হরিনাথের কেচ্ছা কিংবা পলো বাওয়ার দিন

লিখেছেন শ্যামল কান্তি ধর

কী ঝকঝকে দিন। কচি করচ পাতা দুপুর রোদে আরও সবুজ। আকাশ এত নীল হয়! আজ নীলের বুকে সাদা মেঘদলেরও কোন উড়াউড়ি নেই। নারকেল গাছের পাতায় পাতায় ফাগুনের বাতাসের শিহরণ। বাতাসের পরশে কাঁপছে হিজলের বন। দোলছে চারা ধান গাছ, নলখাগড়ার বন। চড়ুই পাখির ধুলোস্নান বাতাসে ছড়ায় ধুলিকণা, তার সাথে মিশে যায় শিমুল তুলা। পুকুর পাড়ের কচি দুর্বায় বর্ণিল ফড়িংয়ের উড়াউড়ি, কী তার রঙের বাহার। পেছনে ছুটে উদোম গায়ের কিশোর। ধরা দেয় না। সবুজের মাঝে বর্ণিল ফড়িংয়ের উড়াউড়িতে বিভ্রান্ত কিশোর। নরম ঘাসে তার লুটোপুটি। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া পুকুরে মাছেদের দিশেহারা চলাচল। গর্ত থেকে উড়াল দেয় নীল মাছরাঙা। পুকুরের জল ছুঁয়ে আবার উড়াল দেয় লেবুগাছের কচি ডালে। সবুজ লেবুতে নুয়ে পড়া ডাল। দুর মাঠে রাখালের বাঁশির সুরে বিভ্রান্ত ফাগুনের কোকিল। বাশবাগানে ঝিঁঝিঁ পোকার সুর। সুর ছড়িয়ে যায় তার পাতায় পাতায়। টিনের চালে ক্লান্ত ঘুঘু। হরিনাথের উঠানে আকাশ থেকে হঠাৎ নেমে আসে শিকারী চিল। হাঁসের তুলতুলে ছানাদের পাখনায় আড়াল করে ভিত মোরগ।


ঠিক সেই সময় হরিনাথের খালি ভিটেয় পৌঁছে যাই আমরা। এই গ্রামের শেষ বাড়ি ছিল হরিনাথের। দুধারে হিজল, জারুল ও কদম গাছের সারি রেখে শেষ হয়েছে গ্রামের যে পথ, সেই পথ ধরে আমরা পৌঁছে যাই তার বাড়ি। আমরা মানে, আমি এবং আমার বন্ধু রাজেশ। এক নিস্তব্দতা ঘিরে ফেলে আমায়। অনেক বছর পর হরিনাথের খালি ভিটেয় বসে আমি যেন চলে যাই অনেক বছর আগের সেই দিনগুলোতে। হরিনাথের কাছে।

