ভোরের আলো ডেষ্ক: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, আমার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় জরুরি ভিত্তিতে আমাকে কানাডায় আসতে হয়েছে। ২৯ জুন চিকিৎসকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের তারিখ নির্ধারণ ছিল। যথাযথ অনুমতি নিয়েই আমি এখানে এসেছি। তিনি বলেন, একজন সাধারণ ট্যুরিস্ট হিসেবে আমার কানাডায় আসা। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। মঙ্গলবার টেলিফোনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, অনেকের অভিমত, করোনাকালে আমি দেশের বাইরে চলে এসেছি। অথচ আমি করোনার প্রাদুর্ভাব থেকেই এলাকায় দফায় দফায় গিয়ে ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনা করেছি। মাঠপর্যায়ে থেকে সব কাজ করেছি। এমনকি কানাডায় বসেও কুষ্টিয়ায় স্থানীয় প্রশাসন, চিকিৎসক এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক ভিডিও কনফারেন্স করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত, বিপন্ন। এরই মধ্যে পৃথিবীতে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছেন। এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের দেশেও করোনার থাবা পড়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। তিনি বলেন, করোনার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে তিনি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। সীমিত সম্পদ নিয়ে তিনি সফলতার সঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। হানিফ বলেন, করোনাভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী নেওয়া পদক্ষেপ পৃথিবীতে বিরল ও নজিরবিহীন। সীমিত সম্পদ নিয়ে তিনি যে লড়াই করে যাচ্ছেন তাতে আমরা দেশবাসী দুর্যোগ থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হব। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণের দল আওয়ামী লীগ পূর্বেও জাতির যে কোনো দুর্যোগে মানুষের পাশে থেকেছে, বর্তমান করোনাকালেও ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা জনসচেতনতা তৈরি, ত্রাণকার্যক্রম এবং চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি করোনায় যারা মারা গেছেন তাদের দাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা করছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার প্রমাণ করেছে এ দল গণমানুষের। ভবিষ্যতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সবসময় প্রস্তুত। তিনি বলেন, করোনা সংকটের কারণে হয়তো দলের দৃশ্যমান সাংগঠনিক কাজ করা যাচ্ছে না। তবে এই সংকট থেকে উত্তরণ হওয়া মাত্র আমরা সাংগঠনিক কাজ পুরোমাত্রায় শুরু করব। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, এই করোনা সংকটে দলের অধিকাংশ এমপি নিজ এলাকায় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণকে ত্রাণ সহায়তাসহ তারা নানাভাবে সহায়তা করছেন। পাশাপাশি তারা সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, আমি নিজেও আমার নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ায় দফায় দফায় গিয়েছি। জেলা প্রশাসন, চিকিৎসক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে দিকনির্দেশনা দিয়েছি। করোনাভাইরাস আক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এলাকার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। কুষ্টিয়ায় আমার উদ্যোগে দ্রুততার সঙ্গে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। এতে কেবল কুষ্টিয়ার জনগণই নয়, পার্শ¦বর্তী ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও রাজবাড়ী জেলার জনগণ সহজে করোনা পরীক্ষা করতে পারছে। মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, গত সোমবার এই কানাডা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হই এবং সমাধানে দিকনির্দেশনা দিই। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র, সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করি।
এক্ষেত্রে হানিফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কারণেই আজ এতদূর থেকেও এলাকায় বৈঠক করতে পারছি এবং সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের সব এমপিই নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। হানিফ বলেন, করোনার পুরো চার মাসে আমি কুষ্টিয়ায় চার দফায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দেড় লাখ পরিবারে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি। জেলা ত্রাণ কমিটির মাধ্যমে এক কোটি ২০ লাখ টাকার একটি তহবিল গঠন করে দিয়েছি। এতে প্রায় ৪০-৫০ হাজার পরিবার উপকৃত হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি।