লিখেছেন আলিফ আলম
আজ আমার বরের গোপন আর দ্বিতীয় বউ লুকিয়ে আমাকে দেখতে আমার বাসায় এসেছিল আমাদের এক পরিচিত খালার সঙ্গে। খালা তাকে তার কাছের কেউ বলেই আমার সাথে প্রথম পরিচয় করিয়ে দিলেন। বোরখায় আবৃত থাকায় তার চেহারাটা ঠিক কেমন তা স্পষ্ট বুঝা যায় নি।
তবে কেবল এটা খেয়াল করলাম তার ভারী কাজলে ঘেরা বড় বড় এক জোড়া চোখ খুব অস্থিরভাবে আমাকে আর আমার ঘরের সব কিছুকে খুব তাড়াতাড়ি পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে আজ সকাল থেকেই আমি ব্যস্ততায় ডুবে আছি। কাল আমার বরের বাড়ি ফেরার কথা। ব্যবসার কাজে তাকে প্রায়েই বাইরে যেতে হয় । তার পছন্দের খাবার বানিয়ে যেই শেষ করলাম ওমনি দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি পরিচিত সেই খালা আর ওনার সাথে বোরখায় আবৃত এক মহিলা। আমার সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না বলে খালা আমাকে দেখতে এসেছেন বললেন। তাই আমি অনেক ব্যস্ত থাকার পরেও খুশীই হয়েই তাদের অল্প বিস্তর আপ্যায়ন করে বিদায় দিলাম।
পরদিন সকাল বেলা হঠাৎ সেই খালার ফোন এল। ওনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম গতকাল যে আমার বাসায় ওনার সাথে এসেছিল ওনি আমার বরের হঠাৎ গোপনে বিয়ে করা দ্বিতীয় পক্ষ ! প্রথমে খবরটা আমার বিশ্বাস হয়নি পরে তাদের ঘরোয়া বিয়ের কিছু ছবি দেখে আমি নিশ্চিত হলাম। আমাদের বিয়ের বয়স প্রায় ১৬ বছর চলছে। ছেলে-মেয়ে দুজনেই এখনও ছোট। বরের ব্যবসা আর আমার কাজের পয়সার কারণে অভাবের চেহারা তেমন চোখে দেখা হয়নি ।
এক বিশাল বাড়িতে আমার বর আমাকে রেখেছেন। বোগেইনভিলিয়া ফুলে ছেয়ে থাকে আমার বাড়ির মূল ফটক। বাড়ির কোথাও কোন অশান্তির ছাপ নেই। সুখ যদিও আপেক্ষিক তবে নিজেকে আমি এতদিন সুখীই ভাবতাম। ফোনটা কেটে চারপাশে তাকাতেই সব কিছু কেমন যেন অপরিচিত মনে হতে লাগল। আমার এত দিনের পরিচিত আর চেনা সংসারের সাথে আমার যোগাযোগের তারটা যেন ছিঁড়ে গেল। আমার ঘর-দুয়ার, প্রিয় জিনিসপত্র সবকিছুই আমার কাছে অচেনা মনে হল।
আমি কখনও ভুল করেও বুঝতে পারিনি যে এমন কিছু হচ্ছে ভিতরে ভিতরে। বরের বুকে প্রতিরাতে মাথা রেখে ঘুমানোর সময় কখনও টের পাইনি আমি যে ওর বুকের ভিতরে অন্য আর এক জন খুব গোপনে বাসা বেঁধেছে ! যে সংসারকে আমি আমার গভীর মমতায় সকাল থেকে রাত অব্দি আগলে রেখেছি হঠাৎ মনে হল আমি যেন সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিটকে পড়ছি। বরকে সন্দেহই বা করি কি করে, সে অবকাশও সে রাখিনি। সব কিছুই তো ঠিকঠাক চলছে ।
গেল মাসে আমার নামে একটা জমি কিনেছে ও। বিশাল বড় জায়গা নিয়ে জমিটা, পুরোটা জমি একবার হেঁটে ঘুরে দেখলে হাঁফ ধরে যাবে যে কারও। পুরনো মাটির কারণে জমিটাকে একটু পরিত্যক্ত মনে হলেও ফের মাটি ফেললে এ জমির চেহারা নিমিষে বদলে যাবে। বর্তমান বাসাটা আজকাল একটু পুরনো লাগে। তাছাড়া ছেলে মেয়েও বড় হচ্ছে, ওদের কথা ভেবেই জমিটা কিনা হল। নিজের মত করে, নিজের নকশা অনুযায়ী একটা বড় বাড়ি করার ইচ্ছে আমাদের বহুদিনের।