২.
তার নাম ছিল হরি চন্দ্র নাথ। দুই ছেলে ও বউকে নিয়ে ছনের চালের মাটির ঘরে তার বাস। কয়েকটি খেতের জমি তার ছিল বৈকি। তবে তাতে বছরে একবার ফসল হয়। বর্ষাতে এখানে নদীর পানি উপচে বন্যা হয়। তাই সে সময় হরিনাথ শীতিল পাটি তৈরী করে। হরিনাথ ছিল শীতল পাটির এক নিপুন কারিগর। আমরা হরিনাথের বাড়ির সামন দিয়েই স্কুলে যেতাম। মুগ্ধ হয়ে দেখতাম হরিনাথ তার ছেলে, বউকে নিয়ে পাটি তৈরিতে ব্যস্ত। আমার সাথে হরিনাথের ছিল খুব ভাব। আমি তাকে হরিনাথদা বলে ডাকতাম। স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার যখন খুব পানি তৃষ্ণা পেত আমি তার বাড়িতে উঠতাম। কালো মাটির কলসের ঠান্ডা পানিতে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। শীতল পাটির রঙিন বুননের দিকে আমি চেয়ে থাকতাম মুগ্ধ হয়ে। হরিনাথদা আমার দিকে না তাকিয়েই বলত, তারপর স্কুলে আজ কি শিখলে? আমি চুপচাপ থাকতাম। “ভালো করে পড়াশোনা করে শীতল পাটির রঙ্গিন বুননের মত জীবন গড়তে হবে, গ্রামকে গড়তে হবে, বুঝলে?”-এভাবে যেদিনই তৃষ্ণা নিবারনে হরিনাথদার বাড়ি যেতাম সেদিন কিছু কিছু না কথা আমায় বলত। তার কিছু আমি বুঝতাম, কিছু না। তবে পরে হরিনাথদার এইসব কথা আমায় অনেক ভাবিয়েছে। মিছিলের দিন বদলের শ্লোগানে আমি হরিনাথদার কথাগুলোর প্রতিধ্বনি শোনতে পেতাম। কিন্তু হরিনাথদার কোন কথাই আমি রাখতে পারিনি। কর্পোরেট দুনিয়ার মুনাফার পাহারাদার হয়ে কাটিয়ে দিলাম পুরো জীবন।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় হারিকেনের আলো কমাতে কমাতে হরিনাথ আমাদের বাড়িতে আসত। উঠানের ডান পাশে টিনের চাল এবং কাঠের নির্মিত ঘরে থাকতেন আমার দাদু। আমি তখন ঠাকুরমার সাথে আকাশের তারা গুণে গুনে ক্লান্ত নতুবা কাকুর সাথে বসে স্কুলের পড়া বুঝতাম। হারিকেন দাদুর ঘরের দরজার পাশে রেখে হরিনাথ আমায় ডাক দিত, কই কালা দা? আসো, কেচ্ছা শুনবে না। আমাদের বাড়ির সবার গায়ের রং ফর্সা, আমি একটু কালো হয়েছি। তাই হরিনাথ আমায় কালা দা বলে খেপায়। আমি রাগ করি না। হরিনাথের পেঠানো শরীর। সবসময় সাদা গেঞ্জি ও লুংগি ভাঁজ করে হাটুর কাছাকাছি পরে থাকে। হরিনাথের এইভাবে লুংগি পরা দেখে দাদু রেগে যান। কিন্তু হরিনাথ কথা শুনে না। বলে, আপনার মত করে ধুতি পরতে পারি না দাদু। হরিনাথ হারিকেন হাতে রোজ সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ি আসত। আসতেন নকুল কাকু, জগমোহন জ্যঠু। দাদুর ঘরে হারিকেনের আলোয় হরিনাথ আমাদের কেচ্ছা শুনাতো। নানা রকম কেচ্ছা। গ্রামীণ জনপদের মানুষের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনার কাব্য গানের ছন্দে বিধৃত হত এইসব কেচ্ছায়। রূপকথার কোন গল্প নয়, নয় কোন রাজা উজিরের মহান কীর্তির গল্প কিংবা রাজকুমারের শিকারে যাবার নিছক বিনোদন নয়। এতো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের চলে আসা গ্রামীণ জনপদের গাঁথা। সামন্ততান্ত্রিক শাসন প্রণালী, প্রেম বিরহের মানবিকতার কথাই বিধৃত হত হরিনাথের কেচ্ছায়। দাদুর হুক্কার গুড় গুড় শব্দে, নকুল কাকুর ঘুমের দুলুনিতে এগিয়ে যেত সেই সব কেচ্ছা। আমি তন্ময় হয়ে শুনতাম। শুনতে শুনতে আমি তলিয়ে যেতাম গভীর ঘুমে। একসময় বাবার সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ। ঘুম ভেংগে যেত আমার। বাবা রোজ এই সময় বাজার থেকে ওষুধের দোকান বন্ধ করে বাড়ি আসতেন। মা এসে আমায় নিয়ে যেতেন প্রায়ই। ঘুম ঘোরে আমি খুঁজতাম হরিনাথকে। কেচ্ছা শেষ করে সে চলে গেছে কখন। ইস তারপর কি হয়েছিল সেই ডাহুক শিকারী বিননের, যাকে সাপে কেটেছিল!

