স্কাই ডাইভিং

লিখেছেন মাহমুদুল হাসান রুবেল

Parachuting বা skydiving হল এক ধরনের  খেলা। এই খেলায় বিমান থেকে খোলা আকাশে ঝাঁপিয়ে পড়েন একজন ডাইভার। এরপর প্যারাসুটের সাহায্যে গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে আসেন তিনি।

আসলে স্কাই ডাইভিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন উচ্চতার প্রয়োজন নেই। কারন বিজ্ঞানের সূত্রানুযায়ী যে কোন উচচতা থেকে লাফ দেবার পর স্কাই ডাইভারের শরীরে টার্মিনাল বেগ অর্জিত হয়। টার্মিনাল বেগ হল, যে কোন বস্তুর যে কোন উচ্চতা থেকে নীচে পড়ার সময় সে বস্তু দ্বারা অর্জিত সর্বোচ্চ বেগ।

স্কাই ডাইভিংয়ের ক্ষেত্রে বিমান থেকে লাফ দেয়ার পর বেশ কিছুক্ষন বাতাসে ভেসে বেড়ান এই খেলায় অংশ নেয়া দুঃসাহসী মানুষগুলো। একটি নির্দিষ্ট সময় পর তারা সঙ্গে থাকা প্যারাসুট খুলে দেন। প্যারাসুট তখন সেই বেগ নিয়ন্ত্রন করে ডাইভারকে ধীরে ধীরে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসে।

আন্ড্রে জ্যাক গারনেরিন ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি একটি হট এয়ার বেলুনের তলদেশ দড়ি দ্বারা আবদ্ধ রেখে, ক্যানভাস ক্যানপি ও ছোট একটি বাক্সের সাহায্যে হট এয়ার বেলুন থেকে লাফ দিয়ে সফলতার সাথে মাটিতে পৌঁছান। ১৯১৯ সালে প্রথম প্যারাসুটের সাহায্যে ফ্রি ফল (ফ্রি ফল- নিউটনের সূত্রানুযায়ী কোন বস্তুর গতি। যে গতিতে শুধুমাত্র বস্তুটির নিজস্ব ভর কাজ করে) জাম্প দিয়ে সফলতার সঙ্গে মাটিতে পৌঁছান লেসিল আরভিন।

অ্যামেরিকান সেনাবাহিনী ১৯৩০ সালের দিকে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্য নামানোর জন্য বা বিমান থেকে ক্রু-দের জরুরী ল্যান্ডিংয়ের জন্য এই পদ্ধতির বিকাশ ঘটায়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সাল থেকে স্কাই ডাইভিং একটি আর্ন্তজাতিক খেলায় রুপান্তরিত হয়।

বর্তমানে স্কাই ডাইভিং সেন্টারগুলো সাধারণত বিমানবন্দরে তাদের কাজ পরিচালনা করে। যেখানে তারা একাধিক প্লেন বরাদ্দ রাখে স্কাই ডাইভারদের জন্য। একটি নির্দিষ্ট পরিমান ফি-এর মাধ্যমে স্কাই ডাইভিং করতে পারে। তবে ডাইভ দেয়ার আগে আগ্রহীদের বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থাও করা হয়।

সাধারনত ১ হাজার-৪ হাজার মিটার অর্থাৎ (৩ হাজার-১৩ হাজার ফুট) উচ্চতা থেকে স্কাই ডাইভাররা লাফ দিতে পারে। সাধারণত যারা অধিক উচ্চতা থেকে লাফ দেয় তারা ১ মিনিট পর্যন্ত ফ্রি ফল করতে পারে, এরপর পরই তাদের প্যারাসুট খুলতে হয়।

কিন্তু যারা কম উচ্চতা থেকে লাফ দেয় তাদের সঙ্গে সঙ্গেই প্যারাসুট ওপেন করতে হয়। প্যারাসুট খোলার পর তারা সেটির বেগ ও দিক নিয়ন্ত্রন করতে পারে। কয়েক মিনিট পরই তারা মাটিতে নেমে আসেন। অভিজ্ঞ ডাইভাররা নিজস্ব শরীর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজেকে সামনে পিছনে নিয়ে যেতে পারেন। এমনকি তারা নিজেকে পুরাপুরি উলটেও দিতে পারেন।

বিমান থেকে লাফ দেওয়ার সময় ভরবেগের কারনে (যা বিমানের গতি থেকে আসে)কিছু সেকেন্ড পর্যন্ত ডাইভার একই সাথে সামনে যেতে থাকে ও নিচের দিকে পড়তে থাকে।

বিমান থেকে লাফ দেবার পর ১৪০ কি.মি/ঘন্টা বেগে ফ্রি ফল ডাইভাররা ‘পড়ে যাওয়ার’ অনুভূতি পেলেও ৮০ কি.মি/ঘন্টা বেগের কাছাকাছি এলে বাতাসের প্রতিরোধের কারনে তারা ‘পড়ে যাওয়ার’ আর কোন অনুভূতি টের পায়না। তখন তারা শুধু প্রবল বাতাসের ঝাপটা অনুভব করেন !

স্কাই ডাইভারদের ডাইভিং-এর পূর্বে ৮ ঘণ্টা করে ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডাইভিংয়ের জন্য তাদের প্রস্তুত করা হয়। পর্যটক বা আনাড়ি ডাইভাররা অনেক সময় প্রথমবার লাফ দেবার ক্ষেত্রে তাদের ইন্সট্রাক্টারকে সঙ্গে নিয়ে স্কাই ডাইভিং করেন। এক্ষেত্রে ডাইভারকে তার ইন্সট্রাক্টর বেল্টের মাধ্যমে তার সঙ্গে বিশেষ কায়দায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেন।

ডাইভিং-এর পূর্বে ডাইভার এর সকল ইকুইপমেন্ট চূড়ান্তবারের মত করে পরীক্ষা করা হয়। ডাইভারদের সঙ্গে করে একটি রিজার্ভ প্যারাসুট দেওয়া হয়।

স্কাই ডাইভিং-এর জন্য আবহাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। মেঘলা দিন হলে বা বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলে স্কাই ডাইভ করতে দেওয়া হয় না। মেঘের ভেতর দিয়ে লাফ দেয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

স্কাই ডাইভিং অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি খেলা মনে হলেও এটি আসলে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ডাইভ করবার আগে তাদের ডাইভারদের পরিপূর্ণভাবে ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাদের প্রয়োজীয় সামগ্রীও বারবার পরীক্ষা করা হয়। স্কাইডাইভিং-এর ফলে সবচেয়ে বেশি যে ধরণের ইনজুরির ঘটনা ঘটে তা হল পা মচকে যাওয়া বা হাত-পা ছড়ে যাওয়া।

তাই ডাইভারদের সবসময় উঁচু ও ভারী জুতা পরানো হয়, যা ডাইভারদের পায়ের গোড়ালি ঢেকে রাখে ও পা মচকানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

 

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