সারাদিনের ক্লান্তিতে আজ খুব ক্লান্ত লাগছে শরীর। ঘড়িতে তখন বিকেল গড়িয়েছে। বর আসার সময় হয়ে গেছে। ও বাড়ি ফিরলে আমার কি করা উচিত জানি না। আজ কি তুমুল ঝগড়া করব নাকি চুপ করে ঠাণ্ডা মাথায় ওর কাছে থেকেই সব জানতে চাইব। কিছুক্ষণ পরেই কলিংবেলের আওয়াজটা কানে এল। দরজা খুলতেই দেখি এলো চুলে ক্লান্ত চেহারা নিয়ে বর দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে একটা ক্লান্ত হাসি দিয়ে ঘরে ঢুকল।
বর যখন গোসল নেবার জন্য বাথরুমে ঢুকল ঠিক তখন এক প্রকার অস্বস্তি নিয়েই তার মোবাইলটা হাতে নিলাম যা আমি এর আগে কোনোদিন করার প্রয়োজন মনে করিনি। আপনি কি ভাল ভাবে পৌঁছেছেন ? মেসেজটা মোটা দাগে আমার চোখে পড়ল। কে এই মেসেজ পাঠাল তা আর বুঝতে দেরি হল না আমার।
নিজেকে আমি অনেকক্ষণ সামলালেও এখন আমি আর পারছিনা । শোবার ঘরে তাকে একা পেয়ে রাগে, কষ্টে আর অস্থিরতায় আমার পা দুটো তখন কাঁপছে, দম আটকে আসছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে আমার কথা ছিল।
-চোখের সামনে থেকে খববের কাগজ সরিয়ে ক্লান্ত চোখে আমার দিকে চেয়ে বলল, বলো ।
‘আপনি কি ঠিক ভাবে বাড়ি পৌঁছেছেন ?’ -এমন কথা লিখার মত কি কেউ রয়েছে তোমার আমি ছাড়া ? কথাটা শুনার সঙ্গে সঙ্গে সে যেন একটু ধাক্কা খেল, একটু অবাক ও হল যেন।
-কি বলো এসব! কে আমাকে মেসেজ করবে। পরিচিত কত মানুষ আছে আমার। কেউ হয়ত লিখেছে। অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাও।কাল সকাল সকাল উঠতে হবে। অনেক কাজ কাল আমার। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে, -এ কথা বলে সে চুপ করে গেল।
নীরবতাও যে নিরবে অনেক কথা বলে তা আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম তবুও তাকে শান্ত ভাবে বললাম ,তুমি আইনগত ভাবে এখনও আমার আর তোমার সব কিছু জানার অধিকার আমার রয়েছে। আমি জানতে চাই কে সে মানুষ যে আমার সংসারে অন্যায় ভাবে প্রবেশ করেছে। আমার এ কথা শুনে সে এবার সত্যিই খুব রেগে গেল। অনেক কথা কাটাকাটির পর ও সে যে গোপনে বিয়ে করেছে তা সে একেবারেই মানতেই চাইল না। খালার পাঠানো বিয়ের ছবি গুলো যখন তাকে দেখালাম তখন সে একদম দমে গেল। আমার মনে তখন চলছে তুমুল ভাংচুর।
তার কাছে গিয়ে তার শার্ট খামচে ধরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কিছুই জানতে চাইনা শুধু জানতে চাই আমার অপরাধ কোথায়? কেন এমন করলে আমার সঙ্গে ? আমি তো আমার পুরো সত্ত্বা দিয়ে তোমায় ভালবেসেছি । আমার গভীর মমতা দিয়ে আমি তোমার সংসার করেছি ।