গ্রামের কারো কোন সমস্যা হলে, ডাক পড়ত হরিনাথের। কারো ঝড়ে ঘর ভেংগে গেছে, কারো মেয়ের বিয়ে কিংবা পুকুরে মাছ ধরার জন্য জাল ফেলতে হবে। হাজির হরিনাথ।

শুক্রবার দুপুরে বিলে “পলো” বাওয়া হত। হরিনাথ আমাকে তার কাঁধে চাপিয়ে” পলো” বাওয়ায় নিয়ে যেত। শীতের শেষে ও বসন্তের শুরুর দিকে যখন বিল শুকিয়ে যেত তখন শুরু হত গ্রামের “পলো” বাওয়ার উৎসব। বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতল মাছ ছটফট করত পলোর নিচে পড়ে। আমি অবাক চোখে দেখতাম রুপালী মাছেদের কোলাহল। অনেক বেপারি বসে থাকত মাছ কেনার আসায়। কিন্তু এই মাছ কেউ বিক্রি করত না। এ যে উৎসবের মাছ।গ্রামের বিত্তবানেরাও সেই মাছ খেতে চাইলে নিজ হাতে পলো নিয়ে নেমে যেতে হবে। সবুজ কচুরিপানায় আবৃত এই বিলের পানিতে বছর জুড়ে বড় হত মাছেরা। পলো বাওয়ার দিনে বিলের পারে ছিল এক রুপালী উৎসব। বছরের পর বছর এই গ্রামের মানুষদের অধিকার এই বিলের উপর। হঠাৎ খবর এলো হরিনাথ দাদারা আর বিলে মাছ ধরতে পারবেন না। খুব মন খারাপ হলো। আর যাওয়া হবে না পলো বাওয়ায়। কি সুরেলা ছন্দে হরিনাথদারা পলো বাইতেন। পলোর ঝপাং ঝপাং শব্দে একটি ছন্দ তৈরী হত। এই ছন্দ কেড়ে নিল কে? শোনলাম নদীর ওপারের কয়েকজন সমাজপতিরা আদালতের কি একটা কাগজ নাকি এনেছেন। তাই এখন বিলের নিয়মিত পলো বাওয়া বন্ধ থাকবে। কিন্তু হরিনাথ দাদারা  তা মেনে নিতে নারাজ ছিল। বছরের বছর ধরে এই বিলে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল এ উৎসব। বিল ছাড়াও গ্রামের পুব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যে নদী, সেই নদীতে নিয়মিত মাছ ধরতেন নকুল কাকুদের মত জেলে সম্প্রদায়েরা। হঠাৎ করে নদীও ভাগ হয়ে গেল। নদীর বুকেও বাঁশ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হল। নদীর মালিকানাও চলে এল সমাজপতিদের কাছে।

