লিখেছেন মুনতাসির নীরব
র্যাংক টার্নার উইকেট বানিয়ে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে। ওই উইকেটে সফল হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজরা। অবশ্য সেখানে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের স্পিন খেলার অনভ্যস্ততাও বড় ভূমিকা রেখেছে।
আবার একই ধরনের উইকেট বানিয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে উপমহাদেশের দল শ্রীলঙ্কার কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছিল বাংলাদেশ। তুলনামূলক ব্যাটিং উইকেটে চট্টগ্রামে ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু মিরপুরে জয়ের চিন্তায় র্যাংক টার্নার বানিয়ে উল্টো রঙ্গনা হেরাথের ছোবলে আড়াই দিনেই ম্যাচ হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
সেই অভিজ্ঞতা খুব বেশিদিন আগের নয়। ওই ম্যাচের পর এটুকু স্পষ্ট ছিল, অন্তত উপমহাদেশের দলগুলোর সঙ্গে টার্নিং উইকেটে খেলা নিজের বিপদ ডেকে আনার শামিলই হতে পারে। যদিও বাংলাদেশ দল অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
কারণ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে স্পিনিং উইকেটের ফর্মুলাতেই আস্থা রেখেছে বাংলাদেশ, যা পুরোপুরি বুমেরাং হয়েছে। এশিয়ান দল আফগানরা যে স্পিন খেলতে সিদ্ধহস্ত, এটা সবারই জানা। আর নেটেও দলটির ব্যাটসম্যানরা খেলে থাকেন রশিদ খানের মতো বিশ্বসেরা লেগ স্পিনারকে। তাই স্পিন সামলানোর দক্ষতায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই আফগানরা।
চট্টগ্রামে আফগানদের জন্য পাতা ফাঁদে নিজেরাই শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। রশিদ-আসগরদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্পিন ফর্মুলা যে পুরোপুরি ভুল কৌশল ছিল, তা এখন প্রমাণিত। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এই কথা না মানতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, স্পিনিং উইকেটে আফগানদের বিপক্ষে খেলার পরিকল্পনা রীতিমতো ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারা’র মতো কিছু।
হোম কন্ডিশনে বাংলাদেশের প্রধান শক্তি স্পিন। তাইজুল-নাঈম-মিরাজরা থাকলেও উল্টো পিঠটা দেখার দরকার ছিল বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের। যেখানে প্রতিপক্ষ শিবিরে রশিদ খান, জহির খান, কায়েস আহমেদ, মোহাম্মদ নবীদের নিয়ে গড়া দুর্দান্ত একটা স্পিন আক্রমণ রয়েছে আফগানদের, সেটি হয়তো আমলেই নেয়নি বাংলাদেশ দল। যার ফল হিসেবে টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের সাক্ষাতেই আফগানিস্তানের কাছে হারের গ্লানি সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের।
চট্টগ্রামে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা আফগানিস্তান ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশকে। এর মধ্য দিয়ে টেস্ট খেলুড়ে ১০টি দেশের কাছে হারের অপ্রীতিকর রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ।
অথচ আফগানদের চিন্তায় ছিল পেস আক্রমণ
