ভর্তির জন্য স্কুল-কলেজ সহজে খোঁজার জন্য ‘স্কুলঘর’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন সিলেটের মাদ্রাসাছাত্র নাজমুল আলম মিরাজ (১৮)। বাবা ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকেন। সে জন্য বড় বোনের জন্য মানসম্পন্ন কলেজ খুঁজতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। তাই এই অ্যাপ তৈরির চিন্তা মাথায় আসে তার।
ধার্মিক মা-বাবার সন্তান হিসেবে নিজের ইচ্ছাতেই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছেন মিরাজ। মাদ্রাসায় পড়লেও বিজ্ঞান শিক্ষায় তার ঝোঁক ছিল। মাদ্রাসায় পড়ার পাশাপাশি তাই বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে তিনি আলাদাভাবে পড়াশোনা করেন।
মিরাজ কোরআনে হাফেজও। বর্তমানে সিলেটের টিলাগড়ের প্রাইভেট আলিয়া মাদ্রাসায় (আলহাজ অছিয়ত আলী-করিমন্নেছা হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসা) পড়ালেখা করছেন। এ বছর দাখিল পরীক্ষা দেবেন। মিরাজের বাবা মো. নজিবুর রহমান একজন ব্যবসায়ী। মা শেখ আফছানা বুলবুল গৃহিণী। বড় বোন বর্তমানে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেলের নর্থাম্ব্রিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত।
মিরাজ বলেন, ধর্মীয় রীতিনীতি ও পড়ালেখায় তার যেমন আগ্রহ, তেমনি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতিও ঝোঁক রয়েছে। ১০ বছর বয়সে তিনি ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ রপ্ত করেন। ‘স্কুলঘর’ অ্যাপটি তৈরির জন্য তিনি অনলাইনে কোর্স করেন। তার উদ্ভাবিত এই অ্যাপের মাধ্যমে খুঁজে বের করা যাবে যেকোনো স্কুল বা কলেজের সব তথ্য।
‘স্কুলঘর’ বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্যসংক্রান্ত অ্যাপ। যেখানে ঘরে বসে যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য, যেমন ভর্তি, মাসিক ফি, সেশন ফি, প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি জানা যাবে এক ক্লিকে। নাম অথবা ঠিকানা দিয়ে খুঁজে বের করা যাবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের তথ্য। যেকোনো সময় অভিভাবকদের ক্ষেত্রে অ্যাপটি কার্যকর হবে বলে মনে করেন মিরাজ।
অ্যাপ নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘অনেক অভিভাবকই চান তাদের সন্তানকে মানসম্পন্ন স্কুল-কলেজে পড়াবেন। কিন্তু সময় ও সুযোগের অভাবে খুঁজে বের করতে পারেন না ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমি মনে করি, এই সমস্যা সমাধানে খুবই সহায়ক হবে আমার অ্যাপটি। অ্যাপটি নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই প্রশংসা করেছেন। এমন একটি অ্যাপ বাংলাদেশে প্রয়োজন ছিল বলে মতামত প্রকাশ করেছেন। বর্তমানে অ্যাপটি প্লে-স্টোরে প্রকাশিত অবস্থায় রয়েছে। যে কেউ চাইলে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে ঢাকা অঞ্চলের গ্রাহকেরা ব্যবহার করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অঞ্চলেও কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
মিরাজের অ্যাপ তৈরি নিয়ে উচ্ছ্বসিত তার মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। আলহাজ অছিয়ত আলী-করিমন্নেছা হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মুকিত বলেন, ‘মিরাজ একটি প্রয়োজনীয় অ্যাপ তৈরি করেছে। আমরা অনেক খুশি এই জন্য। তার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর ব্যাপারে সবার কাছে একটি ভালো বার্তা যাবে। বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, যারা মাদ্রাসায় পড়ে তাদের বিজ্ঞান বা আইটি সেক্টর নিয়ে ধারণা নেই। মিরাজ এই ধারণা ভেঙে দিয়েছে। আমি মনে করি, অন্য মাদ্রাসার ছাত্ররাও এ ধরনের উদ্ভাবন করতে পারবে।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সে অ্যাপের একটি স্ট্রাকচার তৈরি করেছে। তার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝলাম, এই অ্যাপ নিয়ে তার ভালো প্ল্যান আছে। তবে অবশ্যই তার প্রশংসা করতে হবে। কারণ, দশম শ্রেণির একজন ছাত্রের মাথায় যখন আইটি নিয়ে চিন্তাভাবনা থাকে, তখন বুঝতে হবে আমাদের বাচ্চাদের মনোজগৎ অনেক প্রসারিত হয়েছে।’
অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘মিরাজের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি প্রশংসনীয়। কারণ, মিরাজের মাধ্যমে বোঝা গেল আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষাও আধুনিকায়ন হচ্ছে। সে অ্যাপ বানানোর জন্য যা যা শিখা দরকার শিখেছে। তার পরিকল্পনা যদি ভালোভাবে সম্পাদন করতে পারে, তাহলে সে এই অ্যাপ নিয়ে অনেক দূর যেতে পারবে এবং তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। মিরাজের এই উদ্ভাবনে বলা যায়, আমাদের দেশের আইটি সেক্টর অনেক ভালো পর্যায়ে আছে। তার এই উদ্ভাবনে বাচ্চারা আরও উৎসাহিত হবে।’