যৌন হয়রানির অভিযোগে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) তিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান থানায় সম্প্রতি মামলাটি দায়ের করেন সিটি ব্যাংকের সাবেক সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরা সুলতানা পপি।
গুলশান থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এসএম কামরুজ্জামান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারীর লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করে ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, হেড অব সিএসআরএম আবদুল ওয়াদুদ ও বোর্ড সেক্রেটারি কাফি খান।
অভিযোগের প্রসঙ্গে মামলার বাদী মনিরা সুলতানা পপি গণমাধ্যমকে বলেন, আসামিরা আমাকে প্রতিনিয়ত ইভটিজিং করতেন। তাদের কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় আমাকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এমনকি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন তার কাছে ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুতির চিঠি পাঠানো হয়। বাদী আরও বলেন, আমার সঙ্গে এ তিন কর্মকর্তার কুরুচিপূর্ণ আচরণের বিষয়টি বহু আগেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জানিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো ফল পাওয়ায় আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪০৬/৫০৬ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে। যেখানে শ্লীলতাহানি ও শ্লীলতাহানিতে সহায়তা প্রদান করা এবং অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও হুমকি প্রদর্শনের অপরাধের কথা উল্লেখ আছে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, ব্যাংকে যোগদান করার পরপরই এমডি মাসরুর আরেফিনের নিয়মিত ইভটিজিংয়ের শিকার হন তিনি। তবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ হওয়ায় তার এমন আচরণ সহ্য করেই তাকে কাজ করতে হয়েছে।
মামলার অপর আসামি আবদুল ওয়াদুদ গাড়িতে লিফট দেয়ার নাম করে ২০১১ সালে তার ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে বসেন। লিফটের ভেতরে, সিঁড়িতে অফিস চলাকালীন তার হয়রানির শিকার হতে হয়। এ ঘটনা নিয়ে বোর্ড মিটিংও হয়।
এ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে একই ফ্লোরে কাজের পরিবেশ নেই জানানোর পর সেপ্টেম্বরে মনিরা সুলতানাকে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর ৩১ ডিসেম্বর ডিএমডি (অপারেশন) মাহিয়া জুনেদ এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাকে চাকরি খুঁজতে বলেন। পরবর্তীতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে দেখা করে অন্যত্র চাকরি খুঁজতে বলার কারণ জানতে চাইলে এমডি ব্যক্তিগত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার কথা অনুযায়ী না চলা এবং নোংরা আবেদনে সাড়া না দেয়া ও দুর্নীতিগ্রস্ত ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় জড়িত না থাকাই আমার অপরাধ।
এজহারে বাদী আরও দাবি করেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে লাকি শিপ বিল্ডার্সকে বিপুল অঙ্কের লোন দেয়া হয়। এ প্রতিক্রিয়ায় বাদীতে যুক্ত হতে বলা হয়। কিন্তু বাদী রাজি না হওয়ায় তাকে ব্যাংকের রোষানলে পড়তে হয়।
২১ জানুয়ারি বোর্ড সেক্রেটারি আমাকে ডেকে আমাকে অফিসে অফিসের ঢুকতে নিষেধ করেন। এমডি মাসরুর আরেফিন, আবদুল ওয়াদুদ, কাফি খান আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন। সরাসরি গায়ে আপত্তিজনকভাবে হাত দেয়া, কটূক্তি ও লালসার শিকার বানানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তারা আমার দীর্ঘ ১৭ বছরের কর্পোরেট ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেন বলে এজহারে বাদী অভিযোগ করেন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী মনিরা সুলতানা বলেন, অনেক আগেই এ বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করেছি। ১০ জুলাই গুলশান থানায় জিডিও করি। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলার কারণে দিনভর থানায় বসিয়ে রেখেও পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করি। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে পুলিশ রবিবার মামলা নিতে বাধ্য হয়।
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, মনিরা সুলতানার বিরুদ্ধে অসদাচরণ, চাকরিবিধি লঙ্ঘন ও ব্যাংকের গাড়ি অপব্যবহারের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। যুক্তিসঙ্গত কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু এখন তিনি মামলার মাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছেন। নিজেরা উচ্চ আদালত থেকে ইতোমধ্যে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
মাসরুর আরেফিন আরও বলেন, মনিরা সুলতানার কাছে ব্যাংকের ৮০ লাখ টাকা পাওনা। এ টাকা না দেয়ার জন্যই তিনি মামলার নামে নাটক সাজিয়েছেন।
মামলার অপর আবদুল ওয়াদুদও মামলার পুরো অভিযোগটি মিথ্যা দাবি করে বলেন, আমার অফিসের পুরোটাজুড়ে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এ অবস্থায় কারও গায়ে হাত দেয়া বা যৌন হয়রানির কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
তবে, বোর্ড সেক্রেটারি কাফি খানের বক্তব্য জানতে চেয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।