__ হ্যাঁ, আমি জানি তুমি তা করেছ।
__ তাহলে আমাকে বল আমার কি অপরাধ ? অপরাধ থাকলে আমি এখনই তোমার সংসার ছেড়ে চলে যেতে চাই।
__ তোমাকে কেউ তোমার সংসার থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে না।
__ মন থেকেই তো তাড়িয়ে দিয়েছ এবার সংসার থেকে তাড়ালে কি বা ক্ষতি হবে। কিছুই হবে না। আমার কথা না হয় নাই ভাবলে, বাচ্চাদের কথাও তোমার মনে পড়ল না এমন কিছু করার আগে?
__ আমার বাবা কি আমাদের কথা ভেবেছিলেন সেদিন! হ্যাঁ, আমার বাবাও মাকে রেখে এমনটা করেছিলেন। তখন আমারা অনেক ছোট, কিছুই বুঝতাম না শুধু দেখতাম মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদত। বড় হবার পর জেনেছি তবে ততদিনে বাবা পরিবারের সদস্যদের চাপে ঐ মহিলার সঙ্গে খুব বেশীদিন সংসার চালাতে পারিনি। তাই মায়ের সংসারটা টিকে যায়। সব কিছু আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
– বাবা এমন করেছেন বলে তুমিও করবে ?
– যদি আমি আমার বাবার মত হই তবে তা বংশগত। এতে আমার কোন হাত নেই। বাবা মায়ের ভাল মন্দ গুন তাদের সন্তানরা পায়। জানো তো। আমি এর চেয়ে বেশী কিছু বলতে পারব না। আমি জানি না এই ব্যাপারটা কিভাবে হয়ে গেছে তবে ঘটে গেছে। ঘটনা যখন তার নিয়ন্ত্রণ হারায় তাই দুর্ঘটনা। তুমি খুব ভাল করে জান যে আমি খোলা মেলা কথা বলতে ভালবাসি। যা হবার হয়ে গেছে। তা আর বদলানো যাবে না।
আমি মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আমার বরের কথা গুলো শুনে যাচ্ছিলাম। তাদের পরিবারের এমন নিরব ইতিহাস আমার জানা ছিল না। খুব স্বাভাবিকভাবে সে কথা গুলো বলছিল। তার চোখে কোন অপরাধ বোধ নেই। কিছুক্ষণ পর সে নিজে থেকেই বলে উঠল, তুমি যা শুনেছ তা ঠিক। আমারা বিয়ে করেছি। এতদিন গোপন ছিল ব্যাপারটা তবে আজ থেকে তা আর গোপন রইল না। তার জন্য আলাদা বাসা ভাড়া করা হয়েছে। আমি দুই পক্ষের সঙ্গেই সমান ভাবে থাকতে চাই যদি তাতে তোমার কোন আপত্তি না থাকে।
এরপর থেকেই নিজের সঙ্গে আমার বুঝা পড়া শুরু হল তবে মনের ভাঙ্গনটা কোনভাবেই আর রোধ করা গেল না। মনের ঝড় সবকিছু ভেঙ্গে চূড়ে সব এলোমেলো করে দিয়েছে। রাত গড়িয়ে তখন অনেক গভীর। আমার এতদিনের চেনা মানুষ যে কিনা আমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থেকে আমার হৃদয় ছুঁয়ে থাকত তাকে কিনা অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করতে হবে ! এ আমি মানতেই পারি না।
আমি এখন কি করব ? চিৎকার করে কান্নাকাটি করে সবাইকে জানিয়ে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করব নাকি ওকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিব, দিলেও কোন অসুবিধা নেই কারণ বাড়িটা আমার নামে। মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লে দুই হাত দিয়ে যেমন আকাশ ঠেকাতে না পারার কষ্ট হয় আর ভীষণ অসহায় লাগে আমারও এমন লাগছে। সমাজকে কি করে সামলাবো, বাচ্চাদেরকে কি বলব আর নিজেকেই বা কি করে বুঝাব ?
