আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ঘিরে জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে কেন্দ্র করে এ মেরুকরণে পুত্র সাদ এরশাদ যুক্ত হতে পারেন। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
ওই নেতাদের ভাষ্য, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদপন্থী নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেখতে চান। এক্ষেত্রে মা রওশন এরশাদ আগামী সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারেন।
তবে দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরপন্থী নেতাদের ভাষ্য, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাবস্থায় গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। আগামী সম্মেলনে দলটির কাউন্সিলররা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সম্মানে গোলাম মোহাম্মদ কাদরকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে সংকট দেখা দেয়। পরে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়। সমঝোতা অনুযায়ী রওশন এরশাদকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।
জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা জানান, পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গোলাম মোহাম্মদ কাদের আগামী সম্মেলন পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান। নিয়ম অনুযায়ী তিনি সম্মেলনের আগে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে। তখন কাউন্সিলররা মোখিক বা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের কাউন্সিলের আগে পদত্যাগ করবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন চেয়ারম্যান পদে আগ্রাহী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে। তখন সরাসরি বা মৌখিক ভোটের মাধ্যমে পরবর্তী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। একইভাবে মহাসচিব পদেও নির্বাচন হবে।’
দলটির একাংশের নেতাদের মতে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে দেয়া হবে না। যদি চেয়ারম্যান পদে তাকে ছাড় পেতে হয় তাহলে অবশ্যই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের পছন্দের কোনো নেতাকে মহাসচিব বা এরশাদপুত্র সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে আসীন করতে হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘কাউন্সিলের মাধ্যমে আগামী দিনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। ফলে আগামীতে গোলাম মোহাম্মদ কাদের আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেন, অন্য কেউও হতে পারেন।’
অন্য কেউ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হবেন কি-না, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে কথা বলার সময় এখনও হয়নি। কাউন্সিলের সময় দেখতে পাবেন, কে হচ্ছেন পরবর্তী চেয়ারম্যান?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘আগামী সম্মেলনে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দেয়া হবে। সাদ এরশাদকে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হবে। পাশাপাশি মহাসচিব পদ ও অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম ম্যাডামের (রওশন এরশাদ) পছন্দে দিতে হবে। এমন শর্ত মেনে নিলেই চেয়ারম্যান পদে ছাড় পেতে পারেন গোলাম মোহাম্মদ কাদের। যাতে দলে ম্যাডামের অবস্থান ওনার চেয়ে শক্ত হয়।’
আগামী সম্মেলনে এরশাদপুত্র সাদ এরশাদের কমিটিতে আসার বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, ‘তিনি দলের সাধারণ সদস্য হিসেবে রংপুর-৩ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। আগামী কাউন্সিলে তিনি দলের কমিটিতে আসবেন। তাকে কোন পদে বসানো হবে সেটা তো এখনই বলা যাচ্ছে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতার পদ বেগম রওশন এরশাদকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাই জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বেগম রওশন এরশাদকে ছাড় দিতে হবে। আগামী সম্মেলনের পর নতুন কমিটিতে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে অবশ্যই চেয়ারম্যান করা হবে।’
জাতীয় পার্টির আগামী সম্মেলন নিয়ে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘সম্মেলনের সময় চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা সব দলেই হয়ে থাকে।’
প্রসঙ্গত, জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এটি ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের সেমিনার হলে জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সাংগঠনিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান দলটির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।