প্রদীপ কিংবা মোয়াজ্জেম নয়, দেশের শতাধিক ওসির বিরুদ্ধে অসংখ্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, নির্যাতন-ধর্ষণ এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে। সাবেক পুলিশ প্রধান ও অপরাধ বিশ্লেষকের মতে, রাজনৈতিক প্রভাব ও গুরু পাপে লঘু দণ্ডের কারণে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
কেরানিগঞ্জের কাপড় ব্যবসায়ী সোহেল মীর। ২ আগষ্ট মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। সদরঘাটের ওয়াইজঘাটে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় থানায়। ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় সাড়ে তিন লাখ টাকা। ছাড়া পেয়ে ১০ আগষ্ট কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে করা মামলায় এসব অভিযোগ করেন সোহেল। তবে অভিযোগ নাকচ করছেন, ওসি মিজানুর রহমান।
১১ আগস্ট নেত্রকোনায় ঠিক একই কায়দায় এক যুবলীগ নেতাকে থানায় এনে মারধর করে চাঁদাবাজির অভিযোগে ওঠে দুর্গাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়। সেদিনই পুলিশ হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় প্রত্যাহার করা হয়, কক্সবাজার সদর থানার ওসি শাহজাহান কবিরকে।
৯ আগস্ট বরগুনার বামনায় মানববন্ধনে লাঠিপেটার নির্দেশ পালন না করায় এক এএসআইকে প্রকাশ্যে চড়-থাপ্পড় মারেন, থানার ওসি। এ ঘটনায় প্রত্যাহার হন ওসি ইলিয়াস তালুকদার।
গত বছর মাদ্রাসাছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে কারাগারে সোনাগাজীর ওসি মোয়াজ্জেম। আর এখন আলোচনার কেন্দ্রে টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে তিনি।
প্রদীপ দাশের মতো শতাধিক ওসির বিরুদ্ধে নানা ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ। সাবেক আইজিপি নুরুল আনোয়ার বলছেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একই থানায় বছরের পর বছর থেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন ওসিরা।
অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফৌজদারী অপরাধ করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশ সদস্যদের বদলি বা প্রত্যাহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে শাস্তি। যে কারণেই দিন দিন বেপরোয়া উঠছেন তারা।
পুলিশের অপরাধ তদন্তে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন স্বাধীন কমিশন গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ অপরাধ বিশ্লষকদের।