আবাল বৃদ্ধ বণিতা, কে না জানে আমি কিসের কথা বলতে যাচ্ছি? সবাই এখন এই বিস্ময়বস্তুটি হাতে-পকেটে ব্যাগে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যুক্ত হচ্ছেন বিশ্বগ্রামে- যোগাযোগ করছেন বিশ্বের দুর-দীগন্তে। আজ আমি মোবাইল ফোন (মতান্তরে সেলুলার ফোন) সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরবো।
১. প্রথম কার্যকরী মোবাইলফোন বের হয় ১৯৭৩ সালে। মটরোলা কোম্পানীর মার্টিন কুপার এবং জন এফ মিচেলের যৌথ ডেমনস্ট্রেশনে মোবাইল ফোন প্রকাশ করা হয়। এর ওজন ছিলো ২ কেজির মতো!
২. ১৯১৭ সালে ফিনল্যান্ডের বিজ্ঞানী এরিক টাইগারস্টেড “পকেট সাইজ ফোল্ডিং টেলিফোন উইথ এ ভেরি থিন কার্বন মাইক্রোফোন [পকেট আকৃতির ভাঁজকৃত টেলিফোন যেখানে খুবই পাতলা কার্বন মাইক্রোফোন থাকবে] এর পেটেন্ড দাখিল করেন। যা পরে ওয়ারলেস সেট হিসেবে আমরা দেখতে পাই- যেগুলো আদতে মোবিলিটি রাখতে পারেনি।
৩. সর্বপ্রথম টেলিফোন নেটওয়ার্ক ছাড়ে নিপ্পন টেলিগ্রাফ এন্ড টেলিফোনি- ১৯৭৯ সালে। এরাই ১জি অর্থ্যাৎ ফার্স্ট জেনারেশন মোবাইল সিস্টেম ব্যবহার করে।
৪. ১৯৮৩ সালে ডায়নাটেক ৮০০০এক্স মোবাইলটি বিক্রয়ের জন্য বাজারে ছাড়া হয়।
৫. বর্তমানে সারা বিশ্বে 4G-LTE (Fourth Generation- Life Time Evolution) মোবাইল নেটওয়ার্ক চলছে। বাংলাদেশে ২০১৮ নাগাদ চালু হবে।
৬. ইহুদিদের মধ্যে কোশের ফোন- যেগুলোতে বাচ্চারা টেস্কট মেসেজ করতে পারবেনা, ব্যবহার রয়েছে। এই ফোনগুলো একদম সাধারণ হয়ে থাকে।
৭. স্মার্টফোনের চলাচল সবচে বেশি। মোবাইল ব্যবহার কারিদের মধ্যে ৫০ ভাগের বেশি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। এবং এর বেশিরভাগই এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
৮. আমরা মোবাইল বলতে হ্যান্ডহেল্ড সেলুলার ফোনকে বুঝালেও, একসময় এদের আকৃতি ছিলো বিশাল, কিন্তু কভারেজ ছিলো অনেক কম।
৯. বাংলাদেশে এই মুহুর্তে HSPA [High Speed Packet Access] & UMTS [Universal Mobile Telecom System] এর কভারেজ সবচে বেশি, এদেরকেই ৩জি (Third Generation Mobile System) এর ধারক বলা হয়।
১০. বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গ্রামীণফোন ২০০৬ সালে EDGE (Enhanced Data For Global Evolution] সিস্টেমে ফিচার ফোনগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের ইন্টারনেটের পরিচয় করিয়ে দেয়। যা GSM (Global System For Mobile Communication) –এর মাধ্যমে পরিচালিত হতো।
১১. মোবাইলের গ্রাহক পরিচিতির জন্য বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো SIM (Subscriber Identity Module)। যা জিএসএম টেকনোলজিতে প্রচলিত। CDMA (Code Division Multiple Access) এর জন্য ব্যবহৃত হতো RIM (Removable User Identity Module)। রিম প্রযুক্তি এখন বিলুপ্ত প্রায়।
১২. ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত মটরোলা ছিলো সবচে বেশি মোবাইল বিক্রেতা, ১৯৯৮-২০১২ পর্যন্ত নোকিয়া বিশ্ববাজার দখলে রেখেছিলো- এন্ড্রয়েডের বদৌলতে ২০১২ এর পর স্যমসাং সবচে বেশি জনপ্রিয় এবং বিক্রয়ে এগিয়ে। বিশ্ববাজারে তাদের ২২.৩% বাজার দখলে। তবে বাংলাদেশে সবচে এগিয়ে সিম্ফনি।
১৩. এন্ড্রয়েড একটি ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম (এ নিয়ে পরে আবার পোস্ট করবো), যার কল্যাণে স্মার্টফোন বাজার দখল করে রেখেছে। কারণ মোবাইল ম্যানুফেকচর কোম্পানিগুলোর অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আলাদা পয়সা গুনতে হয়না।
১৪. প্রায় সকল স্মার্টফোনেই এখন, ইমেইল, জিপিএস ম্যাপিং, ট্র্যাকার, ওয়্যারলেস ওয়াইফাই ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যামেরা এখন অবিচ্ছেদ্দ অংশ।
১৫. আপনার পকেটের স্মার্টফোন দিয়ে আপনি- ওয়েব ডিজাইন এবং পাব্লিশিং, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এরমত কাজগুলোও করতে পারবেন। এপ-মার্কেটে এগুলোর জন্য অনেক ফ্রি এপ পাওয়া যাচ্ছে।
১৬. মটোরোলার একটি জরিপে দেখা গেছে- প্রতি ১০জন মোবাইল সাবস্ক্রাইবারের একজনের কাছে একটি আলাদা মোবাইল থাকে যা পরিবারের অন্যরা জানেনা।
১৭. রয়টারস্ এবং ইয়াহুর মতে বর্তমানে মোবাইল টেলিফোনি বিভিন্ন একটিভিজম এবং পাব্লিক জার্নালিজমের উৎস।
১৮. বর্তমানে টিভি মিডিয়া ও শোবিজে মোবাইলের মাধ্যমে লাইভ বা রেকর্ডেড ভিডিও জার্নালিজম দেখা যাচ্ছে।
১৯. বিশ্বে মোবাইল টিভি এখন দারুন একটি এন্টারটেইনেমন্ট খাত। এছাড়াও রয়েছে অনলাইন গেইমিং যেমন, ক্লাস অব ক্লান, লুডু স্টার, ডব্লউটিজি গলফ ইত্যাদি চিত্তবিনোদন।
২০. অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার মানষিক বিকৃতির কারণ হতে পারে।
এই শতকে মোবাইল আমাদের অপরিহার্য অংশ। সকাল-বিকাল, দুপুর রাত্রি এখন মোবাইল আমাদের সঙ্গি। তবে এই সঙ্গিকে সঙ্গ দেয়ার সময় আমাদের অনেক সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে টিনএজ এবং বাচ্চারা কিভাবে এর ব্যবহার করছে- তার দিকে অবিভাবকদের নজর দিতে হবে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া; www.shamimarafat.com; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (একাদশ-দ্বাদশ) – আবদুর রহমান পাটোয়ারী, শামীম আরাফাত;