বাংলাদেশের পতাকা হাতে ১৩৫টি দেশ ভ্রমণকারী নাজমুন নাহারকে টরন্টোতে স্বাগত জানিয়ে গত ৫ অক্টোবর স্থানীয় মিজান অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘দেশে বিদেশে’।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গসহ কমিউনিটির বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে অসোয়া আসনে লিবারেল মনোনীত প্রার্থী আফরোজা হোসেন।
সন্ধ্যা ৭টায় প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শণীর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন নাজমুন নাহার। তিনি তাঁর বক্তব্যে ফুটিয়ে তুলেন তার মজার মজার নানান অভিজ্ঞতার কথা। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে দর্শকরা আগ্রহভরে শুনছিলেন তার সেই রোমাঞ্চকর ঘটনার বিবরণণ্ডলো।
নাজমুন নাহার জানান, ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। সে থেকেই ভ্রমণই তার নেশা। উৎসাহ দিয়েছিলেন তার বাবা। তার দাদা ছিলেন একজন ইসলামিক স্কলার ও ভ্রমণকারী। নাজমুন নাহার পড়াশোনা করেছেন সুইডেনের ইউনিভার্সিটিতে। তিনি তার মাকে নিয়েও ঘুরেছেন পৃথিবীর ১৪টি দেশ। বাবার অনুপ্রেরণায় ডানা মেলেছেন শৈশবেই। উড়ছেন এখনও। লাল সবুজের পতাকাকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়ার সংগ্রামে চাপা পড়েছে তার সংসার স্বপ্নও। বিশ্বরূপ দেখতে গিয়ে মানুষের মাঝে পরিচয় করে দিয়েছেন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে। দেশ-দেশান্তরে শিশুদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছেন জীবন দর্শনের শান্তির বার্তা।
নাজমুন নাহারের বক্তব্যে অভিভূত হয়ে কবি দেলোয়ার এলাহী তার এক ফেসবুক ষ্টেটাসে লিখেছেন, ‘মরুভূমির তপ্ত লু লাওয়া তার শরীর পুড়িয়ে দিয়েছে। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলু খেয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৬টি দিন ণ্ডয়াতেমালার রাস্তায় ছুরি হাতে পথ আগলে ছিনতাইকারী নিয়ে নিতে চেয়েছে তার সকল মুদ্রা ও মূল্যবান জিনিস। ইন্দোনেশিয়ার পর্বতে আরোহন করতে গিয়ে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়। পশ্চিম আফ্রিকার দুর্গম জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়া রাস্তায় তার বাহন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গভীর রাতে। জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ার সীমান্তে মধ্যবর্তী সীমানায় দুই দেশে দুই পা রেখে তবু তিনি বাংলাদেশের পতাকাকে নিয়ে গিয়েছেন। অনুভব করেছেন সারা পৃথিবীর মানুষের মধ্যে এক সমন্বিত রূপ। মৌখিক ভাষার দেয়াল ডিঙিয়ে মানবজাতির হাসি-কান্না মায়ার নিঃশব্দ বন্ধন। নাজমুন নাহার শুধুই বাংলাদেশের পতাকা হাতে এক বিশ্বজয়ী পর্যটকই নন। আমার কাছে নাজমুন নাহার এক সাহসের নাম। এক দৃঢ়তার নাম। এক কঠিন সংকল্পের উদাহরণের নাম। নারী থেকে মানুষ হয়ে ওঠার নাম। মানুষ থেকে এক বিশ্বজনীন মানবিক ণ্ডণসম্পন্ন পূর্ণ মানুষ হওয়ার নিয়ত চেষ্টার নাম।
বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে সারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে মানুষের হৃদয়ে গভীর ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছেন নাজমুন নাহার। বর্ণ, ধর্ম, ভাষা ছাড়িয়ে খুঁজে পেয়েছেন সকলের একটিমাত্র পরিচয় : মানুষ। আপন জন্মদায়িনী মায়ের কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে ভিন্ন দেশে, ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন বর্ণের, ভিন্ন ভাষার নারীর মাঝে খুঁজে পেয়েছেন শাশ্বত জননীর রূপ।’
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে অসোয়া আসনে লিবারেল মনোনীত প্রার্থী আফরোজা হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেন বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব মহসীন ভূঁইয়া। তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান অনুষ্ঠানের স্পন্সর মিন্ট ওয়ান প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট এর ডলি ভূঁইয়া। আফরোজা তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে তাঁর সমর্থনে কমিউনিটির ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি নাজমুন নাহারকে একজন সাহসী নারী আখ্যায়িত করে তার সাফল্য কামনা করেন।
আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে নাজমুন নাহারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আসমা আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দেশে বিদেশে সম্পাদক নজরুল মিন্টো। সূত্র: দেশে বিদেশে