আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীকে নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন হাতে পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। প্রতিবেদনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের কক্ষে মাদকদ্রব্যের সন্ধান, বিতর্কিত ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেয়া, অনৈতিক আর্থিক লেনদেন, সম্মেলনের এক বছর পরও একাধিক শাখায় কমিটি দিতে না পারা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে চাঁদা দাবি, নীতি লঙ্ঘন করে বিমানবন্দরের রানওয়েতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অযাচিত অনুপ্রবেশ, সিনিয়র নেতাদের অসম্মান করা, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা, মধুর ক্যান্টিনে নিয়মিত না যাওয়া এবং সাংবাদিকদের অসম্মান করাসহ ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সর্ম্পকে জানতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এসব বিষয় যাচাই করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবাক হন। ছাত্রলীগ দেখভাল করার দায়িত্ব পালনকারী নেতাদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর কাকতালীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অসম্মান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাস ভবনে চাঁদা চাইতে যাওয়ার বিষয়টি সরাসরি জানতে পারেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ দুইটি বিষয় থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কিছু বুঝতে বাকি থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে চাঁদা দাবি করার বিষয়টি উঠে আসে। তবে কত টাকা ও কিভাবে চাঁদা দাবি করা হয়েছে এ বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে কিছু বলা নেই। গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়ার সপ্তাহ খানেক পর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে নালিশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভিসি জানান, প্রায় ৮৬ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে ভিসির বাসায় গেছেন ছাত্রলীগের পদত্যাগী সভাপতি ও সম্পাদক। এরপরই চরমভাবে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে নেপথ্যের এমন ঘটনা চলার মধ্যে গত ৭ই সেপ্টেম্বর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে সিনিয়র নেতারা নানা অভিযোগ তোলেন। কারণ ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানে অতিথি করেও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ, ডা. দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন এসব নেতা। এরপর ১০ই সেপ্টেম্বর গণভবনে প্রবেশের জন্য দেয়া বিশেষ পাস বাতিল করা হয়। বিশেষ পাস বাতিলের পরও কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালান তারা। কিন্তু সফল হননি। সর্বশেষ গত শনিবার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে বলা হয়। এর ভিত্তিতে পদত্যাগ করেছেন তারা।