গোলাম মাওলা রনি
সে বহুকাল আগের কথা। মধ্যপ্রাচ্যে তখন আইয়ামে জাহিলিয়াতের রাজত্ব চলছিল। নজদ, হাইল এবং ইয়েমেন ছাড়াও বালাদে শামের অন্যান্য অঞ্চলে জাহিলিয়াতের অত্যাচার চরমে পৌঁছে গিয়েছিল। সামর্থ্যবান লোকেরা জাহিলিয়াতের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য অহরহ হিজরত করতেন। কেউ কেউ সপরিবারে, আবার কেউ কেউ পরিবার পরিজন হারিয়ে একাকী নিরুদ্দেশ হতেন অজানার উদ্দেশে। ফলে জাহিলি যুগে অনেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য দেশত্যাগ করতে গিয়ে পথেঘাটে চোর-ডাকাতদের হাতে যেমন বেঘোরে প্রাণ হারাতেন, তেমনি কেউ কেউ আবার এক জাহিলিয়াত থেকে বাঁচতে গিয়ে আরো বড় জাহেলের কবলে পড়ে মারাত্মক মুসিবতে আবর্তিত হতে হতে ইহলীলা সাঙ্গ করতেন। হিজরত করা মজলুমদের মধ্যে কেউ কেউ নামকরা পর্যটকে পরিণত হতেন আবার কেউ কেউ সেই পর্যটনের বাস্তব অভিজ্ঞতা লিখে মানব ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করতেন। আমাদের আজকের নিবন্ধের নায়ক, যিনি একসময় আরবের মরু অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন এবং জাহেলদের কবলে পড়ে স্ত্রী-পুত্র-দাস-দাসী সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ইয়েমেনের সানা বন্দরে পৌঁছেন। এরপর জাহাজে চড়ে তিনি কোথায় গিয়ে পৌঁছালেন, সে কাহিনী তার নিজের মুখ থেকেই শোনা যাক-
লোকজন আমাকে ইবনে আইমান হিসেবেই চিনত। সুদূর চীন দেশ থেকে পারস্য হয়ে যে বাণিজ্য কাফেলাগুলো ইয়েমেন দেশে যেত, সেই বাণিজ্য পথের নাম ছিল সিল্ক রুট বা রেশমি পথ। দক্ষিণ আরবের স্বপ্নপুরী বলে খ্যাত মরূদ্যানে আল জাহরার পাশ দিয়ে সিল্ক রুটের কাফেলা যখন চলাচল করত, তখন আমি অন্যান্য বেদুইন বালক-বালিকার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে কাফেলা যাত্রীদের স্বাগত জানিয়ে ঐতিহ্যবাহী আরবি গানের তালে তালে নাচতে থাকতাম। আমাদের উচ্ছ্বাস দেখে কাফেলা থেমে যেত এবং কাফেলার সর্দার এগিয়ে এসে আমাদের আদর করতেন এবং দেশ-বিদেশের মিঠাই দিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে খুশি করতেন। ঐতিহাসিক সিল্ক রুটের কাফেলা ঘিরে আল জাহরার অধিবাসীদের এই ঐতিহ্য শত বছর ধরে চলে আসছিল। কাফেলার সদস্যরা আমাদের মরূদ্যানে যাত্রা বিরতি করতেন এবং আমাদের সাথে পণ্য বিনিময়ের মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক লেনদেন করতেন তাতে আমাদের সারাটি বছর বেশ ভালোভাবেই কেটে যেত।
