দূর্গোৎসব এবং মায়ের মার খেয়ে একজন সাম্প্রদায়িকের অসাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার গল্প

লিখেছেন ইশতিয়াক আহমেদ

ছোটবেলায় কোনো কিছু বেছে নেয়ার আগে প্রথম হিসেবটা শুরু হতো ধর্ম দিয়ে। পাঠ্য বইতে কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী পড়ছি, পড়া শেষ হওয়ার পর লোকটাকে যেই মহান মনে হতো তখনি আবার রিভিশন দিয়ে খুঁজতাম ব্যাটার ধর্ম কী? যেই দেখতাম, অন্য ধর্মের। মনটাই খারাপ হয়ে যেতো। কেউ কোনো দেশের কথা বলছে, সে দেশ সম্পর্কে প্রথম প্রশ্নটাই ছিল এটা কী মুসলমান দেশ? আমাদের একটা সুদীর্ঘ সময়ে আমাদের প্রতিবেশীরা সবাই ছিল হিন্দু। আমাদের ফ্যামেলীর সাথে তাদের সম্পর্কে কখনো ধর্মের ভিন্নতা ব্যবধান গড়ে দিতে পারেনি। কিন্তু আমি কেন জানি মেলাতে পারতাম না। পরিবারের চেয়ে মফস্বলের প্রাইমারী স্কুলের ক্লাসমেটদের কাছে তখন নানা সাম্প্রদায়িক কথাবার্তাই আমাকে বেশি আলোড়িত করতো। অনেক কবিতাও প্রচলিত ছিল তখন। হিন্দু ক্লাসমেটদের রাগানোর জন্য। সেসব প্র্যাকটিস করে কখন যে সাম্প্রদায়িক হয়ে ছিলাম নিজেও বুঝিনি। অবশ্য তখন সাম্প্রদায়িক অসাম্প্রদায়িক বিষয়টাও অচেনা ছিল। দূর্বোধ্য ছিল। তখন আসলে সমসাময়িক বন্ধুদের কথাতেই প্রভাবিত হতাম। তাদের কথায় প্রবাবিত হয়ে হিন্দু প্রতিবেশী বন্ধুদের গরুর মাংস খাওয়ার জন্য রিকোয়েষ্ট করে বিব্রত করতাম। তাদের কথায় প্রভাবিত হয়ে কয়েকজনের সাথে মিলে একবার তুলসি গাছ ভেঙ্গে দিয়েছিলাম। এবং সেই শেষ। আমার মা-ও আমার সাম্প্রদায়িক ধারনাকে শেষ করে দিয়েছিলেন ব্যাপক মারের মধ্য দিয়ে।

২. বয়স হলো, বিচার বিবেচনাবোধ হলো। এখন এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়েছে ঈদের চেয়ে কোনো অংশে কম না পুজোর আনন্দ। একদম ছোটবেলার কথা মনে পড়ে এক বছর গ্রামে ছিলাম। চাচা চ্যায়ারম্যান হবার সুবাধে বাড়ীর সামনে নৌকা করে প্রতিমা নিয়ে আসতো গভীর রাতে। বাবা ডেকে তুলে নিয়ে যেতো। চোখ গোল করে দেখতাম হ্যাজাক লাইটের আলোয় দেবী দূর্গাকে। এখনো কানে বাজে সেই ঢাকের ধ্বনী। এখন পুঁজা মানেই আমাদের আলাদা উৎসব। ঈদের মতোই সিডিউল করে আমাদের বন্ধুদের উৎসব চলে। চলে মন্ডপে মন্ডপে ঘুরে দেবী দূর্গাকে দেখা। পাশাপাশি দেবী দূর্গাকে দেখতে বের হওয়া দেবীদের দেখার উৎসবও। দশমীতে যখন সুর আর আলোয় উদ্ভাসিত হয় পুরো শহর, আমরা যখন ব্যাস্ত থাকি বিসর্জনের জন্য যাওয়া দেবীর মূর্তি দেখতে তখন মাঝে মাঝে সেই সাম্প্রদায়িক দিনের কথা মনে হলে হাসি আসে। কী না ছিলাম? হিন্দুদের প্রসাদ খাওয়া থেকে বিরত রাখতে কী না করেছি? আর এখন মন্ডপে গিয়ে প্রসাদ না পেলে মেজাজ খারাপ হয়। হিন্দু বন্ধুদের উপর রাগ লাগে, তোদের এলাকার মন্ডপে এইবারই শেষ। প্রসাদ খাওয়াস না, আইসা কী করমু। আজ দশভূজা দেবীর বোধন আমন্ত্রন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু। অনেকগুলো বছরের মতো এবারও একজন সাবেক সাম্প্রদায়িক ইশতিয়াক আহমেদ অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে অপেক্ষায় আছে একটি উৎসবের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