করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সারাদেশে জনসমাগম বন্ধের সঙ্গে ফাঁকা করা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোও। এই অবস্থায় কক্সবাজারে জনশূন্য সৈকতের কাছে যেমন ডলফিনের অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে, তেমনি কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি পয়েন্টে চলছে লাল কাঁকড়ার নয়নাভিরাম মিছিল।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯ মার্চ থেকে কুয়াকাটায় পর্যটকের আনাগোনা নিষিদ্ধ করেছে জেলা প্রশাসন। সেই থেকে কুয়াকাটা সৈকত প্রায় জনমানবহীন। নিরুপদ্রব সৈকতে সুনসান নীরবতা। আর এ সুযোগে সৈকত দখলে নিয়েছে লাল কাঁকড়ার দল।
ভাটার সময় পানি কিছুটা নেমে গেলে অসংখ্য লাল কাঁকড়া মিছিল নিয়ে ছুটছে। এঁকেবেঁকে পুরো বেলাভূমিতে যেন তারা আলপনা আঁকছে। কুয়াকাটা ও গঙ্গামতি সৈকতে এখন এ দৃশ্য নিত্যদিনের। যেন দীর্ঘদিন পর ‘বেদখল’ হয়ে যাওয়া বেলাভূমি পুনরুদ্ধার করেছে কাঁকড়ার দল।
অথচ কয়েকদিন আগের দৃশ্যও এমন ছিল না। পর্যটকের পদচারণা আর মোটরসাইকেলের চলাচলে কাঁকড়ারা লুকিয়ে থাকত গর্তে। এই সৈকতে ভাটার সময় বেলাভূমির আয়তন বাড়ে। তখন লাল কাঁকড়া বালুর নিচের গর্ত থেকে বের হয়ে আসে। যেন আলপনায় ঢেকে দেয় সৈকতের বেলাভূমি। কিন্তু দর্শনার্থী যখন ৩০-৪০ মিটার কাছে চলে আসে, তখন লাল কাঁকড়ার দল জীবন বাঁচাতে ভোঁ দৌড় দেয়। এখন পর্যটকদের ‘উৎপাত’ না থাকায় প্রকৃতির সঙ্গে প্রাণ ফিরে পেয়েছে লাল কাঁকড়াগুলোও।
গঙ্গামতির জেলে আলামিন জানান, এখন পর্যটক না থাকায় আগের মতো ১৮ কিলোমিটার সৈকতে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলছে। সকাল ও বিকেলে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়া আসে।
কাঁকড়া ও সামুদ্রিক মাছ নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিড বাংলাদেশের কুয়াকাটা জোনের মাঠ কর্মকর্তা আফজাল হোসেন জানান, কাঁকড়া আর্থ্রোপোডা পরিবারের প্রাণী। লাল কাঁকড়া এর একটি প্রজাতি। কুয়াকাটা সৈকত ও সমুদ্রে এ পর্যন্ত ৫০০ প্রজাতির কাঁকড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘লাল কাঁকড়ার কাজ হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা। ওরা বেলাভূমিতে প্রতিদিন দুবার বালু ও মাটি আলাদা করার কাজ করে। সেটা দেখতে আলপনার মতো মনে হয়। এদের রক্ষা করা সবার কর্তব্য। এদের প্রতিবেশ যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে সবার নজর দেওয়া প্রয়োজন।