আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ কানাডা উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত। ৩৮.১৭ শতাংশ ফরেস্ট এলাকা সমৃদ্ধ পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর দেশ কানাডা। এটি একটি দ্বিভাষিক দেশ। ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ দেশটির দাপ্তরিক ভাষা। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সুবিধায় কানাডার একজন স্থায়ী নাগরিক পৃথিবীর ১৭০টি দেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেয়ে থাকে। পারিবারিক মিলনমেলা কানাডা সরকার পরিবারকে অনেক ণ্ডরুত্ব দিয়ে থাকে। এখানে পিতা-মাতার জন্য ১০ বছর মেয়াদি সুপার ভিসা দেয়া হয়। রুরাল এবং নর্দার্ন ইমিগ্রেশন পাইলট এ যাবার সুযোগ পেলে আপনি প্রথম দিন থেকেই কানাডায় স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়ে যাবেন। যার ফলে কানাডার নাগরিকদের প্রাপ্ত প্রায় সকল সুবিধাই আপনি পাবেন।
নাগরিকরা সবাই সরকারি হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় থাকেন। বায়োবৃদ্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিরাও বিশেষ প্রণোদনা পেয়ে থাকেন। কানাডার নাগরিকদের গড় আয়ু ৮১ বছর। দেশটিতে বেকারত্বের হার মাত্র ৫-৬ শতাংশ যা পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশণ্ডলোর তুলনায় অনেক কম। এখানে ক্রাইম রেট নেই বললেই চলে এবং এটি শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত দেশ। সাধারণত গড়ে ঘন্টায় ২৬ দশমিক ৮৩ কানাডিয়ান ডলার উপার্জন করা যায় এই দেশটিতে। যারা নতুন ব্যবসা করতে চাইবেন তাদের জন্য রয়েছে বিনা জামানতে অন্তত ২ লাখ ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার ঋণের ব্যবস্থা।
এছাড়া নতুন অভিবাসী হিসেবে পরবর্তিতে চাকরি পেতে অসুবিধা হলে বা অসুস্থতার কারণে কাজ না করতে পারলে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নানা রকম আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। প্রতি মাসে ৫৮ হাজার ৬০০টি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হয় দেশটিতে। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ব্যবস্থায় এখানে নাগরিকদের সন্তানেরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে যে স্থায়ী নাগরিকদের টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দেশটিতে আনুমানিক ৯৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ণ্ডলির মধ্যে কানাডার টপ লিস্টেড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭টি। শিক্ষার মান, খরচ, পড়াশোনাকালীন কাজের সুযোগ, নিরাপত্তা, স্থায়ী হওয়ার সুযোগ উত্যাদি কারণে সারা বিশ্বের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে কানাডা সবসময়ই সবার পছন্দের শীর্ষে। প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী এই দেশে আসেন পড়াশোনা করতে। তাছাড়া নতুন অভিবাসীদের সম্পদের কোনো হিসাব দিতে হয় না এই দেশে। কাজেই কানাডা হলো ইমিগ্রেশনের স্বর্গ।
এই বছরেই খুব শীঘ্রই রুরাল এবং নর্দার্ন ইমিগ্রেশন পাইলট (জঁৎধষ ধহফ ঘড়ৎঃযবৎহ ওসসরমৎধঃরড়হ চরষড়ঃ) প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে কানাডা সরকার। এই প্রোগ্রামে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি এবং আই,ই,এল,টি,এস এ ন্যুনতম স্কোর ৪ থাকলেই আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
কানাডার অন্যান্য ভিসা প্রোগ্রামের তুলনায় এই প্রোগ্রামের শর্তাবলী তুলনামূলক সহজ হওয়ায় এখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী নাগরিক আবেদন করতে পারবেন। সেই সাথে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কোনো দেশের মানুষই এই ভিসায় আবেদন করে কানাডায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডা তার প্রত্যেকটা প্রোভিন্সকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাচ্ছে। আর সে কারণেই এই ভিসা ক্যাটাগরিতে দক্ষ, আধা-দক্ষ অভিবাসী নেয়ার পরিকল্পনা করেছে কানাডার সরকার।
রুরাল এবং নর্দার্ন ইমিগ্রেশন পাইলট প্রোগ্রামটি পরীক্ষামূলকভাবে ৫ বছর চালানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা সরকার। কানাডার মোট ৫ টি প্রোভিন্সের ১১টি কমিউনিটি এই প্রোগ্রামে অংশ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অন্টারিও প্রদেশের নর্থ বে কমিউনিটি, সাডবারি কমিউনিটি, টিমিন্স কমিউনিটি, সল্ট স্টি মারি কমিউনিটি এবং থান্ডার বে কমিউনিটি। মানিটোবা প্রদেশের ব্রেন্ডন এবং আলটোনা/রাইনল্যান্ড। সাসকাচুয়ান প্রদেশের মোস জো কমিউনিটি। অ্যালবার্টা প্রদেশের ক্লেয়ারশলম কমিউনিটি। ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভারনন কমিউনিটি এবং ওয়েস্ট কুটনে কমিউনিটি।
এদের মধ্যে ১লা নভেম্বর থেকে আরও ৫টি কমিউনিটি আবেদন গ্রহণ শুরু করবে। আপনার জব নিশ্চিত করার জন্য যে কমিউনিটিতে আপনার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী জব খুঁজে পাওয়া যাবে সেখানেই আবেদন করতে হবে। এই প্রোগ্রামে সফল হবার জন্য ৭টি যোগ্যতা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। প্রথমত ১১টি কমিউনিটির যে কোনো একটি কমিউনিটির কমিউনিটি ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন থেকে সুপারিশকৃত হতে হবে। দ্বিতীয়ত প্রয়োজনীয় কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে গত ৩ বছরের মধ্যে ১ বছরের অথবা ১৫৬০ ঘন্টার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তৃতীয়ত যোগ্যতা অনুযায়ী জব অফার থাকতে হবে। চুতুর্থত ইংরেজিতে ন্যুনতম আই,ই,এল,টি,এস স্কোর ৪ থাকতে হবে। পঞ্চমত ন্যুনতম এইচ,এস,সি পাশ হতে হবে। ষষ্ঠত নিয়ম অনুসারে পর্যাপ্ত অর্থের ব্যাংক ব্যালান্স থাকতে হবে। সপ্তমত কানাডার সেই কম্যুনিটিতে বসবাস করার মানসিকতা থাকতে হবে।
এই প্রোগ্রামের আওতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশাজীবীর আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। কোম্পানি ও অভিবাসন আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ফ্রি আইনগত পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এবং কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ জনাব শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এই প্রোগ্রামের শর্তাবলী তুলনামূলকভাবে কিছুটা শিথিল, যারা প্রকৃতপক্ষে এই যোগ্যতা রাখেন, তাদের আর দেরি করা ঠিক হবে না। যেহেতু ২০১৯ এর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে এই প্রোগ্রামে আবেদন নেয়া শুরু হয়েছে, সুতরাং ইচ্ছুক লোকজনদের সবকিছু জেনে প্রস্তুতি নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, কমপক্ষে এইচ,এস,সি এবং ইংরেজির দক্ষতা না থাকলে অযথাই আবেদন করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা উচিৎ হবে না।