লিখেছেন মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
মাত্র দুই বছর আগে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ এখন স্মার্টফোন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে।
গত বছর যতো স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬২ শতাংশ উৎপাদিত হয়েছে বাংলাদেশে স্থাপিত কোনো না কোনো কারখানা থেকে।
চলতি বছরের মধ্যে বাজারে স্মার্টফোনের চাহিদা দেশীয় কারখানা থেকেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন স্থানীয় মোবাইল কারখানা মালিকরা।
তারা বলছেন, এখনো বিদেশ থেকে বৈধ পথে কিছু স্মার্টফোন আমদানি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অবৈধ পথে আসছে আরও কিছু স্মার্ট ডিভাইস। তবে সব কিছুর ওপরে এ বছরের মধ্যে তারা দেশের চাহিদার সমান সংখ্যক স্মার্ট হ্যান্ডসেট উৎপাদনে সক্ষম হবেন।
তবে বেসিক ফোন বা ফিচার ফোনের ক্ষেত্রে এখনো কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন স্থানীয় উদ্যোক্তারা। তাদের হিসাব অনুসারে আরও কিছু সময় লাগবে বেসিক ফোনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা পেতে। তবে সব কিছুর ওপরে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশের রপ্তানির ঝুড়িতে হ্যান্ডসেটকে যুক্ত করা যাবে বলে মনে করেন তারা।
২০১৯ সালে দেশে সব মিলিয়ে ৫৪ লাখ স্মার্টফোন উৎপাদিত হয়েছে। আরও ২৪ লাখের মতো হয় বৈধ পথে আমদানি হয়েছে, নয়তো অবৈধভাবে দেশে ঢুকেছে।
এর বাইরে গত বছর দেশে ফিচার ফোন বা বেসিক ফোন বিক্রি হয়েছে আরও ২ কোটি ৫১ লাখ পিস। যার মধ্যে স্থানীয় কারখানায় উৎপাদিত হয়েছে এক কোটি ৪২ লাখ পিস সেট।
দেশে এখন সব মিলে নয়টি মোবাইল ফোন কারখানা আছে। এর মধ্যে বড় পাঁচটি ব্র্যান্ড আছে যারা এখন আর কোনো স্মার্টফোন আমদানি করছে না। দুটি দেশীয় কোম্পানি ওয়াল্টন এবং সিম্ফোনি ছাড়াও চীনের তিনটি কোম্পানি ট্রানশেন হোল্ডিং, ভিভো এবং ওপ্পোও আর কোনো স্মার্টফোন আমদানি করে না। বরং যন্ত্রাংশ আমদানি করেই দেশের বাজারে তাদের চাহিদা মেটাচ্ছে।
নানা দিক থেকে এই কোম্পানিগুলোর তুলনায় এগিয়ে থাকা স্যামসাং তাদের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশ স্থানীয় কারখানায় উৎপাদন করছে। যেহেতু স্যামসাংয়ের খুবই উচ্চমানের কিছু স্মার্টফোন আছে যেগুলো এখনো এই কারখানায় উৎপাদিত হয় না সেগুলো তারা আমদানি করেন বলে জানিয়েছেন স্যামসাংয়ের স্থানীয় প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফেয়ার গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন।
“স্থানীয় উৎপাদকরা ইতোমধ্যে বেশ চমৎকার কাজ করেছে যেটি সামনের দিনের পথ চলাকে সহজ করবে,” বলেছেন মেজবাহ।
ট্রানশন তাদের দুটি ব্র্যান্ড টেকনো এবং আইটেল মিলিয়ে মাসে ৯০ হাজার পিস স্মার্টফোন উৎপাদন করছে। মাসে সব মিলে তাদের কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে সাড়ে চার লাখ পিস হ্যান্ডসেট। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে তারা আর কোনো হ্যান্ডসেট আমদানি করছেন না বলে জানিয়েছেন, ট্রানশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক।
দাম ও মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটগুলো অনেক ভালো হচ্ছে বলে মনে করেন রেজওয়ান।
সিম্ফোনিও গত জুনের পর থেকে স্মার্টফোন আমদানি বন্ধ রেখেছে। বেসিক বা ফিচার ফোন তাদের কারখানায় উৎপাদিত হলেও এখনো তারা কিছু বেসিক ফোন আমদানি করছেন বলে জানিয়েছেন, সিম্ফোনির মূল কোম্পানি এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহিদ।
ট্রানশান এবং সিম্ফোনি দুটি কোম্পানির এখন একটি করে থাকলেও তারা ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরির জন্যে কারখানা করতে যাচ্ছে।
মূলত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রথম বাংলাদেশে হ্যান্ডসেট তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর শুল্ক কমানো হয়। একই সঙ্গে আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে সরকার।
আর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসে স্মার্টফোন আমদানি শুল্ক ৩২ শতাংশ থেকে এক লাফে ৫৭ শতাংশ করে দেওয়া হয়। যার ফলে চলতি বছরের শেষের দিকে কারখানা তৈরি করে ভিভো এবং ওপ্পো।
এর বাইরে ফাইভ-স্টার, ইউনস্টার এবং লাভাও দেশে কারখানা স্থাপন করে হ্যান্ডসেট তৈরি করছে।
আরও দুটি চীনা কোম্পানি শাওমি এবং হুয়াওয়ে বাংলাদেশে হ্যান্ডসেট কারখানা তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছরের শেষে দেশে কার্যকর থাকা মোবাইল সিমের সংখ্যা ১৬ কোটি ৬৪ লাখ। এর বিপরীতে প্রায় ১০ কোটি হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা হয় বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।