৩)
আমদের শৈশবের দিনগুলো রঙিন করে তুলেছিল হরিনাথ। সন্ধ্যায় তার কেচ্ছা, দাদুর হুকোর গুড় গুড়, নকুল কাকুর ঘুমচোখের দুলুনি। ভোরে ফুলচুরি, দুপুর রোদের পলো বাওয়ার মাঝে একদিন ছন্দপতন হল। একদিন স্কুল ফিরে দেখি বাড়িতে কেউ নেই। দাদু, কাকু, বাবা কেউ নেই। বারান্দায় মার চিন্তাক্লিষ্ট মুখ। পলো বাওয়ার বিলে অনেক লোকের জটলা। মা আমাকে তাড়াতাড়ি ঘরে যেতে বললেন। একটু পরে বাবা বাড়ি ফিরে এলে জানতে পারলাম হরিনাথের একমাত্র ছেলেকে কারা জানি বিলে মেরে ফেলে রেখে চলে গেছে। তারপর অনেকদিন আমাদের গ্রামে পুলিশ আসত। আমরা খুব ভয় পেতাম। হরিনাথ আর আগের মত আসত না আমাদের বাড়ি। শুধু দেখতাম, কাকু হরিনাথকে নিয়ে সদর উপজেলায় যেতেন। সন্দ্ব্যায় ফিরে আসতেন। রাতের খাবারে বসে আমি বাবা, দাদু ও কাকুর কথা শুনার চেষ্টা করতাম। দাদু বলতেন, আসামীর কিছু হবে না। ঠিক ছাড়া পেয়ে চলে আসবে। এক, দু মাস পরে হরিনাথ মাঝে মাঝে সন্ধ্যায় আবার আমাদের বাড়ি আসতো। তবে কেচ্ছাগুলো হারিয়ে গিয়েছিল। দাদুর ঘরে হারিকেনের নরম আলোয় চুপচাপ বসে থাকত হরিনাথ। দাদু তখন শোনাতেন মহাভারতের গল্প, রামায়নের গল্প। নকুল কাকু গাইতেন কীর্তন। এরপর অনেকদিন হরিনাথ আসে না। প্রতি সন্ধ্যায় আমি অপেক্ষা করি। হারিকেনের আলো নেভাতে নেভাতে হরিনাথ আর আসে না। একদিন মাকে বললাম, মা হরিনাথ দাদা আর আসেনা কেন? শাড়ীর আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মা বলেন, জানি না বাবা। কাকু, দাদু, পিসি কেউ কিছু বলেন না। এরপর একদিন স্কুল যাবার পথে সহপাঠী অশোক জানায় হরিনাথ চলে গেছে। কোথায়? হরিনাথ সীমানা পেরিয়ে চলে গেছে ওপারে। আর আসবে না? অশোক বলে, দুর পাগল যারা যায় তারা আর আসে নাকি। ঐ যে রন, পরেশ, দীপক চলে গেল, ওরা তো আর ফিরে এলো না। আমি ইতোমধ্যে প্রাথমিক স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ফেলেছি। সন্ধার পরে মাস্টার মশাইয়ের কাছে পড়তে বসি। মাস্টার মশাইয়ের কাছে একদিন শুনলাম নকুল কাকুও চলে গেছেন। হরিনাথ তার কেচ্ছা নিয়ে চলে গেল, চলে গেল পলো বাওয়ার দিন নিয়ে। হরিনাথ নিজেই হয়ে গেল এক কেচ্ছা। নকুল কাকু চলে গেলেন তার সন্ধ্যা আরতি নিয়ে। রন, পরেশরা চলে গেল বিকেলের ফুটবল নিয়ে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক কেন যায় আবার পরবাসে!!