আমাদের এলাকাটি দীর্ঘ দিন দারবিশ গোত্র শাসন করছিল, যারা মূলত পারস্য সম্রাটদের প্রতি আনুগত্য দেখাত। আমি যে সময়টির কথা বলছি, সেটা ছিল খ্রিষ্টীয় চারশ’ অব্দ যখন পুরো জাজিরাতুল আরব মূলত দু’টি বড় পরাশক্তির তাঁবেদারি করত। উত্তর আরব ছিল রোমান সম্রাটদের অধীন এবং দক্ষিণ আরব পারস্য সম্রাটদের ছত্রছায়ায় থাকত। রোমান শাসিত অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে আইনশৃঙ্খলা ভালো ছিল এবং সেই সব অঞ্চলে অনেক নামকরা সভ্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। অন্য দিকে, দক্ষিণ আরবের বিশাল অংশ ছিল দুর্গম অনুর্বর এবং মরু ও শিলাময় পাহাড় পর্বত বেষ্টিত। এসব অঞ্চলে কোনো আইনকানুনের বালাই ছিল না। মূলত গোত্র শাসক এবং গোত্রপতির ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপরই সংশ্লিষ্ট এলাকার সব কিছু নির্ভর করত। কোনো গোত্রপতি যদি যুদ্ধ-বিগ্রহ কিংবা ডাকাতি লুটতরাজের মাধ্যমে অঢেল অর্থকড়ি ও মাল সামানার মালিক বনে যেত, তখন তারা মরুভূমির দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে নিকটস্থ পারস্য সম্রাটের গভর্নরদের সাথে দেখা করে আসতেন নিজেদের মানমর্যাদা বাড়ানোর জন্য।
দারবিশ গোত্র এমনিতেই ধনী গোত্র হিসেবে পুরো দক্ষিণ আরবে পরিচিত ছিল। অধিকন্তু আল জাহরা মরূদ্যানের মালিকানার কারণে এই গোত্রের লোকদের সভ্যতা ভব্যতা অন্যান্য বেদুইনদের মতো ছিল না। আমাদের মধ্যে অনেক শিক্ষিত লোকজন ছিলেন এবং আমরা সবচেয়ে ভালো মানুষ এবং যোগ্যতম মানুষকেই বংশপরম্পরায় নিজেদের গোত্রপতি গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত করে আসছিলাম। ফলে আইয়ামে জাহিলিয়াতের অনেক অসভ্যতা আমাদের মধ্যে ছিল না। কিন্তু আমাদের শত বছরের সেই ঐতিহ্য হঠাৎ করে ধূলিসাৎ হয়ে গেল আমাদের গোত্রপতির অসভ্য এবং চরিত্রহীনা কন্যা উজায়নার কারণে। উজায়নার সাথে কুখ্যাত মরু ডাকাত আবুল হোজ্জার অবৈধ সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে গোত্রপতির সাথে তার মেয়ে এবং মেয়ের নাগরের বিবাদ চরমে পৌঁছে। এ অবস্থায় ডাকাত আবুল হোজ্জা তার দলবল নিয়ে হঠাৎ এক রাতে আমাদের গোত্রে আক্রমণ চালিয়ে সর্দার এবং তার পুত্রদের হত্যা করে এবং নিজের প্রেমিকা উজায়নাকে আমাদের রানী বানিয়ে দেয়। ফলে পুরো জাহেলি জমানার কয়েক শত বছরের কুখ্যাত ইতিহাসে সবচেয়ে সুসভ্য গোত্রটি একজন অসভ্য চরিত্রহীনা মহিলার খপ্পরে পড়ে যায়।
উজায়না এবং তার প্রেমিক আবুল হোজ্জার কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের মরূদ্যানটি জাহান্নামে পরিণত হয়ে যায়। চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ-লুটতরাজ, জুলুম, অত্যাচার এবং খুন জখম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। আবুল হোজ্জার দলবল কয়েকটি বাণিজ্য কাফেলার ওপর আক্রমণ চালায়, যা কিনা পারস্য সম্রাটকে ক্ষেপিয়ে তোলে। এ অবস্থায় পারসিক সৈন্যরা এসে আমাদের গোত্রকে মরূদ্যান থেকে বের করে দেয়। উজায়না তার নাগরের সাথে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং দ্বিগুণ উৎসাহে অপকর্ম