ভোরের আলো ডেস্ক:
করোনা ভাইরাসের ছোবলে ভেঙে পড়ার উপক্রম বিশ্বের অর্থনীতি। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। বিশ্বব্যাপী খুবই শিগগিরই হতে পার মন্দা। যার ফলে প্রভাব পড়তে পারে চাকরির বাজারে। যার ভূক্তভোগী হতে বাংলাদেশের অন্তত দেড় কোটি মানুষ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও বলছে, করোনা ভাইরাস কারণে আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। যার মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ বসবাস করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে।
ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ।
বিষয়টি নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দেড় কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ খবর। এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ (প্রতি পরিবারে গড়ে ৪ জন করে সদস্য)।
করোনার মোকাবেলায় ইতোমধ্যে দেশব্যাপী অঘোষিত লকডাইন চলছে। ফলে অনেকেই ইতোমধ্যেই চাকরি ও কর্ম হারিয়ে বেকার হয়েছেন বলে মন্তব্য আহসান এইচ মনসুরের। তার দাবি, গার্মেন্টস, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও সরকার এই চারটি খাত ছাড়া বাকি সবই ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক)। করোনায় ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) কর্মজীবী ছাড়া আর সবাই এখন বেকার। বেকারের এই সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি।
তিনি আরও বলেন, ফরমাল কর্মজীবীদের মধ্যে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকরাও চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যে তৈরি পোশাক রফতানি হয়, তার ৬৩ শতাংশ যায় ইউরোপে, বাকি ১৫ শতাংশ যায় আমেরিকায়। দুইটি বাজারেই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, সেখানকার মানুষজন ঘরে বন্দি।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা গার্মেন্টস নিয়ে। দেশের সব গার্মেন্টস বন্ধ রয়েছে প্রায় অর্ধ মাস। এসব কারাখানায় কর্মরত শ্রমিকরা হয়তো সরকারের কঠোর নির্দেশনায় আগামী তিনমাস সুরক্ষা পাবেন। এরপর? বন্ধ কারখানার মালিকরা যদি ব্যাংক থেকে ঋণ না নেন, তাহলে কিছু করার আছে কি? আর ঋণ নিলেও এটা সাময়িক একটা ব্যবস্থা। এরপরে কী হবে? ব্যবসা করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী রাখবে কেমন করে?
আমেরিকাতে গত তিন সপ্তাহে ১৭ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে বাংলাদেশেও ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমেরিকার বেকার হয়ে যাওয়া মানুষজন সরকার থেকে আগামী চার মাস ভাতা পাবেন। কিন্তু আমাদের দেশের বেকার হয়ে যাওয়া মানুষরা কিছুই পাবে না বলেও উল্লেখ্য করেন আহসান এইচ মনসুর ।
(ভোরের আলো/ফআ)