জসিম মল্লিক
(পূব প্রকাশের পর)
ছাত্ৰ ৱাজনীতি বন্ধ হোক
বাবা মা সন্তানদেৱ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় পড়াশুনা কৱাৱ জন্য, প্ৰকৃত মানুষ হওয়াৱ জন্য। সেখানে খুনী, সন্ত্ৰাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডাৱবাজ, হেৱোইন, ইয়াবা বা মদ্যপ হতে পাঠায়না। কিন্তু এখন ছাত্ৰ ৱাজনীতিৱ নামে এসব হচ্ছে। এই নষ্ট ৱাজনীতি বন্ধ কৱতে হবে। এখনই। শিক্ষকদেৱও তাদেৱ সুবিধাৱ জন্য ছাত্ৰ নামধাৱী সন্ত্ৰাসীদেৱ তোষণ বন্ধ কৱতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনা হয়না বলেই পৃথিবীতে ২০০০ বিশ্ববিদ্যালয়েৱ মধ্যে বাংলাদেশেৱ নাম নেই। বুয়েটেৱ এই অধঃপতন দেখে আমি যাৱপৱনাই বিস্মিত! পাঠকক্ষ এখন টৰ্চাৱ সেল!
মনে পড়ে আমাৱ ছেলে অৰ্ক তখন স্কলাষ্টিকায় পড়ে। প্ৰতিক্লাসে প্ৰথম বা দ্বিতীয় গ্ৰেড পায়। কোনো প্ৰাইভেট টিউটৱ লাগেনা। একাডেমিক বইয়েৱ চেয়েও বাইৱেৱ বইয়েৱ প্ৰতি ইন্টাৱেষ্ট। প্ৰচুৱ বই কিনে দেই আমি। আমাৱ মনে গোপন ইচ্ছা ছেলেকে ইঞ্জিনিয়াৱ বানাবো। বুয়েটে পড়বে। আমি পড়তে পাৱিনি বুয়েটে। মায়েৱ খুব ইচ্ছা ছিল আমি ইঞ্জিনিয়াৱ হই। কিন্তু সেজন্য আমাৱ কোনো দুঃখ নেই। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েৱ পড়েছি। সৰ্বাথেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। কালো টাকাৱ দৌড়াত্বে টিকতে না পেৱে স্কলাষ্টিকা এবং দেশ ছেড়ে একদিন ছেলে মেয়ে নিয়ে চলে আসলাম কানাডা। এখন মনে হয় এসে কোনো ভুল কৱিনি। ছেলে মেয়ে সঠিক পথেই আছে এবং প্ৰকৃত মানুষ হতে
স্মৃতিগুলো কখনো মুছে যায় না
আমি অনেক বয়স পযর্ন্ত মায়ের বুকের মধ্যে ঘুমিয়েছি। মনে পড়ে ভোর রাতের দিকে যখনই ঘুম ভাঙ্গত দেখতাম মা পাশে নাই। হোক সেটা শীত, গ্রীষ্ম, বষা বা শরৎ। প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে যেতো আমার। কখনো দূরের মসজিদে আসসালাতু খাইরুমমিনাননাউম.. আজানের সমুধুর ধ্বনি শুনে আবার কখনো মা উঠে বাতি জ্বালাতেন আর খুটখাট শব্দ করতেন বলে ঘুম ভাঙ্গত। আমার ঘুম খুব আলগা। সামান্য শব্দেও আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ভোররাতে ওঠে বাথরুমে যেতাম। তখন লক্ষ্য করতাম মা কখনো বাইরে থেকে ওজু করে এসেছেন, কখনো জায়নামাজে বসে আছেন। তাহাজ্জুত আর ফজরের নামাজ শেষে মা অনেক সময় জায়নামাজেই ঘুমিয়ে পড়তেন। কখনো ধ্যানমগ্ন হয়ে বসেই থাকতেন। কখনো নীরবে কাঁদতেন। কেনো কাঁদতেন কে জানে!