সারাদিন এত ধকল সয়েছি যে অবসন্ন মন আর শরীরকে আর টানতে পারছি না। দম আটকে আসছে আমার। খুব কষ্ট করেই কথাটা বের হল মুখ থেকে- পৃথিবীতে মেয়েরা সব ভাগ করতে পারলেও তার স্বামীকে কেউ অন্যের সঙ্গে ভাগ করতে পারে না। আমার স্বামী দরজা বন্ধ করে কাউকে সময় দিবে তা আমার সইবে না গো। এই বদ্ধ দরজা আমার চোখের সামনে কিংবা আমার চোখের আড়ালেও আমার সইবে না। এ এক গভীর ভালবাসার যন্ত্রণা। এ যন্ত্রণা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। আমার অনেক অনুরোধের পরেও ও তার নিজের সিদ্ধান্তে অটল রইল। সেদিনের পর থেকেই আমারা আলাদা হয়ে যায়। মন আলাদা হয়ে গেলে অন্য কোন কিছু আলাদা করার প্রয়োজন পড়ে না। সব এমনিতেই আলাদা হয়ে যায়। ভাগ্যিস আমার চাকরিটা ছিল আর বাড়িটা আমার নামে নইলে আমাকে এক নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হত হয়ত।
এ ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে সব জানাজনি হয়ে গেল। আগ্রহী মানুষজন দুই চোখ আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখতে আসে। কেউ সান্ত্বনা দেয় আবার কেউবা সান্ত্বনা দেবার ভান করে। আড়ালে আমাদের নিয়ে অনেক কথা চলে । কেউ কেউ বলে যে আমার অবশ্যই কোন দোষ রয়েছে, তা না হলে কি আমার স্বামী অন্য কাউকে বিয়ে করে। যারা অন্যের দুঃখ কষ্টকে তাদের বিনোদন ভাবে তাদের জন্য আমরা সত্যিকারের বিনোদন হয়ে উঠলাম।
বাইরের দেশে বউকে রেখে যদি কেউ লুকিয়ে বিয়ে করে তবে এ অপরাধে তার জেল হয়। আমাদের দেশে যদিও এমনটা হয় না বরং এ ধরণের অপরাধকে সহ্য করার এক বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করা শিখতে হয়। তাই আমাকেও এ অন্যায় সহ্য করার এক বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করা শিখতে হল। আমাকে শিখতে হল কি করে সমাজের নানা কটু কথা সহ্য করে কিংবা উপেক্ষা করে বাচ্চাদের নিয়ে একা হতে হয়। আমাকে শিখতে হল কি করে স্বামীকে ভাগ করতে হয়।
বাচ্চারা যখন ঘুমিয়ে যায় তখন প্রতি রাতে আমার জন্য এক বিষাদময় রাত নেমে আসে। জালানা দিয়ে চাঁদের আলো এসে আমার শূন্যবিছানা দখল করে নেয়। কোন কিছুতেই আমার ঘুম আসে না। আমার চোখে শুধু একটা বদ্ধ দরজা ভেসে উঠে যে দরজার আড়ালে কেউ ঠিক তার মত করে আমার ভালবাসার মানুষকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় , তার চুলে বিলি কাটে তারপর শরীরের উপর শরীরের ছাপ ফেলে গভীর অন্ধকারে ডুবে যায়। আর আমি প্রায়ই ঘুমকে বিদায় দিয়ে অস্থিরভাবে পায়চারি করি। কখনও বা জায়নামাজে আমার ভারী , অস্থির মন নিয়ে সেজদায় ঢলে পড়ি। জীবনে কখনও কখনও এমন মুহূর্ত আসে তখন উপরওয়ালা ছাড়া আর কাউকে আপন মনে হয় না।