৪)
হরিনাথের বাড়ি থেকে আমরা এবার নদীর পথ ধরলাম। দু ধারে বিস্তীর্ণ সবুজ ধানক্ষেত রেখে মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে গেছে যে সবুজ পথ, তার মাঝের সরু অংশ আবার পথিকের পদচারনায় সাদা। সেই পথ ধরেই পৌঁছলাম নদীর কাছাকাছি। সন্ধ্যার সাথে রাতের মিতালী ঘঠিয়ে বিকেল তখন নিয়েছে বিদায়। হাতের উপর মাথা রেখে এই পথের সবুজ ঘাসে শুয়ে আকাশপানে চেয়ে আছি আমরা। জোনাকীরা তখন ঘিরে ধরেছে আমাদের। রাজেশ বাতাসে উড়ায় কষ্টের ধূমায়িত নকশা। কতদিন তারা দেখি না। আকাশ ভরা তারাদের ঝিকিমিকি দেখতে দেখতে কত কেচ্ছা শুনেছি হরিনাথের মুখে। আমরা আজ দেখতে চাই শৈশবের সেই হারিয়ে যাওয়া তারা, কান পেতে শুনতে চাই নকুল কাকুর কীর্তন, হরিনাথের কেচ্ছা। দুরের নদীতে হারিকেনের আলো দেখা যাচ্ছে। মাঝিদের নৌকার আলো। এখনো তাহলে হারিয়ে যায়নি হারিকেন। একঝাঁক পাখি উড়াল দেয় মাথার উপর দিয়ে। এত দেরীতে বাড়ি ফিরছে কেন তারা? নাকি ফেরার তাড়া নেই! আমাদেরও  ফেরার তাড়া নেই। রাজেশ গান গাওয়ার চেষ্টা করে। আবার থেমে যায় কারন সে ভুল করে। রাজেশ, গীটার ছিল যার নিত্যসঙ্গি। কত সন্ধ্যায় দিবানিদ্রার সমাপ্তি হয়েছে রাজেশের গান শুনে। আজ সে বারবার গান ভুল করে। জোনাকীরা তখন আরো দূরে চলে যায়। বোধহয় অভিমান করে। আমি নিশ্চুপ থাকি। দূর নদীর মাঝিদের কন্ঠের গান ভেসে আসছে। আমি কান পেতে রই। সেই  বহু বছর আগের শোনা গান। একই রকম। সারা রাত এই মাঝিরা গান গেয়ে নদীর বুকে মাছ ধরে। সকালে বিক্রি করে দিয়ে বাড়িতে ঘুমাতে যায়। তখন বর্ণিল স্বপ্নরা ভিড় জমায় তাদের চোখে। আমি কান পেতে মাঝিদের গান শুনি। রাজেশ আবার চেষ্টা চালায় গানের। ব্যার্থ হয়। রাজেশের গান কেন হারিয়ে যায়, মাঝিদের মনে থাকে। কিংবা একটু আগে যিনি আমাদের পাশ দিয়ে হরিসেবার গান গেয়ে চলে গেলেন, তারও গান সেই ছোটবেলায় শোনা গানের মত। কাছের কোন বাড়ী থেকে ভেসে আসে উলুধ্বনি। মসজিদ থেকে আযানের মধুর সুর। এবার আমি আবার আকাশ পানে তাকাই, তারারা কোথায়? আকাশ ভরা হাজার, লক্ষ, কোটি তারা কোথায়? আমি গুনার চেস্টা করি। এক, দুই, তিন,  চার…। নাকি তারারা ঠিকই আছে, আমরা দেখতে পাই না। আমি রাজেশকে শুধাই, তারারা কোথায়? জানি না, বলে আবার ভুলে যাওয়া গানের সুর ধরে। আমি এবার উঠে দাঁড়াই। এগিয়ে যাই মাঝিদের কাছে।  রাজেশ আসে পিছু পিছু ভুল গান গেয়ে। মাঝিদের বলি, আকাশে আজ তারা নেই কেন?  কি বলেন বাবাজি, আকাশে তো আজ তারার মেলা! এই দেহেন লক্ষ তারার মেলা। আমি, রাজেশ আবার তাকাই আকাশের দিকে। গুনি, এক, দুই,তিন, চার…।

এবার ফিরবার পালা। আমরা মেঠোপথ ধরে পিচ রাস্তার দিকে যাত্রা শুরু করি। গ্রাম থেকে বেরোনোর পথেই সেই বটগাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজো। আমি স্পষ্ট শুনলাম, “অনেকদিন পরে এলে কালাদা, কেমন দেখলে তোমার নদী? শীতল পাটির বুননে বুনেছেতো তোমার জীবন? ধরতে পেরেছ সেই রামধনু ফড়িং।” না হরিদা পারিনি। রাজপথের মিছিল থেকে ছিটকে পড়া মানুষ, ফড়িঙের পেছনে আর ছুটি না। কর্পোরেট দুনিয়ার মুনাফার এক বিরাট পাহারাদার, এখন কেবল দৌড় আর দৌড়! খুব ইচ্ছে হয়, কেউ বলুক, থামো। জানিনা হরিদা, কেন রাজেশের গান ভুল হয়, কেন আকাশ ভরা আর তারার মেলা দেখি না। কেন আর খুঁজে পাইনা তোমার কাছ থেকে শোনা কেচ্ছা। কেন আর পাখিদের ঘরে ফেরার তাড়া থাকে না! আমি হঠাৎ জিজ্ঞেস করি রাজেশকে, জীবন বদল করবি মাঝিদের সাথে?

শ্যামল কান্তি ধর: ব্যাংকার, চলচ্চিত্রকর্মী।

এমন আরো সংবাদ

একটি উত্তর দিন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন !
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ সংবাদ