আমি ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকতাম। তারপর কখনে একসময় ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যেতাম। মা কখনো বিছানায় আসতেন, কখনো আসতেন না। অন্ধকার থাকতে থাকতেই সংসারের কাজে লেগে যেতেন। উঠোন ঝাড়ু দিতেন, হাস মুরগীগুলোর তদারক করতেন। তারপর আমাদের খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত করতে শুরু করতেন। চুলায় ভাত বসাতেন। ধোঁয়ায় নাকের জ্বলে চোখের জ্বলে একাকার হতেন। এখনও সেইবস দৃশ্য মনে পড়ে। মা খুবই কমক্ষম ছিলেন। অনেক ফল ফলাদি আর শাক সব্জি করতেন মা। সীম, লাউ, ধুন্দল, লাল শাক, ডাটা, সজনে, কুঞ্জলতা ফলত অনেক। যা রোপন করতেন তাই লকলকিয়ে উঠত। মায়ের হাতে যাদু ছিল। জলপাই, আমরা, পেয়ারা, কাঠাল, জাম্বুরা, জামরুল, কালো জাম, নইল, আমলকি, কামরাঙ্গা, চালতা, লিচু, নারকেল ইত্যাদি গাছ ছিল আমাদের বাড়িতে।
এখন টরন্টোতে প্রতিদিন ভোররাতে একটা ডাক কানে আসে আমার, মনে হয় অনেক দূর থেকে আসছে ডাকটা .. এই ওঠো ওঠো, নামাজের সময় হয়েছে। প্রথমে আমি কিছু বুঝতে পারি না। কে ডাকে, কোথা থেকে আস ওই ডাক! তারপর ধাতস্থ হয়ে টের পাই জেসমিন ফজরের নামাজের জন্য ডাকছে। আমি চোখ ডলতে ডলতে উঠে পরি। ওজু করতে করতে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। মাও নামাজের জন্য উঠতেন। তাহাজুত আর ফজর পড়তেন। একটু যখন বড় হয়েছি, আলাদা বিছানায় ঘুমাই তখন খুউব ভোরে মা এভাবেই ডাকতেন, জসিম ওঠ ওঠ, নামাজ পড় বাবা। আমি উঠতে চাইতাম না..। চোখে রাজ্যের ঘুম। কিন্তু আমি জানতাম ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম..। স্কুলে শিখিয়েছিল..।
আজ মায়ের মৃত্যু দিবস। মা নাই কিন্তু স্মৃতিগুলো আছে। স্মৃতি কখনো মুছে যায় না।
টরন্টো ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
এভাবে একদিন
আমরা এইসব দেশে সাধারণতঃ কি করি। এগুলো দৈনন্দিন প্রাকটিস। কেউ কফি স্টোরে ঢুকবে বা অন্য যে কোনো স্টোরে, অফিসে বা এপাটমেন্টে আপনি আমি হয়ত তার সামনেই আছি, আমরা কি করি তার জন্য দরজাটা খুলে দাঁড়িয়ে থাকি। তার মুখের উপর কিছুতেই দরজাটা ছেড়ে দিতে পারি না। জেশ্চার। এলিভেটরে উঠতে যেয়েও এমনটা করি, দেখি কেউ আছে কিনা। গ্যারেজের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকি পিছনেই যিনি আছেন তার জন্য। গাড়ি চালাতে গিয়ে অলওয়ে স্টপ সাইনে দাঁড়িয়ে আই কনট্যাক্ট করি কারন একসাথেই দাঁড়িয়েছি এবং ইশারা করি আগে যাওয়ার জন্য। এমনকি কফির জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও অন্যকে সুযোগ দিতে চাই বা গ্রোসারির বিল পরিশোধে। বাসে ট্রেনে উঠলে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের জন্য সীট ছেড়ে দেই। মন্ত্রী, এমপি, কাউন্সিলর, অফিসের সিইও, সেনাবাহিনীর প্রধান, পুলিশের প্রধান যেই হোক সবাই আইন মানে। নিয়ম ভঙ্গ করলেই ফাইন। মন্ত্রী বা পুলিশ হলেও উল্টো পথে গাড়ি চালানোর কোনো সুযোগ নাই বা কারো জন্য রাস্তা বন্ধ করার নিয়ম নাই।
অন্যের প্রতি রেসরেক্ট দেখানো রাষ্ট্র শিখিয়েছে। রাষ্ট যখন মানবিক হয় তখন জনগনও মানবিক হয়। রাষ্ট্র যখন নিষ্ঠুর আচরন করে জনগনও তখন নিষ্ঠুর হয়। তখন বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, ধষন করে, প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে খুন করে এবং জনগন তা তাকিয়ে দেখে, আগুন দিয়ে পুড়ে মারে। পুলিশ কাস্টিডিউতে নিমম অত্যাচার করে, মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়, ক্রসফায়ার করে, অহেতুক ভোগায়, ঘুষ নেয়। পক্ষান্তরে সভ্য দেশে পুলিশ কারো গায়ে টাচ করতে পারে না। আইন নাই।
আইনের শাসন থাকলে জনগন নিরাপদবোধ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আদালত যদি ডরফুক হয়, আইন যদি বধির হয়ে যায় তখন সমাজে অন্যায়, অনাচার মাথাচারা দিয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষ ভীত আতঙ্কগ্রস্থ হয়। তখন ক্ষমতার বলয়ের লোকজন ব্যাংক লুট করে, চোরাকারবারি করে, মাদক ব্যবসা করে, শেয়ার বাজার লুট করে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে। ঘুষ, দূনীতি, রাহাজানি, কমিশন বাণিজ্য বেড়ে যায়। তখন কেরানীর বউও শতকোটি টাকার মালিক বনে যায়। এবং এসব নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করে না। এভাবে সমাজ অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে..।
টরন্টো ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