করোনা’র করুণায়

:ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া:

বন্যেরা সড়কে সুন্দর; মানুষেরা গুহায়,

হায় রে শ্রেষ্ঠ জীব কতো নিরূপায়?

বুঝলাম করোনা’র মহাকরুণায়;

মানুষ পড়েছে বিধির তীব্র ঘৃণায়!

 

স্বৈরের ব্যবহারে, দূষণ আর অনাচারে

ধরণিতে যতো বিষ ঢেলেছো,

প্রতিদানে তুচ্ছ এ পরমাণু জীবানুর

মৃত্যুর হলাহল গিলেছো।

 

গবেষণাগারে বসে ফর্মুলা ঘষে ঘষে

বানিয়েছো পরমাণু বোমা,

তারও চেয়ে ক্ষুদ্র এ করোনা’র কাছে আজ

সেই জ্ঞানও দিতে হলো জমা।

 

গুহার গহনে তুমি ঘরে ঘরে বন্দি

বন্যেরা ঘোরে মহাসড়কে,

আছো তবু ভয়ে ভীত,উদ্বগ শংকায়

প্রাণ যদি কাড়ে মারি-মড়কে!

 

জীবনের স্বাভাবিক গতিধারা রুদ্ধ

দিন রাত কুণ্ঠায় যাপিত,

অনাহারে আহাজারি বিপরীতে ত্রাণ চুরি

বিদ্বেষ বীজ আজো রোপিত।

 

বন নদী সাগরে জলে স্হলে আকাশে

আছে যতো উদ্ভিদ ও প্রাণি,

করোনা’র করুণায় সয় না এখন আর

মানুষের অনাচার গ্লানি।

 

নেপালের রাস্তায় গন্ডার মহাশয়

নেমে দেখে সব লোক হাওয়া,

একটা যুবকই শুধু নেমেছিলো সে পথে;

গন্ডার দিলো তারে ধাওয়া।

 

পিচঢালা রাস্তায় রত: দিবানিদ্রায়

সিংহের পরিজন পরিবার,

ক্রুগারের পার্কের এ বিরল দৃশ্য

দেখে নাই কোনদিন মানুষ আর।

 

কেপটাউনের পথে পেঙ্গুইনেরা মিলে

নগর ভ্রমণ করে সাড়া,

সে মহাসড়ক জুড়ে হেলেদুলে ঘুরে ফিরে

আনন্দে হলো দিশেহারা।

 

লোকে আগে ভেবেছিলো ‘শিখা’নামী হরিণের

প্রজাতিও হয়েছে বিলীন।

জাপানের ‘নারা’ নামের শহরের রাস্তায়

মিললো সে বিরল হরিণ।

 

ওয়েলসের সড়কে দলে দলে নেমে এলো

শত শত পাহাড়ি ছাগল,

কেরালার পথে নামে বিরল গন্ধগোকুল

মালাবার সিভেটের দল।

 

চিলির সান্তিয়াগো শহরের কণ্ঠে

সড়ক দখলে বনবিড়ালের,

ভারতের রাজপথ বিচরণ ভূমি যেনো

গন্ডার,বানর আর শেয়ালের।

 

পানামার সান-পেলিপ সমুদ্রতীরে ঘোরে

মাংসাশী রিকনের দল,

ওকল্যান্ড মাঠ জুড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে টার্কি;

সে দৃশ্য কতোটা বিরল!

 

মুম্বাইয়ের পথে পথে অপরূপ মুদ্রায়

ঝাঁকবাঁধা ময়ূরের নৃত্য,

মেক্সিকো সৈকতে ফ্ল্যামিঙ্গো পাখিদেরও

আনন্দে  পুলকিত  চিত্ত।

 

ক্রিকেট খেলার মাঝে শিংওয়ালা হরিণেরা

দেরাদুনে ঢুকে পড়ে মাঠে,

লুপবুরি শহরের পথে শত বানরে

বিচরণ করে রাজঠাটে।

 

সৈকতে দলবেঁধে মেতে আছে ডলফিন  

উচ্ছ্ল  জলকেলি ক্রীড়াতে,

ভয়ে তুমি নিজঘরে স্বঘোষিত কারাগারে

হানা যদি দেয় মারি-পীড়াতে।

 

এখন আর কোনো প্রাণী মানুষের মতো নেই

অক্ষম এতো অসহায়,

গুহাবাসি হওয়া ছাড়া নিরাপদে বাঁচবার

জানা নেই ভিন্ন উপায়।

 

সৃষ্টির সেরা জীব কারাবাসে নির্জীব

করোনা’র হাতকড়া পরানো,

স্বেচ্ছা এ কারাবাসে  দিন  কাটে  ভয়  ত্রাসে

নিয়তির সাথে  প্রাণ জড়ানো।

 

উল্লাসে-উচ্ছাসে মেতে আছে জনপদে

বনপ্রাণি জলজীব জানোয়ার,

এ কালের মানুষকে প্রগতির হোতা বলে

তবে কোন যুক্তিতে মানো আর?

 

মানুষ বন্দি ঘরে জনপদে ঘোরে পশু পাখি,

লক্ষণে যায় বোঝা প্রলয়ের নেই বেশি বাকি।

        ____

fanofkafka@gmail.com

 

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