প্রাকৃতিক নিয়মেই পৃথিবীতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরণের কষ্টের তীব্রটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এক বছর হয়ে গেল আমারা আলাদা আছি। বাচ্চারাও এর মধ্যে অনেক কিছু মানিয়ে চলতে শুরু করেছে। আমিও কিছুটা সামলে উঠেছি। হঠাৎ একদিন খবরটা পেলাম যে আমার স্বামীর নতুন সংসারটা ভেঙ্গে গেছে। যে মহিলা তার এক বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে আমার সংসার ভেঙ্গেছে সে এখন অন্য কারও সঙ্গে সংসার গড়ার পথে।
এ এক বছরে আমার স্বামী বহুবার আমার কাছে এসেছে কিন্তু আমি তাকে মন থেকে কখনও মেনে নিতে পারিনি। যে শরীরে অন্য কোন নারীর ছাপ আর গন্ধ লেগে থাকে সে শরীর আর ভালবেসে আগের মত আকর্ষণ করে না । তাই তার সঙ্গে আর আগের মত হতে পারিনি । বিশ্বাস একবার মরে গেলে ভালবাসাও যে মরে যায়। বিশ্বাস খুব শক্তিশালী আবার খুব ভঙ্গরও যা একবার ভেঙ্গে গেলে বারবার ভেঙ্গে যেতে চায় । তাকে আর আগের মত জোড়া দেয়া যায় না। তবে সংসারে একবার বাঁধা পড়লে এর বেড়াজাল থেকে নিজেকে একবারে সরিয়ে রাখা যায় না শুধু অনেক কিছুকে উপেক্ষা করে চলতে হয়।
বাচ্চারা বাবাকে খুব করে চাই বলে ওদের কথা ভেবে আবার আমারা এক সাথে থাকতে শুরু করলাম। যদিও আমার স্বামী তার ভুল বুঝতে পেরেছে অনেক আগেই কিন্তু এ ভুল বুঝতে পারা দিয়ে কিছুই আসে যায়নি কারণ যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। আমার স্বামীর অনেক অর্থ সম্পদের জন্যেই ঐ মহিলা আমার স্বামীর সঙ্গে জড়িয়েছিলেন।
আমার ভাঙ্গা মনকে ভাল রাখার জন্য অনেক কিছুই করেছি আমি। দেশ-বিদেশ ঘুরেছি, যখন যা ইচ্ছে তাই করেছি তবুও মনটাকে তেমন করে আজও গোছানো যায়নি। সমাজের চোখে আমারা এক হলেও আমরা জানি আমরা আর আগের মত করে সহজ হতে পারিনি। খরস্রোতা নদী তার স্রোত হারালে যেমন গতিহীন হয়ে খুব শান্ত ভাবে বয়ে চলে আমারাও ঠিক তেমন আমাদের সংসারে বয়ে চললাম। ঝড় যেমন হঠাৎ এসে সব ভেঙ্গে চূড়ে, সব এলোমেলো করে দিয়ে আবার চলে যায়। শুধু সে চলে যাবার আগে তার ধ্বংসলীলা আর দাগ রেখে যায়। সেই মেয়েটাও আমাদের সংসারে ঝড়ের মত এসে সব কিছু উলট-পালট করে দিয়ে চলে গেল শুধু যাবার আগে তার ধ্বংসের যজ্ঞ রেখে গেল ।