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি করেছিলেন আফগানিস্তানের রহমত শাহ। ওয়ান-ডাউনে নেমে ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ওই দিনের খেলাশেষে সংবাদ সম্মেনে রহমত শাহ বলেছিলেন, আফগানরা দল হিসেবেও বাংলাদেশের পেসারদের খেলার প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ সাজিয়েছে স্পিনারদের নিয়ে।
বাংলাদেশের স্পিনাররা সাধারণ মানের কি না, জানতে চাইলে রহমত শাহ বলেছিলেন,
‘তারা মোটেও সাধারণ মানের স্পিনার নয়। বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ খুব ভালো, বিশেষ করে সাকিব আল হাসান, নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। তাইজুল ইসলাম আছে, মেহেদীও ভালো। পেসারদের খেলতে হবে, আমরা এই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু তারা শুধু স্পিনারদেরই আক্রমণে রেখেছে।’
বিসিবির বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, টেস্টের পরিকল্পনায় মিরপুর স্টেডিয়ামে হয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্টের বৈঠক। সেখানে বাংলাদেশের নতুন কোচিং স্টাফদের মতামত ছিল, দলে পেসার রাখতে হবে। কোচদের এই মতকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। একাদশে পেসার না রাখার পক্ষেই ছিল তার অবস্থান। পুরোপুরি স্পিননির্ভর আক্রমণই চেয়েছেন সাকিব। অধিনায়কের চাওয়ায় তাই আর বাদ সাধেনি টিম ম্যানেজমেন্টের বাকিরা।
যদিও স্পিন নিয়ে করা পরিকল্পনাকে ভুল মানতে নারাজ সাকিব। ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন,
‘পরিকল্পনা ঠিকমতো যদি বাস্তবায়ন হতো, তাহলে এরকম হতো না। যেহেতু পরিকল্পনা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি, তাই এরকম হয়েছে। তখন এটাই বলা স্বাভাবিক যে পরিকল্পনায় ভুল ছিল।’
অথচ ম্যাচের পরতে পরতে ছাপ রয়েছে যে, আফগানদের বিরুদ্ধে স্পিন ফর্মুলা পুরোপুরি ভুল ছিল। কারণ, বাংলাদেশের স্পিনারদের ভালোভাবে সামলেছেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। উল্টোদিকে রশিদ-নবীদের খেলতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
আফগানদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ
আফগানিস্তানের নতুন টেস্ট অধিনায়ক হয়েছিলেন রশিদ খান। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশের এসেছিলেন তিনি। আর প্রথম চেষ্টাতেই সফল আফগানদের অধিনায়ক। হোম কন্ডিশনে বাংলাদেশকে হারিয়ে গড়েছেন অনন্য ইতিহাস। ব্যাটে-বলে ব্যবধান গড়েছেন রশিদ খান। দুই ইনিংসে ব্যাটিংয়ে করেছেন ৭৫ রান, সেটা বেশ দ্রুতলয়ে। তবে বাংলাদেশকে মূল আঘাতটা তিনি করেছেন বল হাতে, দুই ইনিংসে ১১ উইকেট নিয়েছেন। তাতেই ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন রশিদ খান।
ম্যাচের পাঁচদিনই আফগানদের চাপে চিড়ে-চ্যাপ্টা হয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিরোধ, স্রোতকে ঠেলে পথ চলার চ্যালেঞ্জটা পাড়ি দিতে পারেনি সাকিব-বাহিনী। ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে গেছে আফগানরা। শেষ পর্যন্ত ওই চাপেই ভেঙে পড়েছিল বাংলাদেশ, যা বয়ে এনেছে পীড়াদায়ক এক পরাজয়।
আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংস
