ভোরের আলো রিপোর্ট, ঢাকা অফিস: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আর্থিক সহায়তার জন্য ১১ হাজার ৫২১ জন উপকারভোগীর তালিকা প্রস্তুত করেছে উপজেলা প্রশাসন। সেই সহায়তা তালিকায় কুলাউড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের তিনতলা ভবনের মালিকের নামসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে শতাধিক উপকারভোগীর তালিকায় ইউপি সদস্যদের মোবাইল নাম্বার পাওয়া যায়। এর মধ্যে উপজেলার শহরতলীর কাদিপুর ইউনিয়নে ১৮ উপকারভোগীর তালিকায় দুই ইউপি সদস্যের মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে সহায়তা তালিকা থেকে ওই বিত্তশালী ব্যক্তির নাম বাদ পড়ে এবং ১৮ জন উপকারভোগীর তালিকা থেকে ইউপি সদস্যদের মোবাইল নাম্বার বাদ দিয়ে উপকারভোগীদের মোবাইল নাম্বার সংযুক্ত করে তালিকা সংশোধন করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মানবিক সহায়তা তালিকায় কুলাউড়া পৌর শহরের ৪নং ওয়ার্ডের মাগুরা এলাকার বাসিন্দা বিত্তবান অমত্ত কুন্ডু (৫০) এর নাম পাওয়া গেছে। অমত্ত কুন্ডু তিনতলাবিশিষ্ট বিল্ডিং এর মালিক ও মাগুরা এলাকায় মিষ্টির প্যাকেট তৈরির জন্য তার একটা নিজস্ব দোকান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর তানভীর আহমদ শাওন ওই বিত্তশালী ব্যক্তির নাম তালিকা জুড়িয়ে দেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের মনোনীত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম মাঠ পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের সময় এই অনিয়ম দেখতে পান। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরীকে জানালে তিনি সাথে সাথে সহায়তা তালিকা থেকে অমত্ত কুন্ডুর নাম বাদ দেন।
এদিকে, উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নে ১৮ জন উপকারভোগীদের তালিকায় কয়েকজন মেম্বারের মোবাইল নাম্বার পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য সকল ইউনিয়নে ৮ থেকে ১০টি করে সহায়তা তালিকায় ইউপি মেম্বার/মহিলা মেম্বারের মোবাইল নাম্বার পাওয়া যায়। মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের মনোনীত ট্যাগ অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবীরা তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের সময় এই অনিয়মের বিষয় দেখতে পান।
উপজেলায় পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে মোট ১১ হাজার ৫২১ টি উপকারভোগী পরিবারের নামের তালিকা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটি ইউনিয়ন/পৌরসভা কমিটি তা অনুমোদন করে উপজেলা কমিটিকে দাখিল করেন। এরপর উপজেলা প্রশাসন উপকারভোগীদের নামের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ১৩টি ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় মোট ১৪ জন ট্যাগ অফিসার নিয়োজিত করে।
এছাড়া সকল ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে মোট ১২৬টি ওয়ার্ডে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারের নেতৃত্বে উপকারভোগীর তালিকা প্রণয়নে অধিক যাচাই-বাছাই ও অনিয়ম রোধের জন্য আরো ৫০৪ জন স্বেচ্ছাসেবী মনোনীত করে। এর মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছেন একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, ১ জন ইমাম, ১ জন স্কাউট্স সদস্য ও ১ জন এনজিও কর্মী। তারা উপজেলা প্রশাসনের সাথে থেকে দেশের এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ১১ হাজার ৫২১ জন উপকারভোগীদের নগদ সহায়তার জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা প্রণয়নের পর যাচাই-বাছাইয়ের সময় পৌরশহরের তিনতলা বিল্ডিংয়ের মালিকের নাম পাওয়া যায়। ওই ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি কর্তৃক কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সেটারও সমাধান করে তাৎক্ষণিক তালিকা সংশোধন করা হয়েছে।