নেদারল্যান্ডসে ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্য তুলে ধরে দেশটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার্থে দেশটিতে আসা নতুন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।
স্থানীয় সুশীল সমাজের সংগঠন ব্রেইন চেইনের সহায়তায় দেশটির বাংলাদেশ দূতাবাস দ্য হেগে গতকাল রোববার (৬ অক্টোবর) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, ‘ব্রেইন চেইন’ অনাবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে স্থানীয় বাংলাদেশিদের মেলবন্ধনে নিয়োজিত একটি সংগঠন।
অনুষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল দেশটিতে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা; যেখানে তাঁরা তাঁদের চিন্তাচেতনা, সমস্যাসমূহ নিজেদের মধ্যে ও দূতাবাসের সঙ্গে বিনিময় করতে পারেন। একই সঙ্গে অ্যালামনাই ও অন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা বা পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ পেতে পারেন।
তবে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কীভাবে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহযোগী হওয়া যায়। দেশটির সর্বোত্তম শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ বাংলাদেশে যথাযথভাবে প্রয়োগের নিমিত্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ধরনের নেটওয়ার্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রটারড্যামের ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়, মাস্ট্রিট স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট, ওয়াখেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়, দ্য হেগ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, রটারড্যাম ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, হান ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস, টোয়েন্টি বিশ্ববিদ্যালয়, আইন্দোভেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ (আইএসএস), আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়, ডেলফট প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ফন্টিস ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেসে অধ্যয়নরত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রতি আলোকপাত করে শিক্ষার্থীদের তাঁদের উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
নেদারল্যান্ডসের উন্নয়নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশও কীভাবে উন্নতি লাভ করতে পারে, সে লক্ষ্যে রাষ্ট্রদূত শিক্ষার্থী ও শিক্ষানুরাগীদের তাঁদের মতামত ও পরামর্শ দেওয়ার আহ্বান জানান।
শেখ মুহম্মদ বেলাল বলেন, আধুনিক সমাজব্যবস্থা বিশাল আকারের উৎপাদনমুখী জ্ঞানকে ধারণ করতে পারে। কেননা, এই জ্ঞানের প্রতিটি অংশ সে সমাজ তার সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু এর সদ্ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই ব্যক্তিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই জ্ঞানকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বহুমাত্রিকতা প্রদান করা সম্ভব।
রাষ্ট্রদূত দেশটিতে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায়, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে দূতাবাস যেসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাও তুলে ধরেন। দেশটির সরকার, বিশেষ করে দেশটির ফেলোশিপ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নিত্যনতুন উদ্যোগের মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতার এই সম্পর্ক অটল থাকবে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি লুইজ হুবেন্স তাঁর বক্তব্যে আশ্বস্ত করেন, তাঁদের সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেদারল্যান্ডস সফর ও দেশটির রানি ম্যাক্সিমার বাংলাদেশ সফর কীভাবে দুই দেশের সম্পর্ককে বহুমাত্রিক পর্যায়ে উন্নীত করেছে, সে বিষয়েও তিনি আলোচনা করেন।
আলোচনা পর্বে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে দেশটির ফেলোশিপ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে তাঁদের সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী যাতে দেশটিতে পড়ালেখায় উৎসাহিত হন, সে লক্ষ্যে ফেলোশিপ কর্তৃপক্ষের প্রচারণা আরও জোরদার করার আহ্বান জানান। তাঁরা দেশটির চাকরিসংক্রান্ত কোচিং, পেশাগত পরিকল্পনা ও ইন্টার্নশিপ সহায়তার বিষয়ে পর্যাপ্ত সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
দেশটির শিক্ষা, সমাজ ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য এসব বিষয়ে সেমিনারে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ ও টিপস দেওয়া হয়। বাংলাদেশি অ্যালামনাই ও তরুণ পেশাজীবীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ, ইন্টার্নশিপ ও পেশাগত পরিকল্পনার জন্য তাঁদের পরামর্শ প্রত্যাশা করেন। তাঁরা বাংলাদেশের উন্নয়নে তাঁদের অর্জিত জ্ঞান কীভাবে প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়েও আলোকপাত করেন।
সমাপনী বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত বেলাল পানি, কৃষি, উদ্ভাবন ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের প্রতি আলোকপাত করে শিক্ষার্থীদের একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দূতাবাসের কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি আশ্বস্ত করেন, সেমিনারে উঠে আসা প্রস্তাবসমূহ দূতাবাস যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তাঁদের চিন্তাভাবনা ও পরামর্শ দূতাবাসকে অবহিত রাখার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখারও অনুরোধ জানান।
রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী ড. দিলরুবা নাসরিন সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ ধরনের আয়োজন আরও করা হবে। এর মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসে শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান, উদ্ভাবনাসমূহ বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় উন্নয়নে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে।
সবশেষে স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যান্ড দল ‘ত্রিমাত্রিক’-এর অংশগ্রহণে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রয়্যাল ডাচ শেলে কর্মরত সিরাজ কবির অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
দূতাবাসে কর্মরত সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, শিক্ষাবিদ ও প্রবাসী উদীয়মান পেশাজীবীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ছিলেন নতুন শিক্ষার্থীরা, যাঁরা ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি