অর্থ, বিত্ত, আভিজাত্যের নেশায় এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী গডফাদারকেও নিজের কোলে তুলে নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। তাদের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পদবী দিয়ে পাশে পাশেই রেখেছেন। বিনিময়ে সেই চিহ্নিত অপরাধীরা মানিকগঞ্জ জেলাকে মাদকের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছে, বানিয়েছে সন্ত্রাসের লীলাভূমি। শুধু টাকা হাতানোর লক্ষ্যেই মানিকগঞ্জের বিএনপি-জামায়াতের নেতা কর্মীদেরকেও দলে দলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগে পুনর্বাসন করেছেন দুর্জয়-তাদের বানিয়েছেন বিভিন্ন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক।
নির্বাচনী এলাকা ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় সকল নিয়োগ এমনকি স্কুলের দফতরি, আয়া, নাইটগার্ড নিয়োগেও নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে বড় আকারের ঘুষ হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার কাজ। এসব দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাটের যাবতীয় অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনেও জমা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, তারা যাচাই-বাছাই শেষে প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
চাকর-বাকর আর বিএনপিই সম্বল!
এমপির বাসার কাজের লোক আব্বাস এখন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আরেক কাজের লোক বাচ্চু এখন বাঁচামারা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। দু’জনেই অঢেল সম্পত্তির মালিক। এখনো এমপির বাসায় কাজ করে।
মাটির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে এমপির চাচাতো ভাই মাহফুজুর রহমান অনি, ড্রেজার ব্যবসা ও চাকরি বাণিজ্যে জড়িত তায়েবুর রহমান টিপু, তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তদবির বাণিজ্য করে মাহবুবুর রমহান জনির বাবা সূর্য্য, তিনি ঘিওর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত এমপির মা নীনা রহমান, তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ছাত্রদল নেতা কাউসার এখন মহাদেবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। মাদক ব্যবসায়ী ও পবন বাহিনীর সদস্য আওলাদ এখন মহাদেবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন এখন আওয়ামী লীগ নেতা। পাটুরিয়ায় এমপির ড্রেজার বাণিজ্যের ম্যানেজার মোন্তাজ মাস্টার। শিবালয় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবুও এখন এমপির ড্রেজার বাণিজ্যের অংশীদার।
নেতাদের ব্যবসায় জড়ানো
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে ধাপে ধাপে যুবলীগের নেতৃত্ব পাওয়া, আওয়ামী লীগের পদ পাওয়া সাংগঠনিক দক্ষতায় জনপ্রিয় নেতাদের হটিয়ে দুর্জয় রাতারাতি রাজা-বাশারদের নেতা বানান, তাদের হাতেই তুলে দেন দলীয় কর্তৃত্ব। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে দক্ষতাসহ জেলাজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল যুবলীগের লিলটু, তুষার, খালেদ ইবব্রহীম, জাহাঙ্গীর ও জলিল। কিন্তু সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ফেলে তারা দুর্জয়ের ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার যোগ্যতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর এ অপরাধেই যুবলীগের নেতৃত্ব থেকে তাদের হটিয়ে দিয়েছেন। তাদের পরিবর্তে জেলা যুবলীগের নেতৃত্বে আনা হয়েছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বাহিনী গঠনকারী ব্যক্তিদের। তাদের দলীয় পদ পদবী দেয়ার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হিসেবেও নির্বাচিত করিয়ে নিয়েছেন দুর্জয়। যারাই দুর্জয়কে কাড়ি কাড়ি টাকা দিতে পেরেছেন, তার ব্যবসা বাণিজ্য দেখভাল করতে পেরেছেন তারাই দলের পদ পদবী পেয়েছেন, এমপি’র ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।