পৃথিবীতে বাঁ-হাতি মানুষের সংখ্যা কিন্তু মোটেও কম নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ মানুষ বাঁ-হাতি।অনেকেই আবার বাম-হাতিদের অস্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু মোটেও তা নয়। বাঁ হাতিরা আসলে ডান-হাতিদের মতোই স্বাভাবিক মানুষ। বাঁ-হাতি হওয়ার পিছনে মানুষের শরীরের এক ধরনের জিনকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। এই জিনের প্রভাবে যে কেউই বাঁ-হাতি বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মাতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে মানুষের মস্তিষ্কের ডান দিক তার বাম হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার একই ভাবে মস্তিষ্কের বাম দিক তার ডান হাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং, মস্তিষ্কের যে পাশের জিন বেশি ক্রিয়াশীল থাকে তার অপর পাশের হাত বেশি ক্রিয়াশীল থাকে। সাধারণভাবে ডান হাতের উপর ক্রিয়াশীল মস্তিষ্কের বাম অর্ধাংশ কথা, ভাষা, লেখা, যৌক্তিক কার্যাবলী এবং গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে, যাকে বলা হয় লিনিয়ার থিংকিং মোড।
অন্যদিকে, বাম হাতকে চালনাকারী মস্তিষ্কের ডান অর্ধাংশ সংগীত, শিল্পকলা, উদ্ভাবনী শক্তি, উপলব্ধি ক্ষমতা, আবেগ আর বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ করে, যাকে হলিস্টিক থিংকিং মোড বলে। ডান পাশের মস্তিষ্কের প্রভাবের কারণে সাধারণভাবে ডান হাতিদের চেয়ে বাঁ-হাতিরা একটু বেশি সৃজনশীল, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন আর কিছুটা চিন্তাশীল স্বভাবের হয়ে থাকে। বাম-হাতিরা সংখ্যায় ডান-হাতিদের চেয়ে কম হলেও তাদের কৃতিত্বের পরিসংখ্যান দেখলে ডান-হাতিরা ঈর্ষান্বিত হতে পারেন।
ক্রীড়াঙ্গনে তাকালে দেখা যাবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বহু খেলোয়াড়ই বাম-হাতি। ফুটবলের কয়েকজন বাম-হাতি খেলোয়াড় হলেন- পেলে, ম্যারাডোনা, রোমারিও, হুগো স্যানচেজ। ক্রিকেটে আছেন অ্যালান বোর্ডার, গ্যারি সোবার্স, ব্রায়ান লারা, ওয়াসিম আক্রম, সনৎ জয়সুর্য, শচীন তেন্ডুলকর। টেনিসে আছেন রাফায়েল নাদাল।
অভিনয় জগতে রয়েছেন অসংখ্য বাঁ-হাতি তারকা। তাদের কয়েকজন হচ্ছেন- জন উডয়ার্ড, জন এডামস, হ্যারি এন্ডারসন, অমিতাভ বচ্চন, রবার্ট ব্লাক, জর্জ বার্নস, চার্লি চ্যাপলিন, জর্জ গোবেল, টম ক্রুজ, ডেভিসন, ম্যাট ডিলন, এনজেলিনা জোলি, নিকোল কিডম্যান, শার্লি জোনস, রোডি ভ্যালি, জেমস ক্যামেরুন, রেক্স হ্যারিসন।
রাজনীতি বা রাষ্ট্রের কর্ণধার হওয়ার যোগ্যতাতেও পিছিয়ে নেই বাঁ-হাতিরা। বরং, এ বিভাগে তারাই এগিয়ে আছেন। এ পর্যন্ত যে ক’জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তাদের মধ্যে আটজনই বাঁ-হাতি।
দিন যত যাচ্ছে বাঁ-হাতিদের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে ধারণা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে তাদের প্রয়োজনীয়তা আছে, এটাও মানুষ উপলব্ধি করছে। বাঁ-হাতিদের সম্মানার্থে প্রতি বছর ১৩ আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক বাঁ-হাতি দিবস। সাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিই দিনটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য। বাঁ-হাতিদের একটি সংগঠন ১৯৭৬ সালে প্রথম আমেরিকায় দিবসটি পালন শুরু করে। এখন বিশ্বের সব দেশেই এই দিনটি নানা ভাবে পালিত হয়।