চালিয়ে যেতে থাকে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ ছিলাম, তারা উজায়না-আবুল বাহিনী এবং পারস্য বাহিনীর যাঁতাকলে পড়ে সর্বস্ব হারাতে থাকলাম। উজায়না যে দিন ক্ষমতা লাভ করল, তখন আমি বালক বয়সী ছিলাম। আবার যে সময় সে মরূদ্যান থেকে উচ্ছেদ হলো তখন আমি রীতিমতো যুবক এবং বিয়ে থা করে পুত্র-কন্যার পিতা হয়ে সংসারধর্ম পালন করছিলাম। একজন ভদ্রলোক হিসেবে আমি আমার এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ছিলাম এবং এ কারণে আমাদের অঞ্চলে পারস্য সেনাপতি মাঝে মধ্যে তার তাঁবুতে আমাকে ডেকে নিতেন। উজায়নার কানে যখন আমার ব্যাপারে খবর পৌঁছাল তখন সে সুযোগ বুঝে একদিন আমার পুরো পরিবারের ওপর আক্রমণ চালিয়ে সবাইকে মেরে ফেলল, কেবল আমি প্রাণ নিয়ে কোনো মতে পালাতে পারলাম।
আমি ইয়েমেনের সানা বন্দরে গিয়ে কোনো কিছু না ভেবেই ভারতবর্ষগামী একটি জাহাজে চড়ে বসলাম এবং অনেক দিন সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে অদ্ভুত এক রাজ্যে এসে পৌঁছলাম। রাজ্যটি ছিল সমুদ্রের উপকূলে। পাহাড়-নদ-নদী এবং ঘন বন-জঙ্গলে ঘেরা রাজ্যটিতে আমি বহুকাল ছিলাম। সেখানে আমি প্রায় প্রতিদিনই অদ্ভুত এবং অতি আশ্চর্য ঘটনাবলি দেখতাম। এমন সব কাহিনী শুনতাম যা বিশ্বাস করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তার পরও আমি সেসব ভৌতিক কাহিনী আমার ডাইরিতে লিপিবদ্ধ করে যাবো, যাতে আগামী প্রজন্ম তাদের পৃথিবীর একটি অদ্ভুত ভূ-খণ্ড সম্পর্কে জানতে পারে। আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ করলাম যে, আরব দেশের দুর্গম মরুভূমি, দুর্ধর্ষ বেদুইন এবং বহুবিধ অপকর্মের জন্য যে কুখ্যাতি রয়েছে তার চেয়েও অধিকমাত্রার কুখ্যাতি গিজ গিজ করছিল সুবর্ণপুর নামক রাজ্যটিতে। আরব ভূমি তথা জাজিরাতুল আরবের আইয়ামে জাহিলিয়াতের সাথে যদি সুবর্ণপুরের জাহিলিয়াতের তুলনা করি তবে আমার বিবেচনায় সুবর্ণপুরের তুলনায় আরবকে রীতিমতো জান্নাত আখ্যাত দেয়া যেতে পারে। আমি যদি দু’টি দেশের লোকজন, পশুপাখি এবং রীতিনীতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করি তবে আপনারা খুব সহজেই দুই অঞ্চলের জাহিলিয়াতের মিল-অমিল এবং জঘন্যতার মাপকাঠি নিরূপণ করতে পারবেন।
আরব ভূমিতে রাজা-বাদশাহ বা গোত্রপতিরা সাধারণত মিথ্যা কথা বলে না। কিন্তু সুবর্ণপুরের রাজা-বাদশাহ মিথ্যাচার ছাড়া বাঁচতে পারে না। তারা দৈনিক কয়েক শত মিথ্যা না বললে এবং মিথ্যা না শুনলে তাদের পেটের ভাত হজম হয় না। ঠিকমতো প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদিত হয় না এবং রাতে বা দিনে কোনো নিদ্রা হয় না। আরব দেশে মিথ্যাবাদীদের কাজ্জাব বলা হয়। কোনো লোকের নামের সাথে যদি একবার কাজ্জাব শব্দটি যুক্ত হয়ে যায়, তবে সে এবং তার পরিবার