দেবে না। অথচ বাইরের তিনজন লোককে ভেতরে বসিয়ে রেখেছেন’, বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি বলেন, ‘আমরা গিয়েছিলাম তারা জমা নেননি। বলছে সিআরও দিয়ে আসেন। সিআরও তো বন্ধ। এখন উনারা বাজেট তৈরি করবেন। দেবেন। লেনদেন ঠিক হবে। তারপরে উনারা রিপোর্ট দেবেন। আর কি করবেন।’
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের স্বার্থের বিপরীতে তারা যে কাজগুলো করছে, এটা অত্যন্ত অনৈতিক। তারা এইভাবে দেশের ক্ষতি করছে। তারা পাবলিক ইন্টারেস্টের চেয়ে প্রাইভেট ইন্টারেস্ট বেশি করে দেখছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এটা ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু কেন যে তারা এটা করছে, আমরা সত্যিই জানি না। এটার একটাই এক্সপ্লেনেশন (ব্যাখ্যা) হতে পারে সিআরও’র মাধ্যমে হলে টাকা-পয়সার লেনদেন করা যায়। সিআরও না হলে টাকা পয়সা লেনদেন করা যায় না। আমরা সরকারি যত রকম ফি আছে, দিতে বাধ্য, দেব। কিন্তু চালাকি করে জনগণের স্বাস্থ্যহানিকর কোনো কাজের সাথে আমরা যুক্ত হতে রাজি নাই। আমাদের বিজ্ঞানীরা এটা বের করেছেন জনস্বার্থে। দেরি হওয়া মানে হচ্ছে, প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
এর আগে শনিবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট’ হস্তান্তর করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে কিটগুলো হস্তান্তরের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কেউ আসেননি।
এ ব্যাপারে গতকাল ঔষধ প্রশাসন বলেছে, গণস্বাস্থ্যকে এমন অনুষ্ঠান করতে মানা করেছিল তারা। কিট উদ্ভাবনের স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে নিবন্ধন আবেদন করতে বলেছিল প্রশাসন। এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা কেন যাব? এটা তো এপ্রুভড কোনো প্রডাক্ট না। তারা আবেদন করবে। তারপর নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।’