সাগরিকার উইকেট টস জেতাটা শাপেবর হয়েছে রশিদ খানের দলের জন্য। উইকেট র্যাংক-টার্নার বানানো হয়নি। হয়তো রশিদ-নবীদের কথা ভেবেই। প্রাথমিকভাবে উইকেট যতটুকু ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করে, সেই সময়টুকু ব্যাট করেছিল সফরকারীরা। প্রথম দিনেই কার্যত ম্যাচের লাগাম মুঠোয় নেয়ার প্রাথমিক কাজটা সেরে ফেলেছিল আফগানরা। প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে ৩ উইকেট হারালেও চতুর্থ উইকেটে রহমত শাহ-আসগর আফগান ১২০ রানের জুটি গড়েছিলেন।
তাদের জুটি ভাঙলেও আজগর ও আফসার জাজাই দলের আর বিপদ হতে দেননি প্রথম দিনে। দ্বিতীয় দিনে আফগান ব্যাটসম্যানরা ধৈর্য্যের খুঁটি ধরে রাখতে পারেননি। তবে কাজের কাজ করে গেছেন রশিদ খান, ব্যাট হাতে ৬১ বলে ৫১ রানের (২ চার, ৩ ছয়) কার্যকর ইনিংস খেলেছেন তিনি। তাতেই আফগানদের প্রথম ইনিংসের স্কোরটা ভালো অবস্থানে চলে গেছে। ৩৪২ রান তুলেছিল দল। মানসিকভাবে তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছিল এই স্কোর। রহমত শাহ ১০২, আসগর আফগান ৯২ রান করেছিলেন।
বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস
যে উইকেটে টেস্ট আঙ্গিনায় নবীন আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানরা ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়েছেন, তাইজুল-মিরাজদের স্পিনকে মুখস্ত ব্যাটিং করে সামলেছেন, পা সামনে নিয়ে আনাড়ির মতো ব্যাট ধরেছেন আসগর-আফসাররা, সেই উইকেটই বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামতেই যেন ব্যাটসম্যানদের ‘যমদূত’ হয়ে ধরা দিল।
রশিদ-নবীদের ঘূর্ণিজাদুতে দিশেহারা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীনতা, উইকেট আঁকড়ে না থাকতে পারা, প্রয়োজনীয় ধৈর্য্য প্রদর্শনে ব্যর্থ হওয়ায় ২০৫ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। সেখানেই ম্যাচের লাগাম চলে যায় আফগানদের হাতে। ১৩৭ রানে পিছিয়ে পড়ে কার্যত তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছিল বাংলাদেশ।
ইনিংসের প্রথম ওভারে বাইরের বল তাড়া করে উইকেট দিয়ে ফিরেন সাদমান ইসলাম। সৌম্য-লিটন দাসের জুটি জমে উঠতে পারতো। কিন্তু সৌম্য নবীর শিকার হন। লিটন দাস (৩৩) সেট হয়েও রশিদ খানকে ব্যাকফুটে গিয়ে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। একপ্রান্ত আগলে হাফ সেঞ্চুরি করে মুমিনুল হকও (৫২) নবীকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন; যা খুবই দৃষ্টিকটু ছিল, অন্তত এতদিন ধরে টেস্ট খেলার পরও। মিডল অর্ডারে ব্যাটিং মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের ফেরত পাঠানোর কাজটা সেরেছিলেন রশিদ খান। শেষদিকে মোসাদ্দেক ৪৮, তাইজুল ১৪ রান করায় বাংলাদেশের স্কোরটা দুইশ’ পার হয়েছিল। রশিদ খান ৫৫ রানে ৫টি, নবী ৩টি উইকেট নিয়ে মূল আঘাতটা করেছিলেন।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস
প্রথম ইনিংসে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আফগানদের চেপে ধরার আশা করেছিল বাংলাদেশ। শুরুটাও তেমনই হয়েছিল। প্রথম ওভারের তৃতীয়, চতুর্থ বলে সাকিব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইহসানউল্লাহ, রহমত শাহকে। ২৮ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হয়েছিল হাসমতউল্লাহ শাহিদীও নাঈমের শিকার হলে।