সমাজ থেকে এক ধরনের ঘৃণা-অসহযোগিতা এবং অভিশাপ পেতে থাকেÑ যুগ যুগ ধরে। বেদুইনরা কোনো কাজ্জাবকে তাদের তাঁবুতে ঢোকায় না এবং কাজ্জাবদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখে না। অন্য দিকে সুবর্ণপুরে এসে দেখলাম কাজ্জাবদের জয়জয়কার। সবচেয়ে বড় কাজ্জাবটি সিংহাসনে বসে এবং তার লোকজনদের মধ্যে যাদের রক্ত-মাংসে কাজ্জাবীয় চরিত্র বেশি মাত্রায় প্রবল তারাই উজির-নাজির-কোতোয়াল-সেনাপতি ইত্যাদি পদ-পদবি পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
আইয়ামে জাহিলিয়াতের সমাজে মোনাফেক শব্দটি অত্যন্ত ঘৃণিত। অন্য দিকে, সুবর্ণপুরের ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে মোনাফেক শব্দের সমার্থক বা পরিপূরক শব্দ নেই। সুবর্ণপুরের লোকজন বাহাতুরি-দুহোতুরি-চোগলখোর-প্রতারক ইত্যাদি শব্দ অহরহ ব্যবহার করে বটে কিন্তু ওই সব শব্দের সাহায্যে মুনাফেকির আসল বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে না। আমি যখন মুনাফেক ও মুনাফেকির বিষয়ে লোকজনের সাথে আলোচনা করলাম তখন তারা আমার কথা শুনে হেসে গড়াগড়ি দেয়ার মতো অবস্থা করল। তারা আমাকে জানাল যে, মুনাফেকি কর্ম হলো সুবর্ণপুরের জাতীয় চরিত্র। যে লোক যত বড় মুনাফেক সেই লোকই সুবর্ণপুরের ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজকার্য এবং সামাজিক কর্মে তত বেশি উন্নয়ন করতে পারে। সুবর্ণপুরের মানুষের হাঁটা-চলা-কথা-বার্তা-লেনদেন-পোশাক-পরিচ্ছদ-প্রেম-ভালোবাসা-আহার-নিদ্রা এবং বিনোদনের মতো কর্মে মুনাফেকির মূল্য হলো হীরা-মণিমানিক্য এবং জহরতের মতো। সুবর্ণপুরের রাজারা জনগণকে বলে এক কথা এবং পরে অন্যটি। আবার জনগণও রাজাকে কলা দেখিয়ে মুলা ঢুকিয়ে দেয়। মুনাফেকির প্রকোপ সুবর্ণপুরের সর্বত্র এতটাই ব্যাপক যে, ভাষা বিজ্ঞানীরা এটিকে কোনো ক্ষুদ্রতম অর্থের মধ্যে বন্দী করতে চাননি। ফলে শব্দটি এই দেশের কোনো ডিকশনারি বা ব্যাকরণে আলাদাভাবে নিবন্ধিত হয়নি।
আইয়ামে জাহিলিয়াতের সমাজে একটি শব্দ রয়েছে, যা সুবর্ণপুরে নেই- আর সেটি হলো হামিম। আরবিতে হামিম শব্দের অর্থ এমন বন্ধু যে কিনা বিপদের দিনে তার বন্ধু বা সঙ্গী সাথীকে ছেড়ে যায় না। হামিম ছাড়াও আরব দেশে মাহবুব বা মেহবুবা শব্দেরও যথেষ্ট সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে। মাহবুব ও মেহবুবা শব্দের অর্থও বন্ধু এবং সেই রকম বন্ধু যারা পার্থিব কোনো লোভ লালসা-কামনা বাসনা স্বার্থ অথবা অর্থকড়ির জন্য একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করে না। আমাদের জাহিলিয়াত সমাজে অনেক মন্দ জিনিসের আধিক্য রয়েছে কিন্তু তার পরও সেখানে অসংখ্য হামিম এবং মাহবুব-মেহবুবার দেখা পাওয়া যায়। আপনি যদি আইয়ামে জাহিলিয়ার বাসিন্দা হন এবং সুবর্ণপুরে এসে পরবর্তীতে বসতি গড়েন তবে আমি লাত-মানাত হোজ্জার কসম কেটে বলতে পারি, আপনি আপনার সব সাহায্যকারীকে নিয়ে শত বছর অনুসন্ধান করেও সুবর্ণপুরের কোনো অঞ্চল থেকে একজন হামিম অথবা মাহবুব খুঁজে পাবেন না।
