এবার মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা করা হবে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যারা এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি তাদেরকে অবিলম্বে মামলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের সন্দেহভাজন মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত মানিলন্ডারিং-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার কৌশল নির্ধারণ ও মামলা দায়েরের বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আইন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিএসইসি প্রতিনিধিরা অংশ নেন বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, বৈঠকে বলা হয়, দেশ থেকে অর্থপাচারের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত পাচারকারীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে সুনির্দিষ্ট মামলা থাকা দরকার। এতে করে পাচারকৃত অর্থের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে দায়েরকৃত মামলা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, তিনটি দেশ সুইজারল্যান্ড, কানাডা ও আরব আমিরাত মানিলন্ডারিং আইনে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত পাচারকারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়েরের জন্য বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছে এবং এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। এই তিন দেশে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এই তিন দেশের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনাকালে তারা বাংলাদেশকে সন্দেহভাজন মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তার কপি তাদের দেয়ার জন্য বলেছে।
এ ক্ষেত্রে দেশ তিনটি সন্দেহভাজন মুদ্রা পাচারকারীর সুনির্দিষ্ট নাম ও তথ্য চেয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেছেন, পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তথ্য প্রাপ্তি এবং যে দেশে পাচার করা হয়েছে সে দেশের সাথে সমন্বয় বা পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আইনগত জটিলতা ও ভিন্ন ধরনের আইনের কারণে এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা অনেক সময় পাওয়া যায় না। তবে মানিলন্ডারিং আইনে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা থাকলে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রসঙ্গত, দেশে অর্থপাচারের বিষয়ে পুলিশ বাহিনী ও দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক কয়েকটি মামলা করা হলেও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কোনো মামলা দায়ের করেনি। ইতঃপূর্র্বে ‘বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের উপায়’ সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক বৈঠকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে সূত্র জানায়, মুদ্রাপাচার রোধ ও তা ফিরিয়ে আনার বিষয়টি একটি যৌথ ও সমন্বিত উদ্যোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), আইন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ব্যাংকগুলোর ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে মুদ্রাপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সদস্য দেশগুলোর পারফরম্যান্স নিয়ে ‘এশিয়া প্যাসেফিক গ্রুপ অন্ মানিলন্ডারিং’ (এপিজি)-এর এ বছরের বৈঠকটি অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে। বৈঠকটি আগামী বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে এখনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি’ (জিএফআই)-এর ‘ট্রেড-রিলেটেড ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোজ ইন ১৩৫ ডেভেলপিং কান্ট্রিজ : ২০০৮-১০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবৈধভাবে অর্থপাচারকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম। বাংলাদেশ থেকে প্রধানত ১০টি দেশে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। এসব দেশের তালিকায় রয়েছেÑ কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কেইম্যান আইল্যান্ডস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস।