ভোরের আলো ডেষ্ক: জাতীয় সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের নাগরিক নন। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছে এ কথা। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে তা অসত্য। উল্লেখ্য, মানবপাচার সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগে কুয়েতে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের
এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলকে। এ নিয়ে কুয়েত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। ঘটনার দিকে দৃষ্টি রেখেছে আন্তর্জাতিক মহলও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, পাপুল কুয়েতের নাগরিকত্ব পেলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। বুধবার তিনি আরো বলেছেন, পাপুল কুয়েতের নাগরিক কি না এ বিষয়ে আমরা কুয়েত সরকারের সঙ্গে কথা বলছি।
আমরা এ বিষয়টি দেখছি। যদি তিনি কুয়েতের নাগরিক হন তাহলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করব আমরা। কারণ, আইনকে তার নিজের পথে চলতে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের একদিন পরই বৃহস্পতিবার কুয়েত সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পাপুল কুয়েতের নাগরিক নন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন অব রিলেশন্স এন্ড সিকিউরিটি মিডিয়া থেকে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে যে, অভিযুক্ত বাংলাদেশি কুয়েতের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তিনি এলিয়েন্স রেসিডেন্ট ল-এর অধীনে কুয়েতে বসবাসের জন্য এমন প্রচার পাচ্ছে। এতে বলা হয়, (শহিদ ইসলাম পাপুল) কুয়েতে নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে তা অসত্য। এক্ষেত্রে সব মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনুরোধ করা হয়েছে যথাযথ সংবাদ পরিবেশনের। নিশ্চিত করে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট যেকোনো অনুসন্ধানের জন্য প্রশাসনের দরজা সব সময় খোলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এই এমপি মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। মানবপাচার, অর্থপাচার ও ঘুষ দেয়া নেয়ার অভিযোগে গত ৬ই জুন কুয়েতের সিআইডি তাকে গ্রেপ্তার করে। কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ সময় তিনি কুয়েতের কর্মকর্তাদের লাখ লাখ ডলার ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিদেশি শ্রমিকদের কুয়েতে নিয়েছেন। এর বেশিরভাগই বাংলাদেশি। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে কুয়েতে চাকরি দেয়ার কথা বলে আদায় করা হয়েছে ৭ থেকে ৯ লাখ করে টাকা। কিন্তু চুক্তিতে যে বেতন দেয়ার কথা ছিল বেতন দেয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম। এমনকি অনেককে কর্মহীন থাকতে হয়েছে। এ ঘটনায় কুয়েতি কিছু কর্মকর্তাকেও আটক করা হয়েছে।
কুয়েতে পাপুলের রেসিডেন্ট পারমিট থাকতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন নিজের বক্তব্যের সংশোধনী দিয়ে বলেছেন, এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতের নাগরিক নন, দেশটিতে তার রেসিডেন্ট পারমিট থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলামের বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদের ভুল সংশোধন শীর্ষক ওই বার্তাটি ছিল এমন ‘কয়েকটি পত্রিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম (পাপুল) কুয়েতের নাগরিক।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ শহিদ ইসলামকে কুয়েতের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের কোনো ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট নিয়ে কুয়েতে যাননি এবং তিনি প্রায় ২৯/৩০ বছর কুয়েতে ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। তার হয়তো কুয়েতের রেসিডেন্ট পারমিট আছে।
উল্লেখ্য, ৭ই জুলাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরের সরবরাহ করা ভিডিও বার্তার বরাতে ‘এমপি নয়, কুয়েতের বাসিন্দা হিসেবে পাপুল গ্রেপ্তার হয়েছেন!’- শীর্ষক রিপোর্ট প্রকাশ করে মানবজমিন। সঙ্গে ভিডিও বার্তাটি হুবহু (আনকাট) প্রচার করা হয়। অন্যান্য গণমাধ্যমেও এটি ব্যাপক প্রচার পায়। ওই বার্তাটি আগের দিন নিজ দপ্তরে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাতকারের অংশ বিশেষ ছিলো। যেখানে পাপুলকাণ্ড সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ড. মোমেন বলেছিলেন, এমপি পাপুল কুয়েতে সরকারি পাসপোর্ট (কূটনৈতিক পাসপোর্ট) নিয়ে যাননি। কুয়েতে তিনি ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করেন। ওখানকার কোম্পানির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সেদেশের লোকাল রেসিডেন্ট বাংলাদেশের এ সাংসদকে তারা সে দেশটির একজন ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে।’