ভোরের আলো ডেস্ক:
গাজীপুরের শ্রীপুরে ইন্দোনেশীয় নারী ও তিন সন্তানকে হত্যার নেপথ্য কারণ জানিয়েছেন খুনি পারভেজ। সোমবার বিকেলে তিনি গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শরীফুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। সেখানে উঠে আসে এই খুনের বীভৎস বর্ণনা।
২৩ এপ্রিল খুন হন শ্রীপুরের আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশীয় নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাকপ্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।
এ ঘটনায় রোববার মধ্যরাতে আবদার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পারভেজকে গ্রেফতার করেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে পারভেজ জানিয়েছে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েই এই খুন। এছাড়া দুই মাস আগেও পারভেজ নিহতের এক সন্তানকে উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে ধরা পড়েন বলে জানা যায়। পরে ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পান তিনি।
পারভেজের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, মা ও মেয়ের স্মার্টফোন চুরি করতে ২৩ এপ্রিল প্রতিবেশী বাবুলের বাড়ির পেছন দিয়ে কাজলের বাড়ির দেয়াল বেয়ে দোতলা বাড়ির ছাদে ওঠেন তিনি। নিজের কাছে থাকা ব্লেড দিয়ে ছাদে কাপড় শুকানো রশি কাটেন। পরে ছাদের গ্রিলের সঙ্গে রশি বেঁধে দোতলার বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঘরে ঢোকেন।
পরে নূরা ও হাওরিনের রুমের খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। নূরার তখন কানে হেডফোন ছিল। ছোট বোন হাওরিন ঘুমিয়ে ছিল। এক ঘণ্টা পর সবাই ঘুমিয়ে গেছে ভেবে রান্না ঘর থেকে বটি নিয়ে দোতলায় আসেন পারভেজ। মোবাইল নেয়ার জন্য নূরার মায়ের কক্ষের দরজার লক খোলার চেষ্টা করেন।
দরজা খোলার শব্দে নূরার মা জেগে ওঠেন। তিনি বাথরুম ও আশপাশে কেউ আছে কি-না খোঁজেন। এ সময় ফাতেমা তাকে দেখে চিনে ফেললে চিৎকার দিতেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন। তখন নূরা শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলে তাকেও বটি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন পারভেজ।
এরপর নূরার ছোট ভাই ফাদিল জেগে উঠলে তার মাথায় কোপ দেন। এতে ফ্লোরে পড়ে গেলে প্রথমে তাকে গলা কেটে নূরার খাটের নিচে রাখেন। তারপর হাওরিন ঘুম থেকে জেগে চিৎকার দিলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করেন। পরবর্তীতে নূরাকে ধর্ষণ করেন পারভেজ। নুরার মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে হাওরিনকেও ধর্ষণ করেন। এরপর সবার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গলা কেটে দেন পারভেজ।
সবশেষে নূরার মায়ের গলায় স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও নাকফুল খুলে নেন। হাওরিনের কান থেকে দুটি স্বর্ণের রিং খুলে নেন। আলমারি খুলে দুটি স্বর্ণের চেইন, আংটি, একটি ডায়েরি, নূরার মায়ের রুম থেকে দুটি মোবাইল নেন পারভেজ। মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার পায়জামার পকেটে রাখেন। এরপর হাত মুখ ধুয়ে গেট খুলে নিজের বাড়িতে চলে যান পারভেজ।
পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে সোমবার ভোরে পারভেজের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তার ঘরের মধ্য থেকে পায়জামার পকেটে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালঙ্কার এবং রক্তমাখা গেঞ্জি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
পরিদর্শক হাফিজুর আরও বলেন, পারভেজ নিহতদের প্রতিবেশী। তার বাবার নাম কাজিম উদ্দিন।২০১৮ সালে তার চাচার বাড়ির ভাড়াটিয়া সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল শ্রীপুর থানা পুলিশ। দীর্ঘ নয় মাস হাজতবাস শেষে বয়স বিবেচনায় সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় আসেন।
(ভোরের আলো/ফআ)