কিন্তু তারপরই প্রতিরোধ গড়েন ইব্রাহিম জাদরান ও আসগর আফগান। এই জুটি ভাঙলেও আফগানদের কম রানে আটকে রাখা যায়নি। ঠিকই আড়াইশ’ পার হয়েছিল তাদের স্কোর। চতুর্থ দিনের সকালে ২৬০ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। ইব্রাহিম জাদরান ৮৭, আসগর আফগান ৫০, আফসার জাজাই অপরাজিত ৪৮, রশিদ খান ২৪ রান করেন। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাকিব ৩টি, মিরাজ-তাইজুল-নাঈম ২টি করে উইকেট পান।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস
আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংসের পরই পরিস্কার হয়ে যায়, চট্টগ্রাম টেস্ট বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে অনেকটাই ফসকে গেছে। ততক্ষণে মনোবলও প্রায় হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। সামনে ছিল ৩৯৮ রান তাড়া করে জয়ের কঠিন চ্যালেঞ্জ। ম্যাচ বাঁচাতে প্রায় দুইদিন ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জও ছিল।
অধিনায়কের সাকিব জানিয়েছিলেন, এই টার্গেট পাড়ি দিতে, আফগান স্পিনারদের সামাল দিতে অনেক পন্থাই অবলম্বন করেছে বাংলাদেশ। সব ধরনের চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। যেমনটা নবীকে ঠেকাতে ওপেনিংয়ে লিটন-সাদমানকে পাঠানো হয়। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে কিছুটা তামাশাই করে ফেলা হয়েছে তখন। তিনে পাঠানো হয় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে। অধিনায়কের ভাষায়, প্রথম ইনিংসে লেজের দিকে ভালো করায় মোসাদ্দেককে উপরে পাঠানো হয় নিয়মিত তিনে খেলা মুমিনুলকে বসিয়ে। প্রথম ইনিংসেও অবশ্য মুমিনুলের জায়গায় লিটনকে পাঠানো হয়েছিল।
ব্যাটিং অর্ডার বদলানোর কৌশলটা ছিল ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন ধরে রাখতে। এমন সিদ্ধান্তের কারণে ব্যাটসম্যানদেরকেও কিছুটা হয়তো নড়বড়ে করে দিয়েছেন অধিনায়ক। সেটি হয়তো ভেবে দেখেননি তিনি, কারণ তিনে ব্যাট করা মুমিনুল পাঁচে নেমে ৩ রান করে ফিরে গেছেন। তিনে আসা মোসাদ্দেক রীতিমতো অপরাধ করেই ফিরেছেন, ১২ রান করে হঠাৎ তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। মুশফিক, মুমিনুল রশিদ খানের শিকার হন। একপ্রান্ত আগলে ৪১ রান করা সাদমান থামেন নবীর বলে। রানখরায় থাকা মাহমুদউল্লাহ ৭ রান করে ফিরেছেন। চতুর্থ দিনের বিকেলে বৃষ্টি, আলোর স্বল্পতায় যখন খেলা বন্ধ হয় ব্যাটিংয়ে থাকা কম্পমান বাংলাদেশকে ডাকছে বড় হার। সাকিব-সৌম্যর প্রতিরোধে গোটা দিন কাটানোর আশাও ফিকে হয়ে গিয়েছিল।
পঞ্চম দিনে আর্শীবাদ হয়ে এসেছিল বৃষ্টি। সাগরিকায় বৃষ্টি থামলে দুপুর ১টায় শুরু হয় খেলা। ১৩ বল পরই আবার নামে বৃষ্টি। দুরন্ত, প্রাপ্য জয়ের অপেক্ষায় তখন আফগানিস্তান। মাঠকর্মীদের চেষ্টায় শেষবেলায় (বিকেল ৪টার পর) ১৮.৩ ওভার খেলার সময় পাওয়া যায়। মিনিটের হিসেবে তা ৭০ মিনিট।
এই সময়টুকু পাড়ি দিলেই হয়তো ড্র হতো ম্যাচ। যদিও আগের চারদিনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বলে ড্র বেমানানই হতো। বাংলাদেশকে শাসন করা আফগানদের জয়টাই ম্যাচের প্রাপ্য ছিল।
পীড়াদায়ক বিষয় হলো, বৃষ্টির বদন্যতায় পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
