ভোরের আলো ডেষ্ক: পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার প্রেসিডেন্ট ভবন হোয়াইট হাউসের সামনের এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে এ সময় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এদিকে শনিবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা হোয়াইট হাউসে চড়াও হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আত্মরক্ষার জন্য বাঙ্কারে পালিয়ে থাকতে হয়। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভ শুরু হলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাটির নিচে বাঙ্কারে অবস্থান নেন। নিরাপত্তার খাতিরে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও ছেলে ব্যারনকেও সেখানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প ও তার পরিবার প্রায় এক ঘণ্টার মতো বাঙ্কারে ছিলেন। পরে বাইরের পরিস্থিতি নিয়ে ‘লাল’ সংকেত পেলে, প্রেসিডেন্টকে সপরিবারে ‘জরুরি অপারেশন সেন্টারে’ নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পর রবিবার গভীর রাতে হোয়াইট হাউসের কর্মীদেরকে একটি ই-মেইলের মাধ্যমে সতর্কতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়, সোমবার তারা কাজের জন্য বের হলে যেন হোয়াইট হাউসের বাইরে নিজেদের পাস লুকিয়ে রাখেন। এদিকে একাধিক টুইটের মাধ্যমে ট্রাম্প বাঙ্কারে রেখে তাকে রক্ষার জন্য গোয়েন্দাদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের জন্য তিনি ‘নিরাপদ’ বোধ করছিলেন না। এদিকে বিক্ষোভ সংক্রান্ত খবরে জানা গেছে, রবিবার রাতে বিক্ষোভের একপর্যায়ে হোয়াইট হাউসের কাছেই অবস্থিত ঐতিহাসিক সেন্ট জনস চার্চে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে ওয়াশিংটন ডিসিরলাফায়েট স্কয়ার থেকে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হন। সন্ধ্যা নামার পর তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা আমেরিকান পতাকা ও বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় তাদের থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। সেই সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ শুরু হলো। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ঐতিহাসিক সেন্ট জনস চার্চে কয়েক দফা আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনের অফিসে হামলা করেন। অফিসের জানালা-দরজার কাচ ভেঙে ফেলা হয় এবং ভিতরের লবিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওয়াশিংটন মনুমেন্টের সামনে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে গভীর রাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কারফিউ ভেঙে আন্দোলনকারীরা পুলিশের মুখোমুখি এবং পুলিশের গাড়িসহ আশপাশের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় লিপ্ত ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি, ফিলাডেলফিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, মিলওয়াকি, মায়ামি-ডেড কাউন্টি, আটলান্টা, সিয়াটল, পোর্টল্যান্ড, সান্তা মণিকা, সানফ্রান্সিসকো, শিকাগো, কলম্বিয়া, ওরেঞ্জবার্গ, ক্লিভল্যান্ড, টেনেসির অস্টিনে। রবিবার রাত পর্যন্ত ছয় দিনের এ আন্দোলনে গ্রেফতার হয়েছেন ৪ হাজার ১০০ জন।
তিন পুলিশ অফিসারকেও গ্রেফতারের দাবি : রবিবার রাতে সর্বপ্রথম মিনিয়েপলিস পুলিশ প্রধান মেডারিয়া এরাডন্ডোর মুখোমুখি হন নিহত জর্জ ফ্লয়েডের ভাই ফিলোনিজ ফ্লয়েড। তিনি জানতে চান, তার নিহত ভাইয়ের ঘাতকেরা বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে কিনা। নিষ্ঠুরভাবে হত্যার জন্যে দায়ী অপর তিন পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘হত্যা মামলার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন মিনিয়েপলিস কাউন্টি অ্যাটর্নি অফিস। তারাই সবকিছু করছেন আইনগত প্রক্রিয়া অনুযায়ী।’ ফিলোনিজ ফ্লয়েড বলেছেন, চারজনকেই বরখাস্ত এবং গ্রেফতারের পর মামলায় অভিযুক্ত করার মতো সব ডকুমেন্ট সর্বসাধারণের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুতরাং শুধু একজনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বিচারের প্রসঙ্গটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অবকাশ থাকতে পারে না। গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশিত ভিডিওতেই অপর তিনজনের অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। তাদেরকে শুধু বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রশমিত হচ্ছে না বলে আন্দোলনকারীরা উল্লেখ করছেন।