ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম নিখুত অভিনেতা ছিলেন ইরফান খান। বুধবার ৫৩ বছর বয়সী এই অভিনেতা পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে পুরো উপমহাদেশেজুড়ে। শচিন টেন্ডুলকার থেকে শুরু করে বীরেন্দর শেবাগ, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ানরা গুণী এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
অভিনয় দিয়ে উপমহাদেশ জয় করা ইরফান হতে পারতেন ক্রিকেটারও। ছোটবেলায় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নই দেখতেন তিনি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দারুণ পারফরমার ছিলেন ইরফান। সুযোগ হয়েছিল ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সিকে নাইডু ট্রফিতে খেলার। কিন্তু মাত্র ২০০-২৫০ রুপি না থাকায় ক্রিকেটার হয়ে ওঠা হয়নি তার।
চলচ্চিত্রে আসার আগে তিনি যে ক্রিকেটার ছিলেন, সেই গল্প ইরফান নিজেই শুনিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে একটি অনুষ্ঠানে ইরফান জানান, ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ভালোই ছিলেন। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছ্বলতার কারণে ক্রিকেটার হয়ে ওঠা হয়নি।
অলরাউন্ডার ছিলেন ইরফান। কিন্তু অধিনায়কের পরামর্শে নিজেকে বোলার হিসেবে গড়ে তোলার কাজে মন লাগান তিনি। কৌতুক অভিনেতা আভিশ ম্যাথিউয়ের অনুষ্ঠানে ইরফান বলেছিলেন, ‘আমার অধিনায়ক আমার বোলিং পছন্দ করতেন। এ কারণে তিনি আমাকে বোলার বানান। সে বলতো, ‘আমাকে একটি দারুণ ডেলিভারি দাও’। আমি কেবল বল ছুঁড়তাম এবং যে কোনোভাবেই হোক, উইকেট পেতাম।’
পারফরম্যান্স দেখিয়ে সিকে নাইডু টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-২৩ পর্যায়ে খেলার সুযোগ করে নেন ইরফান। এ্ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে জয়পুর যেতে হতো তাকে। এ জন্য তার ২০০-২৫০ রুপির দরকার ছিল। যা ছিল না তরুণ ইরফানের কাছে। জয়পুর যাওয়া হয়নি তার, ক্রিকেটারও হয়ে ওঠা হয়নি।
ইরফান বলেছিলেন, ‘আমি ক্রিকেট খেলতাম। ক্রিকেটারই হতে চেয়েছিলামা। আমি যখন নির্বাচিত হলাম, আমাদের দল জয়পুর থেকে আজমীর যাচ্ছিল। তখন আমার ২০০-২৫০ রুপি দরকার ছিল। আমি সেটা সংগ্রহ করতে পারিনি। ওই দিন আমি বুঝতে পারি, এই পথ আমি অনুসরণ করতে পারি না।’
সেই অনুষ্ঠানে ইরফান আরও বলেন, ‘আমি সিকে নাইডু টুর্নামেন্টে খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমার বাড়ির পরিস্থিতি এমন ছিল যে, খেলতে যেতে হলে আমাকে মিথ্যা বলতে হতো। কোথায় যাচ্ছি, এমন প্রশ্নের উত্তরে আমাকে অজুহাত বানাতে হতো। তো খেলাধুলাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার পথে সেভাবে অনুপ্রেরণা পাইনি।’
অভিনয়ের প্রতিও আগ্রহ ছিল ইরফান খানের। ক্রিকেটের পথ কঠিন মনে হওয়ায় পরে অভিনয়কেই বেছে নেন শক্তিমান এই অভিনেতা। ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায়। এই স্কুলে ভর্তির জন্য তাকে ৩০০ রুপি খরচ করতে হয়। ইরফান বলেন, ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তির জন্য ৩০০ রুপি দরকার ছিল, যা দেওয়া্ আমার জন্য কঠিন ছিল। অবশেষে আমার বোন এটা আমাকে দেয়।’
স্লামডগ মিলিয়নিয়ার, লাইফ অব পাই, জুরাসিক ওয়ার্ল্ড, দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যানের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ইরফান। এ ছাড়া ভারতীয় অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন গুনী এই অভিনেতা। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়া ইরফান বুধবার মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান।