ফেসবুকভিত্তিক সংগঠনের আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাঙালি নারীরা তাদের জীবন-অভিজ্ঞতার গল্প শেয়ার করেছেন। রোববার (২০ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটায় সিডনির গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাঙালি নারীরা তাদের জীবনের গল্প বর্ণনা করেন।
ধর্মীয় বিশ্বাস, চর্চা কিংবা পোশাক যে কারো জীবনের সফলতার জন্য দুর্ভেদ্য প্রতিবন্ধক নয়, শাফীন মূশতাক তা প্রমাণ করেছেন তার নিজের জীবনেই, সেই গল্পটাই তিনি বলেছেন। এক বা একাধিক অটিস্টিক বেবি থাকলেই যে একজন মায়ের জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে যায় না, তারপরেও যে একজন মা ক্যারিয়ারে সফল হতে পারেন, তা নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়েই বলেছেন নুদরাত নাবি।
একটা নতুন দেশে কীভাবে চাকুরি খুঁজতে হয়? কিভাবে নিজেকে চাকুরির জন্য প্রস্তুত করতে হয়? কিভাবে রেজিউমি লিখতে হয়? কিভাবে ইন্সটারভিউ ফেইস করতে হয়? এরকম প্রয়োজনীয় বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন জেইড ক্রস। জাস্ট ও-লেভেল শেষ করে নতুন দেশে একটা মেয়ে পড়াশুনা করতে এলে, তার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো কেমন হয়? পড়াশুনা শেষে তার ক্যারিয়ারটা কেমন হতে পারে? জারিন তাসনিম সেই অভিজ্ঞতার আদ্যোপান্ত শেয়ার করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় একজন সিঙ্গেল মাদারের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার অভিজ্ঞতার কথা বেদনার নীল সিন্ধুক খুলে বলেছেন ডা. রাজভীন শওকত।
অনুষ্ঠানে যখন চাকুরি বিষয়ক অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ধর্মীয় পোশাক নিয়েই ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার গল্প যখন শেয়ার করা হয়েছে, তখন অনেকেই উজ্জীবিত হয়েছেন। আবার একজন অটিস্ট বেবির মায়ের জীবন এবং সিঙ্গেল মাদারের নানা রঙের কষ্ট-বেদনার গল্প শুনে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি।
অনুষ্ঠানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমধর্মী দিক ছিল- কোনো সভাপতি, বিশেষ অতিথি ছিল না; রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি ছিল না; স্পন্সরদের আশীর্বাদ ছিল কিন্তু কোনো যন্ত্রণা ছিল না; ভিআইপি ছিল না; বক্তৃতাবাজি ছিল না; নাচ-গান, কবিতা, নাটক ছিল না; কোনো সদস্য ফি ছিল না; কোনো ধরনের পিঠ চুলকা-চুলকি ছিল না; হাজবেন্ড সিটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল (যেহেতু উক্ত অনুষ্ঠানে পুরুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না, তাই আয়োজকরা ভেন্যুর কাছেই পুরুষদের জন্য ক্রিকেট, ফুটবল এবং কার্ড খেলার ব্যবস্থা ছিল)। এসব কারণে উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই তাদের ফেসবুক পোস্টে “একটি পরিচ্ছন্ন অনুষ্ঠান” বলে অভিহিত করেছেন।
সচেতনতামূলক এবং নারী জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের এই অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে অন্যান্যের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ডা. সায়মা, সাকিনা আক্তার, এলাইজা আজাদ টুম্পা এবং নাফিসা আসিফ স্বাগতা প্রমুখ।
আসছে বসন্তে দ্বিগুণ হবার প্রত্যাশা এবং আরও অসংখ্য অজানা গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সবশেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।