সুবর্ণপুরের লোকজন ধান্ধা ছাড়া কারো সাথে সম্পর্ক করে না। যত দিন স্বার্থ আছে তত দিন সম্পর্ক রাখে এবং স্বার্থ শেষে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যা দেখে আপনার মনে হবে যে ওরা হয়তো একে অপরকে কোনো দিন চিনতই না। সুবর্ণপুরের জ্ঞানীরা কথা বলে না এবং গর্দভ প্রকৃতির লোকেরা সারাক্ষণ উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকে। এই সমাজের শক্তিশালীরা সাধারণত অত্যাচারী এবং দুর্বলরা সন্দেহপ্রবণ ও কুৎসিৎ মনের অধিকারী হয়। অতিভোজন মাত্রাতিরিক্ত রঙ্গ তামাশা এবং বিলাসিতা সুবর্ণপুরের ধনীদের সাধারণ রোগ। অন্য দিকে, দরিদ্ররা খুবই হিংসুটে এবং ঝগড়াটে প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাদের নৈতিক চরিত্রও খুবই নিম্নমানের হয়ে থাকে। ধোঁকাবাজি দুর্নীতি ও প্রতিপক্ষকে অহেতুক দুর্ভোগ দুর্দশার মধ্যে ফেলে দেয়ার ক্ষেত্রে সুবর্ণপুরের রাজ কর্মচারীদের তুলনা-আইয়ামে জাহিলিয়াতের শেয়াল বা শকুনের চেয়েও নির্মম ও ভয়ঙ্কর। এখানকার রাজকর্মচারীদের স্বভাব চরিত্র কেমন এবং রাজা বাদশাহদের রুচি অভিরুচি ও সাহস শক্তি কেমন তা নিম্নের কাহিনীটি পড়লেই বুঝতে পারবেন!
রাজা মশাইয়ের শখ হলো বনের সব বাঘ মেরে ফেলবেন। তিনি তার পাইক-পেয়াদাদের হুকুম করলেন বন আক্রমণ করে প্রতিদিন এক শ’ বাঘ মারতে হবে এবং একটা বাঘকে গ্রেফতার করে রাজ প্রাসাদে আনতে হবে, সেটিকে রাজা মশাই পাত্রমিত্রদের সামনে মহাবিক্রমে হত্যা করে নিজের বীরত্ব জাহির করবেন। রাজার পাইক-পেয়াদারা ঢোল-বাদ্য-ঢাল-সড়কি-তীর এবং বড় বড় মাছ ধরার জাল নিয়ে বন আক্রমণের জন্য রওয়ানা দিলো। তারা যখন বনের মধ্যে ঢুকছিল তখন কয়েকটি গাধা-রাম ছাগল এবং বন বিড়াল প্রাণভয়ে বন থেকে বের হয়ে এক কৃষকের গোয়ালঘরে আশ্রয় নিল। কৃষক প্রাণীগুলোকে তার গোয়ালে দেখে ভারি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল, কেন তোমরা বনভূমি থেকে পালিয়ে লোকালয়ে এসেছ। প্রাণীগুলো বলল, রাজার লোকেরা বাঘ মারার জন্য বনে ঢুকেছে। তারা বাঘ তো দূরের কথা, বাঘের পশমও ছুঁতে পারবে না। উল্টো বাঘ যাতে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে এ জন্য বাদ্যযন্ত্র বাজাতে বাজাতে বনে ঢুকেছে। তারা আমাদের মতো প্রাণীদের মারবে এবং রাজার কাছে বনবিড়াল বা বাঘডাশা ধরে নিয়ে বলবে- এটাই বাঘ! আমরা রাজার লোকদের মতিগতি ও স্বভাব চরিত্র খুব ভালো করে জানি বলেই কোনো মতে প্রাণ নিয়ে বনভূমি থেকে পালিয়ে আপনার গোয়ালে আশ্রয় নিয়েছি।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য