লিখেছেন সোহেল আহমেদ চৌধুরী
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। সমাজে কতো প্রকারই না ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আর এসব এই মানুষের মধ্য দিয়েই। তারপরও আমরা বলে থাকি ‘সবকিছুর পরও তো একজন মানুষ’! মানুষেরই তো হৃদয় আছে। কোনো এক সময় সেই হৃদয় নাড়া দেয়। জেগে ওঠে বিবেক। আর এই বিবেকবান মানুষই বেচে থাকেন তাঁর কর্মে। এমনই একজন বিবেকবান মানুষ সিলেটের বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাব উদ্দিন।
সিলেট অঞ্চলের সবাই হয়তো বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতাল সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে এই হাসপাতালটি মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষের উদারতার কথাও শুনে আসছিলাম। তবে কখনো বাস্তবে দেখা হয়নি। আর না হলেও এবার নিজে এর প্রমাণ পেয়েছি কিভাবে অসহায় মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে হাসপাতালটি। যেজন্য প্রবাসে ব্যস্ততা ও বর্তমানে করোনা ভাইরাসের মতো কঠোর পরিস্থিতির মধ্যেও দু’কথা না লিখে পারলাম না।
সম্প্রতি বিয়ানীবাজারের চারখাই ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইউকে-এর সাধারণ সম্পাদক সুলতান তাপাদার এবং আমি, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাব উদ্দিন ও বাণিজ্যিক পরিচালক ও ট্রাস্টি ফরহাদ হোসেন টিপুর সাথে কনফারেন্সে কথা বলছিলাম। এর আগেই আমার কাছে খবর ছিল চারখাই ইউনিয়নের ফেনগ্রামের মাহের নামের একটি বালকের দুরারোগ্য ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তবে দুঃখজনক বিষয় ছিল ছেলেটি আমাদের দেশের আরও অনেকের মতো অত্যন্ত দরিদ্র ও বঞ্চিত পারিবারে বেড়ে উঠেছে, যে কিনা পশ্চিমা বিশ্বে আমরা যে চিকিৎসা সেবা ফ্রি পেয়ে থাকি আর সেটির খরচ বহন করতে এই হত দরিদ্র পরিবার পুরোপুরি অক্ষম। কথা বলার এক ফাঁকে বিষয়টি আমি এম সাব উদ্দিন ও তাঁর সহকর্মী ফরহাদ হোসেন টিপুকে অবগত করি। আলহামদুলিল্লাহ তাৎক্ষণিক তারা ছেলেটির চিকিৎসার সকল দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কোনো চিন্তাভাবনা না করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমি আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি অবাকও হলাম যে এই জগতে এমন মহান ব্যক্তিরা আছেন যারা পরোপকার এর জন্য নিচের সব কিছু বিসর্জন দিতে ও বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়না।
এম সাব উদ্দিন বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের কৃতি সন্তান হলেও তাঁর শ্রদ্ধেয়া মা আমার প্রাণপ্রিয় জন্মভূমি চারখাই ইউনিয়নেই জন্মগ্রহণ করছেন। ফলে চারখাই তথা গোটা বিয়ানীবাজারবাসী তাদের মতো উদারতা নিয়ে গর্ববোধ করেন। অবশ্য এর আগেও বিভিন্ন সময় আমরা এম সাব উদ্দিনের কাছ থেকে মানবিক আচরণ ও পরোপকারিতা দেখতে পেয়েছি।
অনেকেই জানেন যে, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল নিয়মিত চিকিৎসা সেবার মান বাড়িয়ে চলেছে। তারা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে ও আন্তরিকতার সাথে রোগীদের সেবা দিচ্ছে। আর এক্ষেত্রে জনাব এম সাব উদ্দিনের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার পাশাপাশি সহযোগীদেরও মানোন্নয়নে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। এ ধরণের কাজে সংশ্লিষ্টদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা না জানালে অবশ্যই কৃপণতা করা হবে। এম সাব উদ্দিন তার পরোপকারের জন্য বিয়ানীবাজারের বাইরেও ব্যাপক সুপরিচিত। তাঁর এই পরোপকারী আচরণ সবার জন্য অনুকরণীয় এবং শিক্ষণীয়। বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের সমস্ত ট্রাস্টিদের নিরন্তর অধ্যবসায়, উদারতা, আত্মত্যাগী মনোভাবের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
অবশেষে যেটা বলতে চাই, আমাদের সকলকে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ফান্ডের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিৎ। যা এই এলাকার আমাদের অসহায় হতদরিদ্র চিকিৎসা বঞ্চিত ভাই-বোনদের উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পেতে সহায়তা করবে। আমরা যত বেশি মানুষ সাহায্যের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসবো ততবেশি অসহায় মানুষ এই সেবা ভোগ করতে পারবে। সাথে সাথে আমরা কেবল নিজেরাই নয়, বরং আমাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব পরিচিত সবাইকে অনুদান প্রদানে উৎসাহিত করে তোলা উচিৎ। সেই সাথে বলা আবশ্যক যে, এ ধরণের বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমাদের অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে। তাদের অনুসরণ করে অন্যরাও মানুষের সেবা করতে পারেন।
পরিশেষে আমি আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা করি, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি ব্যক্তি বিশেষ করে এম. সাব উদ্দিন সাহেবকে তাদের এই অত্যন্ত মানবদরদী কর্মকাণ্ডের জন্য, সমজের নিঃস্ব মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যেন ইহকালে এবং পরকালে তাদের সবাইকে এর উত্তম প্রতিদান দেন। বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেন সফল ভাবে সম্পাদিত হয়। জনাব এম. সাব উদ্দিন সহ তার সকল সহযোগীর দীর্ঘায়ু এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল দীর্ঘজীবী হোক।
সোহেল আহমেদ চৌধুরী: যুক্তরাজ্য প্রবাসী।