লিখেছেন আল্লামা আবদুল হালিম বোখারি
সহিহ হাদিস দ্বারা শবেবরাতের ফজিলত প্রমাণিত। হাদিস শরিফে শবেবরাত শব্দের ব্যবহার নেই। হাদিসের ভাষায় তা মধ্য শাবানের রজনী। হাদিসে মধ্য শাবানের রজনীতে বিভিন্ন নফল ইবাদতের কথা বলা হয়েছে। তবে আমলগুলো ব্যক্তিগত, সামগ্রিক নয়। সুতরাং তা পালন করার জন্য মসজিদে যাওয়া বা সমবেত হওয়ার দরকার নেই। একটি হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা মধ্য শাবানের রজনীতে নামাজ আদায় করো এবং দিনে রোজা রাখো। সুতরাং মুসলিমরা রাতে নামাজ আদায় করবেন এবং দিনে নফল রোজা রাখবেন। এটাই হাদিসের নির্দেশনা।
অন্য হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রাতে কবর জিয়ারত করেছিলেন। তাই এই রাতে আমরা কবর জিয়ারত করতে পারি এবং মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করতে পারি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেহেতু ঘর থেকে বের হলে নিজের ও অন্যের ঝুঁকি আছে তাই ঘরে বসেই মৃত ব্যক্তির ক্ষমা ও মুক্তির জন্য দোয়া করা যেতে পারে।
মধ্য শাবানের রজনীতে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ শবেবরাত হিসেবে নামে চেনে বা জানে। শবেবরাত অর্থ ভাগ্যরজনী। আমাদের সমাজের একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে—এই রাতে ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু কোরআন-হাদিসে এর উল্লেখযোগ্য কোনো সমর্থন পাওয়া যায় না। হ্যাঁ, একটি হাদিসে এমন পাওয়া যায়, এই রাতে আগামী এক বছরে যেসব শিশু জন্মগ্রহণ করবে এবং যেসব মানুষ মারা যাবে তাদের তালিকা প্রকাশ করেন মহান আল্লাহ তাআলা।
শবেবরাতে আমাদের দেশের মানুষ মসজিদে সমবেত হয়ে ইবাদত করেন। শবেবরাতের ইবাদত ব্যক্তিগত, সম্মিলিত নয়। তারাবির নামাজ ছাড়া অন্য কোনো নফল নামাজের জন্য মানুষকে ডাকাডাকি করে মসজিদে উপস্থিত করা—শরিয়ত অনুমোদিত নয়।
হ্যাঁ, যদি কেউ নিজ ইচ্ছায় মসজিদে আসে এবং ইবাদত করে তাকে বাধা দেওয়া যাবে না। ব্যক্তিগত ইচ্ছায় একত্র হতে হতে যদি জমায়েত সৃষ্টি হয় তাতেও সমস্যা নেই। আবার অনেকের বাড়িতে যদি ইবাদতের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকে তবে মসজিদে এসে ইবাদত করতে পারে। তবে ব্যক্তিগত নফল ইবাদত মসজিদে এসে করার চেয়ে বাড়িতে করাই ভালো। কেননা হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত কোরো না। অর্থাৎ ঘরেও ইবাদত-বন্দেগি করবে। এটা স্বাভাবিক অবস্থার কথা। আর এখন যেহেতু উলামায়ে কেরাম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জামাত ও জুমার জামাতে অংশগ্রহণ করতেই নিরুৎসাহ করছেন এবং সরকারও জনস্বার্থ বিবেচনা করে কঠোরতা আরোপ করেছে, আমি সর্বস্তরের মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানাই তারা যেন নিজ নিজ ঘরে বসে ইবাদত বন্দেগি করেন এবং সারা পৃথিবীর মানুষ যে ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি তা থেকে মুক্তির দোয়া করেন।