লিখেছেন মাহমুদুল হাসান রুবেল
টানা দ্বিতীয়বারের মতো কানাডার ক্ষমতায় জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ‘মাইনরিটি গভর্নমেন্ট’ হিসেবে জাস্টিন ট্রুডো ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। খুব সম্ভবত এনডিপিকে নিয়ে সরকার গঠন করবেন জাস্টিন ট্রুডো।
কানাডার ৪৩তম জাতীয় নির্বাচনে ৩৩৮টি আসনের মধ্যে জাস্টিন ট্রুডোর দল লিবারেল পেয়েছে ১৫৭টি, কনজারভেটিভ ১২১টি, ব্লক কুইবেকুয়া ৩২, এনডিপি ২৪টি । সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার নিশ্চিত করতে ট্রুডোর দরকার ছিল ১৭০টি আসন। খুব সম্ভবত জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টি জাগমিত সিং এর এনডিপিকে নিয়ে সরকার গঠন করবে। লিবারেল পার্টি পুরো কানাডায় ভোট পেয়েছে ৫,৮৭১,৬৪০ (৩৩.০৬%) এবং কনজারভেটিভ ৬,১১৭,৯১৩ (৩৪.৪%) ভোট পেলেও আসন সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ে। ব্লক কুইবেকুয়া থেকে বেশি ভোট পেলেও এনডিপি আসন সংখ্যায় পিছিয়ে পড়ে। সব প্রদেশেই লিবারেল পার্টি আসন হারালেও অন্টারি প্রদেশে গত নির্বাচন থেকে একটি আসন বেশি পেয়েছে। ২০১৫ এর নির্বাচনে ৭৬ আসন পেলেও দলটি এবার পেয়েছে ৭৭ টি আসন। কুইবেক প্রদেশে গত নির্বাচন থেকে পাঁচটি আসন কম পেয়েছে দলটি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ৪০ টি আসন পেলেও এবার পেয়েছে ৩৫ টি আসন। কুইবেক প্রাদেশিক সরকারের বিল ২১ এর কারণে জাস্টিন ট্রুডোর দল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর তাই ২০১৫ সালের নির্বাচন থেকে ২২ টি আসন বেশি পেয়েছে ব্লক কুইবেকুয়া। ২০১৫ এর র্নিবাচনে আটলান্টিক কানাডার ৩২ টি আসনের সবগুলো জয়ী হলেও এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছে ২৬ টি আসনে। আলবার্টা এবং সাসকাচুয়ানে কোন আসন পায়নি দলটি। ফলে এ দুই প্রদেশ থেকে এবারের মন্ত্রীসভায় কোন মন্ত্রী না থাকার সম্ভাবনা বেশি।
কানাডার নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, কোনো নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দল অর্ধেকের বেশি আসনে জিততে না পারলে তাকে ‘সংখ্যালঘু সরকার’ বলা হবে। অর্ধেকের বেশি আসন পেলে হাউজ অব কমন্সের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকে। সংখ্যালঘু সরকারের অসুবিধা হল কোনো বিল পাস করতে গেলে আসন অনুযায়ী বিরোধী দলের সমর্থন লাগে। বিরোধীরা চাইলেই কোনো বিল আটকে দিতে পারেন। বাজেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিরোধীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। এভাবে বিতর্কিত ইস্যুতে কোনো প্রস্তাবে সরকার হেরে গেলে পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন নির্বাচন দিতে হয়। এই ফেডারেল ইলেকশন ৪৭ বছর বয়সী জাস্টিন ট্রুডার জন্য ‘গণভোট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। বহুল আলোচিত এই সরকার প্রধান সম্প্রতি কয়েকটি বিষয় নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। এসএনসি লাভালিন নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়া লিবারেল সরকারের সাবেক মন্ত্রী (বহিস্কৃত) এটর্নি জেনারেল জডি উইলসন রেবল্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পর কনজারভেটিভ লিডার এন্ড্রু শিয়ার, এনডিপি লিডার জাগমিত সিং কথা বলেছেন জাস্টিন ট্রুডোর সাথে।
মন্ট্রিয়লে জাস্টিন ট্রুডো সর্বস্তরের কানাডিয়ানদের ধন্যবাদ জানান তার দলের প্রতি আস্থা রাখার জন্য। ঐক্যবদ্ধ, মানবিক কানাডা গঠনের লক্ষ্যে তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমার জন্য অনেক সম্মানের ছিলো গত চার বছর কানাডার জন্য সরকার হিসেবে কাজ করার। আবারও আগামী চার বছরের জন্য আবার সে দায়িত্ব দেয়ার কারণে আমরা আরো বেশি দায়িত্বশীল হয়ে আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য, কানাডার ভবিষ্যতের সফলতার জন্য কাজ করে যাবো।
কনজারভেটিভ লিডার এন্ড্রু শিয়ার চূড়ান্ত ফলাফলের পর বলেন, আজকের রাতের ফলাফল যদিও আমাদের অনুকূলে আসেনি। তারপরও আমি গর্বিত এবার আমরা অটোয়াতে গতবারের চেয়ে শক্তিশালী বিরোধীদল পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। আমরা জাস্টিন ট্রুডোকে বলতে চাই, তার সরকার যদি ব্যর্থ হয় তবে আমরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
এনডিপি লিডার জাগমত সিং তার বক্তব্যে বলেন, এনডিপি কঠোর পরিশ্রম করবে আপনার জীবনের উন্নতির জন্য, কানাডিয়ানদের জীবনের উন্নতির জন্য, মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য।
এদিকে এলিজাবেথ মে এর গ্রীন পার্টি রেকর্ডসংখ্যক ৩টি আসনে জয়ী হয়। এলিজাবেথ মে মাইনরিটি সরকারের সাথে জলবায়ু নিয়ে কাজ করার আশা প্রকাশ করেছেন।
ইলেকশন কানাডা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২৭.৪ মিলিয়ন ভোটার ছিলেন। সারাদেশে ২০ হাজারের উপর ভোটিং সেন্টার স্থাপিত হয়েছিল ভোটের জন্য। ভোট পড়েছে ৬৮.৫%।