কফিনে পেরেক ঠোকার কাজটা শুরুই করেছেন অধিনায়ক। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হতেই প্রথম বলে ফিরেছেন সাকিব। জহির খানের বাইরের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৪৪ রান করেছেন তিনি। তারপর মিরাজ-তাইজুলরাও বাংলাদেশের ত্রাতা হতে পারেননি, রশিদ খান ফিরিয়েছেন তাদেরকে। নাঈম হাসানকে নিয়ে সৌম্যর চেষ্টা স্থায়ী হয়নি। দিন শেষের ৩.২ ওভার আগে রশিদ খানের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন সৌম্য।
তাতেই যবনিকা পাত হয় চট্টগ্রামে আফগানদের কাছে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণের হতাশাব্যঞ্জক এক দৃশ্যের মঞ্চায়ন। ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। দিগন্তজোড়া হাসির সন্ধান পায় জয়ের সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লড়াই করে যাওয়া আফগানিস্তান শিবির।
টেস্টই মনে হয়নি বিসিবি সভাপতির
দল, একাদশ গঠন, ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতার মতো ক্রিকেটীয় বিষয়ে ধারাবাহিকভাবেই গণমাধ্যমে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সও এত ধারাবাহিক নয়, যতটা বোর্ড সভাপতি ক্রিকেটীয় খুঁটিনাটি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সরব।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট চলাকালীনও বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি। ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে বেজায় চটেছেন পাপন। বিরক্তির স্বরে বলেছেন,
‘(ব্যাটসম্যানদের দেখে) আমার মনেই হয়নি যে, এটা একটা টেস্ট হচ্ছে।’
বোর্ড সভাপতির এই বক্তব্য নেহায়েত ভুল নয়। দলের দায়িত্বশীল ব্যাটসম্যানদের ‘বালকসুলভ’ অপরিণত ব্যাটিং সবার মনেই এমন প্রশ্নের অবতারণা করেছিল। তবে আফগানদের কৃতিত্ব দিতে ভুল করেননি বিসিবি সভাপতি। বলেছেন,
‘পারফরম্যান্সের কথা যদি বলেন তাহলে আমি অবশ্যই বলবো, কৃতিত্ব অবশ্যই আফগানিস্তানের। কারণ, তারা টেস্টের মতো করে ব্যাট করেছে। তাদের একজন সেঞ্চুরি করেছে, অন্যরা আশি-নব্বই করে রান করেছে। আমাদের অন্য সব বাদ দিলাম; সাকিব, মুশফিক, রিয়াদরা যদি পঞ্চাশও করতে না পারে, তাহলে আমাদের ওই ম্যাচ জেতার কোনো সম্ভাবনা নাই।’
একাদশে পেসার না থাকা, ম্যাচের পরিকল্পনায়ও গলদ দেখছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেছেন,
‘প্রথম কথা হচ্ছে, পেসার কই? বিশ্বকাপে ওদের সঙ্গে স্পোর্টিং উইকেটে খেলেছি। হঠাৎ করে উল্টো পরিবর্তন কেন? এসব পরিকল্পনা কে করেছে, আমাকে জানতে হবে। অবশ্যই ওদের (বাংলাদেশ) যে পরিকল্পনা ছিল, আমার মনে হয়, সেটায় ভুল ছিল, বা চিন্তাধারায় ভুল ছিল।’
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন দাস, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের শট সিলেকশন নিয়েও কথা বলেছেন পাপন। তাদের উইকেট ছুঁড়ে আসা দেখে ক্ষুব্ধ বোর্ড সভাপতি। তিনি বলেছেন,
‘প্রথম ইনিংস যদি আপনি দেখেন, সেট হয়ে যাওয়ার পর লিটন দাস যে শটটা খেললো! মুমিনুল পঞ্চাশ করার পর কই একশ-দেড়শ করবে, সে হলো টেস্ট স্পেশালিস্ট, সে যে শটটা খেললো! রিয়াদ যে শটটা খেললো, তাকে টেস্ট খেলা বলে না। ওদেরকে এখন কি বোঝাতে হবে, টেস্ট কীভাবে খেলতে হয়? ওরা (আফগানিস্তান) যদি ৩৭০ রান করে, তাহলে বাংলাদেশ যে দল, তাতে আমাদের ৫০০ করা উচিত। এটা মোটামুটি ব্যাটিং উইকেট ছিল, এখানে না পারার কোনো কারণ নেই।’