লিখেছেন মোনাজ হক
বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা, চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। মাত্র ৫ দিনের এই বইমেলায় এসেছেন ১২০টি দেশের প্রকাশকরা, এনেছেন হাজারো বই। সাধারণত এখানে বই বিক্রি হয়না এই মেলায়। প্রকাশক, লেখক, বইয়ের শিল্পী তারা আসেন বই নিয়ে আলোচনা করতে আর ছাপাখানার নতুন নতুন টেকনোলজি, সফটওয়্যার হার্ডওয়্যার আর টিভি চ্যানেলগুলো সারাদিন বই জগতের নতুন নতুন খবর নিয়ে।
৫ দিনের এই মেলার বিশাল আয়োজনের প্রথম দুই দিন চলে ব্যবসায়ীক বিনিময়, পাবলিশার্স লেখক আর ডিস্ট্রিবিউটরদের সিম্পোজিয়াম, আর শেষের তিন দিন পাঠক আর সাধারণ জনগণের জন্যে উন্মুক্ত। না, কোনো প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন না বইমেলা, বরং সেখানে লেখক আর প্রকাশদের যায়গা।
এবার ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা গেস্টকান্ট্রি হলো নরওয়ে, ক্রাউন প্রিন্সেস মেটে-মেরিট এসেছেন তাই জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এসেছিলের সরকারের পক্ষ থেকে, উদ্বোধন করতে নয় সঙ্গ দিতে। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে ডানপন্থী চরমপন্থিদের উত্থান ও হুমকির প্রতিবাদ হলো এই বইমেলা তাই কঠোর স্বর শোনা গেলো হাইকো মাস এর কণ্ঠে।
বুধবার সন্ধ্যায় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইয়ের মেলা অনেক বিশিষ্ট অতিথির সাথে উল্লেখযোগ্য অতিথি হয়েছিলেন; বিশেষত নরওয়েজিয়ান ক্রোন প্রিন্সেস মেটে-মেরিট এবং প্রিন্স হকন। শুরুতে বেশ কয়েকজন বক্তা আরও শক্তিশালী সামাজিক দায়বদ্ধতার পক্ষে কথা বলেছিলেন। ফেডারেল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাছ (এসপিডি) গত সপ্তাহে হালে শহরে চরম ডানপন্থিদের হামলার কথা উল্লেখ করে বলছিলেন, “আমাদের আর কখনও সময় নষ্ট করার সময় নেই, অবশ্যই ডানপন্থী সন্ত্রাসবাদকে ঠেকাতে হবে”।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার, বইমেলা ব্যবসায়ীদের জন্যে ও লেখক দর্শকদের জন্য এটির দরজা উন্মুক্ত থাকবে। বইমেলার খবরে বলা হয়েছে, আগের বছরের তুলনায় প্রদর্শনীর সংখ্যা বেড়েছে সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে আট হাজার পাবলিশার্স, আর এবার প্রায় ৩ লাখ দর্শক আশা করছে বইমেলা কর্তৃপক্ষ। প্রত্যাশিত শনি ও রোববার বইমেলা আগ্রহী পাঠকদের জন্যে উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও এই পাঁচদিনে প্রায় ১২ হাজার দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা উপস্থিত থাকবেন।
বুধবার ‘জার্মান বুকার প্রাইজ’ প্রাপ্তির (ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলার সর্বোচ্চ পুরস্কার) নাম ঘোষণা হলো। পুরস্কারটি দেওয়া হলো একজন বসনিয়া হার্সে গর্বিনার লেখক ছাশা স্টানিসিক এর “অরিজিন” উপন্যাসের জন্যে। তিনি বসনিয়া থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন। এরই মধ্যে গোটা তিনেক উপন্যাস লিখেছেন। অরিজিন বইটি তার নিজের জীবনের ফিকশন গল্প। বহু-জাতিগত রাষ্ট্র হিসাবে ইউগোস্লাভিয়া সম্পর্কে ভাইগ্রাডে তার পরিবার সম্পর্কে বলেছেন। তবে তিনি গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা এবং জার্মানিতে তার আগমনের স্মৃতি সম্পর্কেও বলেছেন।
গুগলের বইয়ের ডিজিটাইজেশন নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল তিনদিন আগেই বলেছেন, বার্লিনে “লেখকদের জিজ্ঞাসা না করেই বই স্ক্যান করার দণ্ডনীয় অপরাধ এছাড়াও সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টের সমালোচনা করেছেন তিনি।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন প্রকাশক এসেছেন বাংলা বই নিয়ে। তাই তারাও হয়তো শনি ও রোববারের অপেক্ষায় থাকবেন, যখন কিছু বাঙালি পাঠকদের কাছে বই বিক্রির কাজটিও সারতে পারবেন। সাধারণত বাঙালিরাও শেষের দিনে বই মেলায় যান বই কিনতে, যেনো প্রকাশকরা আবার তাদের বইগুলো দেশে ফিরে না নিয়ে যেতে হয়।
তবে এই ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাকে কোনোক্রমেই একুশে বইমেলা বা কোলকাতা বইমেলার উচ্ছলতা আর আনন্দের সাথে তুলনা করা যাবেনা। এই বিশাল মেলা যথার্থই এক ‘বই প্রেজেন্টেশনের মেলা’।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে, বইমেলা নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই মনে পড়ে, বাংলাদেশের প্রকাশকরা হলো ‘দৈত্য-ব্যবসায়ী’ লেখকের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে বই ছাপিয়ে বিক্রি করে আবার লাভ করে, সেখানে সাহিত্যচর্চা করে খুব কম লেখকই আছে যারা সংসার চালায়। অথচ পাশ্চাত্যের লেখকরা বিলিয়ন ডলার কামাই করে বই লিখে। যেমন- হ্যারি পটার লেখক যে কে রোলিংগ এর আয় ১.৩ বিলিয়ন ডলার, আর ফ্রান্স মনোবিজ্ঞানী এলিজাবেথ ব্যাডিন্টার ফিকশন বই লিখে ১.২ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। এমনি আরও অনেক প্রায় ৫০ জনের নাম পাবেন যারা বই লিখে মিলিওনিয়ার হয়েছেন। এক ভারতীয় গুরু দীপক চোপড়া ও স্পিরিচুয়ালিটির গল্প লিখে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। এমনকি ২৯ বছরের স্টেফানী মায়ার আয় করেছেন ৮০ মিলিয়ন।
সেদিক থেকে বাংলাদেশি লেখকরা অন্য কোনো কাজ করে সংসার চালায় আর পার্টটাইম লেখক হয়। সেখানে সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা কীভাবে হবে?