ভোরের আলো ডেষ্ক: লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে আটক হয়েছেন। শনিবার রাতে দেশটির ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) তাকে আটক করে। স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েত সিটির মুশরিফ আবাসিক এলাকার ৪ নং ব্লকে তার বাসা থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যায় কুয়েতের সিআইডি। তার বিরুদ্ধে কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানিতে অনিয়ম এবং হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল মারাতিয়া কুয়েতি গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর স্বত্বাধিকারী। কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশি এই সংসদ সদস্যের মানবপাচার ও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া এবং সিআইডির গ্রেফতারাভিযানের খবর প্রচার করেছে কুয়েতি গণমাধ্যম। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম জানান, কুয়েতের সিআইডি তাকে আটক করেছে বলে জানতে পারি। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমি তার বিষয়ে খোঁজখবর করি। প্রাথমিকভাবে কুয়েতের গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, এমপি পাপুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। এখানে তার কিছু সম্পত্তি আছে সেগুলোর ব্যাপারে কথা বলবে। এ ছাড়া কিছু তথ্যের ব্যাপারে কথা বলবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, কুয়েত থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমাকে জানিয়েছেন এমপিকে সিআইডি গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। উনি কুয়েতে একটি বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। ওই প্রতিষ্ঠানের কুয়েতি চেয়ারম্যান তাকে জামিনে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা দুঃখজনক এবং একই সঙ্গে লজ্জার বিষয় যে বিদেশে গিয়ে একজন এমপি গ্রেফতার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে এমন সময়ে যখন সারা বিশ্ব মানবপাচারের ব্যাপারে একাট্টা।
জানা যায়, এমপি পাপুলের মানবপাচারে জড়িত থাকার তথ্য আলোচনায় আসে গত ফেব্রুয়ারিতে। কুয়েতের দৈনিক আল কাবাস দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এমপি পাপুলকে গ্রেফতারের জন্য কুয়েত সিআইডির অভিযানের তথ্য জানায়। তখন তার কুয়েত ছেড়ে পালানোর তথ্যও জানায় আল কাবাস। কুয়েত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ ওঠে। অন্তত ২০ হাজার বাংলাদেশিকে কুয়েতে পাঠিয়ে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছেন বলে কুয়েতের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়। কুয়েতের সংবাদমাধ্যম আল-কাবাসের প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন বাসিন্দার সঙ্গে আর্থিক অংশীদারিত্ব গড়ে কুয়েতে আয় করা বেশির ভাগ অর্থ পাপুল আমেরিকায় পাচার করেছেন বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। তিনি বিভিন্ন সাব-এজেন্টের মাধ্যমে মানবপাচার করে থাকেন। বিশেষ করে ক্লিনিং এবং সিকিউরিটির কাজের নামে তিনি এই মানবপাচার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য তার কোম্পানি যাতে কুয়েত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পায় সেজন্য বাংলাদেশের ওই সংসদ সদস্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন। যদিও পাপুল এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
জানা যায়, বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পাপুল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির সমঝোতার মাধ্যমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। পরে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে আত্মগোপনে চলে যান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আলোচনা ছিল মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে পাপুল ওই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন। বিষয়টি নির্বাচনের সময়ই বেশ আলোচিত ছিল। কাজী শহিদ ইসলামের ফেসবুক ও ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজ, কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানটি জনশক্তি রপ্তানিতে যুক্ত। এ ছাড়া তিনি বেসরকারি খাতের ব্যাংক এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান এবং এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান। স্বতন্ত্র এই সংসদ আওয়ামী লীগ কুয়েতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
স্ত্রীর দাবি গ্রেফতার নয়, আলোচনার জন্য ডেকেছে : এমপি পাপুলের স্ত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সেলিনা ইসলাম দাবি করেছেন, কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে গ্রেফতার সম্পর্কিত যে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে তা ঠিক নয়। তিনি সেখানে কোনো মামলার আসামি নন। তিনি কুয়েতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কুয়েত সরকারের তাদের নিয়ম অনুযায়ী তার ব্যবসায়িক বিষয়ে আলোচনার জন্য সেখানকার সরকারি দপ্তর ও সিআইডিতে ডেকে নিয়েছে। কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূত মহোদয় বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত এবং কুয়েতের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।